মিশরর মমিকে ঘিরে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের তথ্য উঠে আসে। মমির পাশ থেকে সোনার গয়না উদ্ধার খুবই সাধারণ একটি বিষয়। তবে এবার মমি থেকে সোনার জিভ পেলেন পুরাতত্ত্ববিদরা। অর্থাৎ মানুষের জিভ যেখানে থাকে সেখানে সোনার পাতা পেয়েছেন তাঁরা। আর এমনটা শুধু একটি নয়, একাধিক মমিতে পাওয়া গিয়েছে। এবার এই নিয়ে নতুন করে গবেষণা শুরু করেছেন পুরাতত্ত্ববিদরা।
এই আবিষ্কারটি সেন্ট্রাল নীল ডেল্টার কুয়েসনা (Quweisna) নেক্রোপলিসে করা হয়েছে। এই সাইটটি ১৯৮৯ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল। সাইটটি টলেমিক (Ptolemaic) এবং রোমান যুগে (Roman periods) দখল করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়, যা প্রায় ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৬৪০ সিই পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।
এই সাইটেরই অন্য অংশে খনন করার সময়, সোনার জিভযুক্ত মমির সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে পুঁতে রাখা দেহগুলির সঙ্গে বিভিন্ন আকারের সোনা পাওয়া গেছে। সোনার স্কারাব (স্কার্ফের মতো কাপড়) এবং সোনার পদ্মও কয়েকটি মমির সঙ্গে সমাহিত করা হয়েছিল। তবে এই সবগুলির মধ্যে সোনার জিভ গবেষকদের কাছে রীতিমতো ধোঁয়াশার সৃষ্টি করেছে।
এর আগেও প্রত্নতাত্ত্বিকেরা সোনার জিভ খুঁজে পেয়েছেন। ২০২১-এর গোড়ার দিকে, মিশরে একটি ২,০০০ বছরের পুরানো সাইট খনন করা হয়েছিল। সেখানে গবেষকরা একটি মাথার খুলি খুঁজে পেয়েছিলেন। সেই খুলির মুখেও জিভের মতো আকৃতির একটি সোনার পাতা পাওয়া যায়। এর পর, ২০২১ সালের শেষে, এক পুরুষ, এক মহিলা এবং এক শিশুর মমি পাওয়া যায়। সেগুলিরও জিভ সোনার ছিল। সেই মমিগুলি ছিল ২,৫০০ বছরেরও বেশি পুরানো।
আবিষ্কারের সময়, মিশরের পর্যটন ও পুরাকীর্তিমন্ত্রক বলেছিল, মৃত ব্যক্তিরা যাতে পরকালের দিকনির্দেশনা পেতে পারেন তা নিশ্চিত করার জন্যই হয়ত সোনার জিভ মমির উপর স্থাপন করা হত।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পৃথিবীর অভ্যন্তরে অন্য জগতের দেবতা ওসিরিসের আশীর্বাদ পেতে সোনার জিভ প্রয়োজন বলে মনে করা হয়ে থাকতে পারে। মনে করা হয় যে, ওসিরিস ছিলেন মৃতদের দেবতা। প্রাচীন মিশরে হেডিসকে 'দ্য সাইলেন্ট ল্যান্ড' বলা হতো। একই সময়ে ওসিরিসকে বলা হত 'লর্ড অফ সাইলেন্স'। ওসিরিস গোলমাল পছন্দ করতেন না। এই কারণেই প্রাচীন মিশরে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় নীরবতা বজায় রাখা হত। মমিগুলি যাতে কোনও শব্দ ছাড়াই ওসিরিসের সঙ্গে কথা বলতে পারে, সেই কারণেই হয়ত সোনার জিভ দেওয়া হত।
কিন্তু যদি তাই হয়, তাহলে কেন মাত্র কয়েকটি মমিতেই সোনার জিভ পাওয়া গেল? প্রাচীন মিশরে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য সোনার অলঙ্কার তৈরির প্রথা ছিল। বলা হয়, চকচকে সোনা দেবতাদের পছন্দ ছিল, বিশেষ করে সূর্য দেবতা রা যিনি ছিলেন অনন্তকালের প্রতীক।
রা কে সমস্ত প্রাচীন মিশরীয় দেবতাদের রাজা হিসাবে ধরা হত। তিনি ছিলেন মহাবিশ্বের স্রষ্টা এবং ওসিরিসের সঙ্গেও তাঁর সখ্যতা ছিল। সূর্য যেহেতু দিনের প্রতীক, তাই সোনার জিভকে হয়ত আলোর রেখা হিসেবে ধরা হত। যদিও এই সবকিছুই গবেষকদের অনুমানমাত্র।
আরও পড়ুন - ছবিতে কোনও বল দেখতে পাচ্ছেন? পেলে আপনার দৃষ্টি তুখোড়