সৌদি আরব এবং পাকিস্তানের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি কেবল ইসলামাবাদকেই শক্তিশালী করবে তা নয়, বরং নয়াদিল্লির নিরাপত্তা সংক্রান্ত নানা হিসেব-নিকেশও এক্ষেত্রে উল্টে যেতে পারে। এমনটাই মনে করছেন ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক ইয়ান ব্রেমার। ইন্ডিয়া টুডে টিভি-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ইউরেশিয়া গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ইয়ান ব্রেমার জোর দিয়ে বলেন, 'এটি ভারতের জন্য অনেক বদল নিয়ে আসবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। বিশেষ করে সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই চুক্তি তাৎপর্যপূর্ণ, যার মধ্যে রয়েছে ভারতের অপারেশন সিঁদুর অভিযানও।'
ইয়ান ব্রেমার বলেন, 'খুব সম্ভবত আমরা আরও একটি সামরিক সংঘর্ষ দেখতে চলেছি। আর যদি তা হয় এবং সৌদি আরব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে, তবে তা ভারতের জন্যও ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।'
রিয়াদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সফরের সময়ে স্বাক্ষরিত কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিতে বলা হয়েছে, যে কোনও এক দেশের উপর আক্রমণকে উভয়ের উপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হবে। রিপোর্টে আরও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, এই চুক্তিতে পাকিস্তানের পরমাণু ক্ষমতাও অন্তর্ভূক্ত। যা জরুরি অবস্থায় সৌদি আরবের প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
ইয়ান ব্রেমারের মতে, 'এই চুক্তি রিয়াদ ও ইসলামাবাদের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ককে দৃঢ় করল এবং পাকিস্তানের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়াল। ওদের প্রধান বন্ধু এখনও চিন। এটা খুব শীঘ্রই বদলানোর সম্ভাবনা নেই। সেখান থেকেই তারা অধিকাংশ সামরিক সহায়তা এবং গোয়েন্দা তথ্য পাচ্ছে।' তবে পাকিস্তান নতুন সম্পর্কও গড়ে তুলছে বলে তিন উল্লেখ করেন। ট্রাম্পের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক আরও ভাল হয়েছে, ক্রিপ্টো বিনিয়োগের মাধ্যমে, এমনটাই মনে করেন ইয়ান ব্রেমার। এটি পাকিস্তানকে আত্মবিশ্বাসী এবং শক্তিশালী অনুভব করিয়েছেন বলে মত তাঁর।
ইয়ান ব্রেমার আরও বলেন, 'পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচিতে সৌদিদের সহায়তা অবশ্য নতুন কিছু নয়। এটি একপ্রকার ওপেন সিক্রেট ছিল, যে কোনও জরুরি অবস্থায় সৌদি আরব পাকরিস্তানের পরমাণু কর্মসূচিকে নিজেদের হিসেবে বিবেচনা করবে। এটি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার অনেক আগেই আলোচনায় ছিল।'
এই চুক্তি এমন একটি সময়ে হল যখন ইজরায়েলের কাতারে হামলা চলছিল। ইয়ান ব্রেমার বলেন, 'ওয়াশিংটনের নীরব প্রতিক্রিয়া সৌদি আরবকে অসন্তুষ্ট করেছিল। আমেরিকা এই হামলা থামাতে কিছুই করেনি এবং পরে খুব সামান্যই প্রতিবাদ করেছে। ইজরায়েলের কোনও শাস্তি হয়নি এবং সৌদি আরবের কাছে তা গ্রহণযোগ্য ছিল না।'
এদিকে, ভারত জানিয়েছে, সৌদি আরব এবং পাকিস্তানের এই চুক্তির উপর নজর রয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, সৌদি আরবের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দৃঢ় থাকলেও দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।