
ভারতবিরোধী মন্তব্যে পরিচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও ডানপন্থী রাজনৈতিক কর্মী লরা লুমার সম্প্রতি বাংলাদেশে সংঘটিত এক নৃশংস গণপিটুনির ঘটনাকে সামনে এনে যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামপন্থী চরমপন্থা নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। ঘটনাটি ছিল ২৬ বছর বয়সী হিন্দু বাংলাদেশি পোশাককর্মী দীপু চন্দ্র দাসকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে একদল উগ্র জনতার পিটিয়ে হত্যা করা।
এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ করা এক পোস্টে লুমার দীপু দাসের মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুলে ধরে দাবি করেন, ইসলামপন্থী মতাদর্শকে মূলধারায় স্বাভাবিক করার চেষ্টা বিপজ্জনক এবং এর বিরুদ্ধে এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে আমেরিকাতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি মার্কিন আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে বলেন, ইসলামি চরমপন্থা ও তার অর্থায়নের উৎস নিয়ে স্পষ্টভাবে কথা বলা জরুরি। পাশাপাশি তিনি তাঁর অনুসারীদের দীপু চন্দ্র দাসের নাম স্মরণে রাখার আহ্বান জানান।
লুমার আরও অভিযোগ করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু প্রভাবশালী গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে উগ্রবাদী ইসলামপন্থী বর্ণনাকে হালকা করে দেখাচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিক টাকার কার্লসনের নাম উল্লেখ করে কটাক্ষ করেন এবং দাবি করেন, এ ধরনের অবস্থান চরমপন্থাকে পরোক্ষভাবে উৎসাহ দিচ্ছে।
নিজেকে ‘মাগা’ (MAGA) আন্দোলনের কণ্ঠস্বর হিসেবে তুলে ধরা লরা লুমার এর আগেও একাধিকবার ভারতবিরোধী ও অভিবাসনবিরোধী মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন। ২০২৪ সালে এক পোস্টে তিনি তৎকালীন হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়ের এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ঘিরে আপত্তিকর ও কটূক্তিমূলক মন্তব্য করেছিলেন, যা তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়।
বাংলাদেশে দীপু চন্দ্র দাসের হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে লুমার দাবি করেন, দক্ষিণ এশিয়ায় যে ধরনের সাম্প্রদায়িক উগ্রতা দেখা যাচ্ছে, তা যদি রোখা না যায়, তবে তার প্রভাব পশ্চিমা দেশগুলিতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি বলেন, 'এখনই সিদ্ধান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আমেরিকাও নিরাপদ থাকবে না।'
দীপু চন্দ্র দাস ছিলেন বাংলাদেশের একটি পোশাক কারখানার কর্মী এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তাঁকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনাকে ঘিরে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সমালোচকদের অভিযোগ, তৎকালীন প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের খবর যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি।
এই প্রেক্ষাপটে লরা লুমারের মন্তব্য নতুন করে আন্তর্জাতিক স্তরে বিতর্ক উসকে দিয়েছে, একদিকে ধর্মীয় উগ্রতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন, অন্যদিকে সেই ঘটনাকে ঘিরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিযোগ।