মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার একটি নির্দেশে স্বাক্ষর করেছেন। সেখানে মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ এবং চিন থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি বার্ষিক বাণিজ্যে বড়সড় প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে নতুন করে 'বাণিজ্য যুদ্ধ' শুরু হতে পারে।
ট্রাম্প আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (International Emergency Economic Powers Act) অনুসারে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। এর ফলে প্রশাসন সংকট মোকাবিলার জন্য বাড়তি ক্ষমতা লাভ করেছে। সেই নীতি অনুযায়ী কোনও দেশ সংকটের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বাড়তি চড়া শুল্ক চাপাতে পারে। নতুন শুল্ক সংগ্রহ শুরু হবে মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে গিয়েই ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে আদতে মার্কিন নাগরিকদেরই পকেটে টান পড়তে পারে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। ট্রাম্পের দাবি, এই শুল্ক ব্যবস্থার ফলে অবৈধ অভিবাসন ও ফেন্টানিল পাচার বন্ধ করা যাবে। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন বৃদ্ধির প্রবণতা বাড়বে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, কানাডা থেকে আগত পণ্যের উপর মাত্র ১০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে, কিন্তু মেক্সিকোরপণ্যের উপর ২৫ শতাংশ পূর্ণ শুল্ক বসানো হয়েছে। এছাড়া, কানাডা থেকে ৮০০ ডলারের কম মূল্যের ক্ষুদ্র রফতানিতে এতদিন যে শুল্ক ছাড় ছিল, সেটাও বাতিল করা হয়েছে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পর প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ। কানাডা ও মেক্সিকো উভয়েই পাল্টা শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছে, চিনও জানিয়েছে যে তারাও তাদের বাণিজ্যের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, 'আমরা এই শুল্ক চাইনি, তবে কানাডা প্রস্তুত। আমি মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট শিনবাউমের সঙ্গে আলোচনা করব এবং আজ সন্ধ্যায় কানাডিয়ানদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখব।'
সূত্রের খবর অনুযায়ী, কানাডা শীঘ্রই মার্কিন পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে পারে।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শিনবাউম জানিয়েছেন, তিনি ঠান্ডা মাথায় ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করবেন। সীমান্ত নীতি নিয়ে আলোচনার পথ খোলা আছে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে, চিনের প্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে কৌশলী পন্থা নিচ্ছে। ওয়াশিংটনে চিনের দূতাবাসের এক মুখপাত্র বলেছেন, 'বাণিজ্য যুদ্ধে কোনও পক্ষেরই জয় হয় না। এটা দু'দেশ এবং গোটা বিশ্বের স্বার্থের পরিপন্থী।'
ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। মেক্সিকো ও কানাডা ইতিমধ্যেই পাল্টা শুল্ক বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, এবং চিনও এমন কিছুই করবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই পরিস্থিতি কতদূর গড়ায় এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব কতটা পড়ে।