'অপারেশন সিঁদুর'-এ ভারতের প্রত্যাঘাতে পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। খতম ১০০-র বেশি জঙ্গি। নিহতদের মধ্যে ছিল পুলওয়ামা হামলার সঙ্গে যুক্ত ইউসুফ আজহার, আব্দুল মালিক রউফ ও মুদাসসির আহমদের মতো কুখ্যাত জঙ্গিরা। পাকিস্তানের জঙ্গি শিবির ধাক্কা খাওয়ার পর শেষ পর্যন্ত তারা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
রবিবার রাতের দিকে পাকিস্তানের নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্তারা এক যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে তাঁরা নিজ মুখেই স্বীকার করেন যে, ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষে তাঁদের একটি বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও পাকিস্তান জানায়নি, কোন মডেলের বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা পাইলটের নাম কী। কিন্তু কোনও ভারতীয় পাইলট কি পাকিস্তানের হেফাজতে রয়েছেন? সেই প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন তিনি।
পিটিআই সূত্রে খবর, পাকিস্তান সেনার মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরি জানান, এই সাংবাদিক সম্মেলনে 'অপারেশন বুনইয়ান-উল-মার্সুস'-এর প্রসেস ও ফল নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সাংবাদিক বৈঠকে লেফটেন্যান্ট আহমেদ শরিফ চৌধুরি বলেন, ‘পাকিস্তানের একটি বিমান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বিষয়ে আমরা বিশদ তথ্য দিতে পারব না।’
কোনও ভারতীয় পাইলট কি পাকিস্তানের হেফাজতে রয়েছেন?
সাংবাদিক বৈঠকে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, কোনও ভারতীয় পাইলট কি পাকিস্তানের হেফাজতে রয়েছেন? উত্তরে তিনি জানান, 'কোনও ভারতীয় পাইলট পাকিস্তানের হেফাজতে নেই। এ নিয়ে যেসব খবর ছড়াচ্ছে, সেগুলো সম্পূর্ণ গুজব ও সোশ্যাল মিডিয়ার ভুয়ো তথ্য।'
পাক সেনার মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরি আরও দাবি করেন, ‘ন্যায়সম্মত, ভারসাম্য রেখে ও সংযত ভাবে সামরিক কার্যকলাপ চালানো হয়েছে’।
পাকিস্তানের দাবি – ২৬টি ভারতীয় সেনাঘাঁটিতে হামলা
লেফটেন্যান্ট চৌধুরি দাবি করেন, ভারতের অভিযানের পাল্টা হিসেবে পাকিস্তান ২৬টি ভারতীয় সেনাঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। যার মধ্যে ছিল বায়ুসেনা ও বিমান ঘাঁটিও।
পাক সেনার দাবিমতো, ভারতীয় ভূখণ্ডের সুরাটগড়, সীরসা, ভুজ, নালিয়া, আধানপুর, বাঠিন্ডা, বরনালা, হালওয়াড়া, আওয়ান্তিপুরা, শ্রীনগর, জম্মু, উদমপুর, মামুন, অম্বালা ও পাঠানকোটের সেনাঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। পাশাপাশি বেয়াস ও নগরোটায় থাকা ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের গুদামেও আঘাত হেনেছে তারা।
যদিও এর আগেই ভারতীয় সেনা বিভিন্ন ছবির মাধ্যমে বায়ুসেনা ঘাঁটিগুলির অক্ষত-স্বাভাবিক অবস্থার প্রমাণ দিয়েছে।
অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তানে ধ্বংসযজ্ঞ
ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ কার্যত পাকিস্তানের মাটি কাঁপিয়ে দিয়েছে। লস্কর-ই-তৈবা ও জইশ-ই-মোহাম্মদের একাধিক শীর্ষ জঙ্গি খতম হয়েছে। তাদের মধ্যে খালিদ ওরফে আব্বু আকাশা, মুদাসসির খাদিয়ান, মহম্মদ রসম খান ও হাফিজ মহম্মদ জামিলের মতো নাম রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল, এই জঙ্গিদের শেষকৃত্যে পাকিস্তানের একাধিক সেনা অফিসারদের সশ্রদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। সেই ছবিগুলি ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের মনোভাব নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
১০ মে বিকেল ৫টা থেকে সংঘর্ষ বিরতির জন্য পাকিস্তানের ডিজিজিএমও অনুরোধ জানায়। ভারতও তাতে সম্মত হয়। তবে ভারত এটাও জানিয়ে দিয়েছে ‘যে কোনও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকেই যুদ্ধের প্ররোচনা বলে ধরা হবে’ এবং সিন্ধু জলচুক্তিও স্থগিত থাকবে।