Nepal Protests 2025: দুবাই যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। সরকারিভাবে বলা হচ্ছে চিকিৎসার জন্য। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, গণআন্দোলনের মুখে সরকার টলমল। একের পর এক মন্ত্রী পদত্যাগ করছেন। সরকারি বাসভবনে ভাঙচুর চলছে। বেগতিক বুঝেই সম্ভবত দেশ ছেড়ে পালাতে চাইছেন কেপি ওলি। এ যেন গত বছরের বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি। সেখানেও ছাত্র যুবকদের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। পরে তা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
আন্দোলনের সূত্রপাত
নেপালে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর সরকারের আকস্মিক নিষেধাজ্ঞায় আন্দোলনের সূত্রপাত। ২৬টি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে রাস্তায় নামে যুবসমাজ। এর সঙ্গে যুক্ত হয় সরকারের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের অভিযোগ। দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভ যেন এই স্ফুলিঙ্গের অপেক্ষাতেই ছিল।
বাংলাদেশে আন্দোলনের জন্ম হয়েছিল কর্মসংস্থানের সংকট, মুদ্রাস্ফীতি এবং রাজনৈতিক দমননীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকে। পরে সংরক্ষণ নীতিকে কেন্দ্র করে আন্দোলন তীব্র রূপ নেয়। দুই দেশেই দেখা গিয়েছে, অসন্তোষ জমে ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। তুলনামূলকভাবে কোনও এক ছোট ঘটনাই স্ফুলিঙ্গের কাজ করেছে।
আন্দোলনের মুখ সেই যুবসমাজ
নেপালের আন্দোলনকে বলা হচ্ছে 'Gen Z Revolution'। কারণ সোশ্যাল মিডিয়া-সচেতন তরুণ প্রজন্মই এই আন্দোলনের নেতৃত্বে। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, যুবক-যুবতীরা পতাকা হাতে রাস্তায় নেমেছেন। বাংলাদেশেও ছাত্র-যুবকরাই আন্দোলনের প্রধান চালিকা শক্তি ছিলেন। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলিও পরোক্ষভাবে আন্দোলনের গতি বাড়িয়েছিল। নেপালে আপাতত রাজনৈতিক দলগুলি সরাসরি প্রভাব নেই।
গুলি দিয়ে কন্ঠরোধের চেষ্টা?
নেপালে সরকারের প্রতিক্রিয়া বেশ কঠোর। প্রধানমন্ত্রী অলি প্রকাশ্যে বলেছিলেন, 'Gen Z troublemakers'-দের কাছে তিনি মাথা নোয়াবেন না। প্রধানমন্ত্রীত্ব না থাকলেও নিষেধাজ্ঞা তুলবেন না বলে জেদও ধরেন। গুলি চালিয়ে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা হয়। ২০ জনের মৃত্যু ঘটেছে। মঙ্গলবার সকালেও ২ আন্দোলনকারী প্রাণ হারিয়েছেন। পরে চাপের মুখে সোশ্যাল মিডিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে সরকার।
বাংলাদেশেও গত বছরের আন্দোলনে পুলিশি দমননীতি প্রবলভাবে চোখে পড়েছিল। বহু জায়গায় গুলি, কাঁদানে গ্যাস ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছিল।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
নেপালের এই আন্দোলন আন্তর্জাতিক স্তরে চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়ে। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। রাষ্ট্র সংঘ জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারকে সম্মান জানাতে হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও পশ্চিমী দেশগুলির চাপ ছিল। গণতান্ত্রিক অধিকার, স্বচ্ছ নির্বাচন ও মানবাধিকারের পক্ষে একাধিকবার বক্তব্য রেখেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলি। দুই ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, প্রতিবেশী ও বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে।
বাংলাদেশে তো সরকারের পতন হয়েছিল...
বাংলাদেশ আন্দোলনের ক্লাইম্যাক্স হয়েছিল শেখ হাসিনার হেলিকপ্টারে করে দেশ ছাড়ার মাধ্যমে। ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখনও এদেশেই আছেন। নেপালে প্রধানমন্ত্রী ওলি দুবাই যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছেন। স্বাস্থ্য সমস্যা বলে উল্লেখ করলেও, বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন পর্যবেক্ষকরা। নেপালের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
নেপালের পরিস্থিতি কোনদিকে এগোবে? সরকার পড়ে যাবে? সেই বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত। দুই দেশেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্রমেই দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক পরিবর্তনের মুখ হয়ে উঠছে নতুন প্রজন্ম।