পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্প্রতি প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে। বুধবার সৌদি আরবের যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক পারস্পরিক কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করেন পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। চুক্তিতে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে কোনও একটি দেশ তৃতীয় কোনও দেশের আগ্রাসনের শিকার হলে তা দুই দেশের ওপরেই আগ্রাসন বলে বিবেচিত হবে। দুই দেশ মিলে তার জাবাব দেবে। এখন জানা গেল এই চুক্তির আওতায় রয়েছে পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রও। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন যে প্রয়োজনে পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র সৌদি আরবের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তির আওতায় এই ঘোষণা করা হয়েছে। এই প্রথমবারের মতো ইসলামাবাদ স্পষ্টভাবে স্বীকার করেছে যে তারা সৌদি আরবেও তাদের পরমাণু অস্ত্রের ছাতা ধরেছে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফের এই বিবৃতি পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে এই সপ্তাহের প্রতিরক্ষা চুক্তির তাৎপর্য তুলে ধরে। দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশক ধরে সামরিক সম্পর্ক রয়েছে।
ইজরায়েলের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে
বিশ্লেষকরা এই পদক্ষেপকে ইজরায়েলের প্রতি একটি বার্তা হিসেবে দেখছেন, যা দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র পরমাণু অস্ত্রধারী দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। গত সপ্তাহে কাতারে হামাস নেতাদের টার্গেট করে ইজরায়েলের হামলায় ছ'জন নিহত হওয়ার পর এই বিবৃতি এসেছে। এই ঘটনা আরব দেশগুলির নিরাপত্তা নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
পাকিস্তানি সংবাদ চ্যানেল জিও টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আসিফকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে পাকিস্তান কি সৌদি আরবকে পরমাণু অস্ত্রের ছাতায় আনবে? আসিফ উত্তর দিয়েছিলেন, 'আমি পাকিস্তানের পরমাণু ক্ষমতা সম্পর্কে একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলতে চাই। আমরা অনেক আগেই এই ক্ষমতা অর্জন করেছি, যখন আমরা পরীক্ষা চালিয়েছি। তারপর থেকে, আমাদের বাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। আমাদের যা কিছু আছে তা তাদের দেওয়া হবে।' তিনি আরও বলেন, 'আমাদের যা কিছু আছে এবং আমরা যে ক্ষমতা তৈরি করেছি তা এই চুক্তির আওতায় (সৌদি আরব) উপলব্ধ করা হবে।'
পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচিতে সৌদির ফান্ডিং
সৌদি আরবকে দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। অবসরপ্রাপ্ত পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফিরোজ হাসান খান বলেছেন যে সৌদি আরব উদারভাবে পাকিস্তানকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে, বিশেষ করে যখন দেশটি নিষেধাজ্ঞার অধীনে ছিল। পরমাণু বোমা তৈরির চেষ্টার জন্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান। বাইডেন প্রশাসনের শেষ দিনগুলিতে পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের উপরও নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। ভারতের পরমাণু অস্ত্রের মোকাবিলা করার জন্য পাকিস্তানও পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি নিয়েছিল। আমেরিকান ম্যাগাজিন বুলেটিন অফ অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টস অনুসারে, ভারতের কাছে আনুমানিক ১৭২টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে, যেখানে পাকিস্তানের কাছে আছে ১৭০টি।