চিকিৎসাশাস্ত্রে অনবদ্য অবদান রাখায় যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রুভকুন। নোবেল প্রাইজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাইক্রো আরএনএ আবিস্কার এবং পোস্ট ট্রান্সক্রিপশন জিন নিয়ন্ত্রণ-এ অবদান রাখায় তাদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তাঁদের এই যুগান্তকারী আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানে জিন নিয়ন্ত্রণের নতুন পথ উন্মোচন করেছে, যা ভবিষ্যতে নানা রোগের চিকিৎসায় সহায়ক হতে পারে।
মাইক্রোআরএনএ এবং তার গুরুত্ব: মাইক্রোআরএনএ হলো ক্ষুদ্র আরএনএ অণু যা বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়া, বিশেষ করে জিন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রুভকুনের গবেষণার মাধ্যমে উদ্ঘাটিত হয় যে, মাইক্রোআরএনএ পোস্ট-ট্রান্সক্রিপশনাল জিন নিয়ন্ত্রণ করে, যা কোষের কার্যকারিতা এবং বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। তাদের এই আবিষ্কার ক্যান্সার, কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং স্নায়বিক রোগসহ আরও অনেক রোগের চিকিৎসায় নতুন ধরনের থেরাপির সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
নোবেল পুরস্কারের তাৎপর্য: নোবেল পুরস্কার মানবজাতির কল্যাণে অসামান্য অবদান রাখা বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি অন্যতম সম্মানজনক পুরস্কার। করোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের ৫০ জন অধ্যাপকের সমন্বয়ে গঠিত নোবেল অ্যাসেম্বলি প্রতি বছর এই পুরস্কার প্রদান করে। আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছা অনুযায়ী, ১৯০১ সাল থেকে শুরু হওয়া এই পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে সেইসব ব্যক্তিদের, যারা তাদের গবেষণা ও আবিষ্কার দ্বারা মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা প্রদান করেছেন।
২০২৩ সালের নোবেল পুরস্কার এবং এর প্রেক্ষাপট: ২০২৩ সালে ফিজিওলজি বা মেডিসিনে নোবেল পুরস্কার ক্যাটালিন কারিকো এবং ড্রিউ ওয়েইসম্যানকে প্রদান করা হয়েছিল তাদের নিউক্লিওসাইড বেস পরিবর্তন সংক্রান্ত আবিষ্কারের জন্য, যা কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে কার্যকর mRNA ভ্যাকসিনের বিকাশে সহায়ক হয়েছিল। এই আবিষ্কার বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অভূতপূর্ব প্রভাব ফেলেছিল এবং বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছিল।
নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির গুরুত্ব: প্রতি বছর অক্টোবর মাসে নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা একটি অত্যন্ত প্রতীক্ষিত ঘটনা। বিজ্ঞান, চিকিৎসা এবং মানব কল্যাণের ক্ষেত্রে যেসব গবেষকরা অসাধারণ অবদান রাখেন, তাদের স্বীকৃতি প্রদান করে এই পুরস্কার। ২০২৪ সালে ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রুভকুনের মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বিশাল পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি শুধু ভবিষ্যতের চিকিৎসা গবেষণার জন্য নয়, বরং মানবজাতির রোগ প্রতিরোধ এবং রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
এভাবে, ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রুভকুনের গবেষণা মানবকল্যাণে একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন হিসেবে বিবেচিত হবে, যা ভবিষ্যতে আরও অনেক নতুন আবিষ্কারের পথ প্রশস্ত করবে।