নেপালের পরিস্থিতি অনেকটা বাংলাদেশের মতোই রূপ নিচ্ছে। সূত্রের খবর, একের পর এক মন্ত্রীর ইস্তফার জেরে কোণঠাসা প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির গদি টলমল। যার নির্যাস, চিকিত্সার নাম করে দুবাই পালানোর তোড়জোড করছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বিশেষ তৈরি। একেবারে বাংলাদেশের ধাঁচেই। ঠিক যে ভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছিলেন, ঠিক একই ভাবেই নেপাল ছাড়ার তোড়জোড় করছেন কেপি শর্মা ওলি। অন্যদিকে, নেপালের পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক পশ্চিমবঙ্গও। যেহেতু দার্জিলিং সহ উত্তরবঙ্গের একটি বড় অংশ নেপাল সীমান্তে, তাই উত্তরবঙ্গের পুলিশকর্তাদের অ্যালার্ট হওয়ার নির্দেশ নবান্নের তরফে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। নেপালের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, নেপালে বসবাসকারী ভারতীয়দের সজাগ থাকার পরামর্শ দিল কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রক।
দেশ ছেড়ে পালানোর তোড়জোড় প্রধানমন্ত্রীর
জানা যাচ্ছে, কেপি ওলি শর্মা যে কোনও মুহূর্তে দেশ ছেড়ে চলে যাবেন। প্রাইভেট বিমানে চলে যেতে পারেন দুবাইয়ে। অন্যদিকে Gen Z বিক্ষোভকারীরা নেপালের একের পর এক মন্ত্রীর বাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। গোটা নেপাল কার্ফু চলছে। পুলিশ গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। মৃত্যুর সংখ্যা ইতিমধ্যেই ২০ জন পেরিয়ে গিয়েছে। আরও মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। নেপাল আজ কার্যত দাউ দাউ করে জ্বলছে। রাজধানী কাঠমাণ্ডু থেকে শুরু করে ললিতপুর, কীর্তিপুর, প্রায় সব শহরেই ছড়িয়ে পড়েছে Gen Z বিক্ষোভ। ভারত সরকারের তরফে কূটনৈতিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নেপালের ঘটনাপ্রবাহ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, এবং সব পক্ষকে সংযম বজায় রেখে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের ডাক দেওয়া হয়েছে।
রাস্তায় একের পর এক শাসকদলের নেতা বিক্ষোভকারীদের তীব্র আক্রমণের মুখে পড়ছেন। নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখকের বাড়ি ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা নেপালি কংগ্রেসের সভাপতি শের বাহাদুর দেউবার বাড়ির সামনে বিশাল বিক্ষোভ জমায়েত হয়। নিরাপত্তার কারণে তাঁর বাড়িতে নির্ধারিত বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী রঘুবীর মহাসেঠের বাড়িতেও পাথর ছোড়া হয়েছে। অন্যদিকে, কীর্তিপুর পুরসভার ভবনে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। সবচেয়ে নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে ললিতপুরে, যেখানে বিক্ষোভকারীরা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা সিপিএন (মাওবাদী সেন্টার)-এর চেয়ারম্যান পুষ্পকমল দাহাল ‘প্রচণ্ড’-এর বাসভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়।
উত্তরবঙ্গের পুলিশকে সতর্ক করল নবান্ন
সোমবার রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজিব কুমার উত্তরবঙ্গের আইজি, দার্জিলিং জেলার এসপি, শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের সিপিকে বিশেষ নির্দেশ দিলেন। নেপাল সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে নজরদারি নির্দেশ। সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নজরদারি চালানোর নির্দেশ। এমনটাই জানা গিয়েছে নবান্ন সূত্রে।
একের পর এক মন্ত্রীর ইস্তফা
বিক্ষোভের জেরে নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন। এর ফলে শাসকদলের ভিত আরও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। সূত্রের খবর, আরও কয়েকজন নেতা পদত্যাগের চিন্তাভাবনা করছেন। এই সঙ্কটকালীন সময়ে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি নিজে ‘চিকিৎসার নাম করে’ দুবাই যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে খবর। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, তিনি উপপ্রধানমন্ত্রীকে কার্যনির্বাহী দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছেন। এমনকী, ব্যক্তিগত বিমান সংস্থা হিমালয়া এয়ারলাইন্সকে স্ট্যান্ডবাই অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। ফলে দেশে যখন সরকার কার্যত চাপে, তখন প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে তীব্র প্রশ্ন উঠছে।
কেন বিক্ষোভ?
এই বিক্ষোভের মূলে রয়েছে তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের বড় অংশের দাবি, শাসকদলের দুর্নীতি, বেকারত্ব এবং দমননীতির বিরুদ্ধে তারা রাস্তায় নেমেছে। সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করে দিলেও তরুণদের রাগ থামানো যায়নি। উল্টে আন্দোলন আরও তীব্র হয়েছে।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, নেপালের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে ভারতের। ভারতীয় নাগরিকদের সাবধান থাকতে বলা হয়েছে এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মানার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।