
ইউনূস আমলে পাকিস্তানের সঙ্গে একেবারে যেন গলায় গলায় বন্ধুত্ব বাংলাদেশের। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের সুপ্ত সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার দিকে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে। কয়েক মাসের মধ্যে ঢাকা-করাচি বিমান রুট চালু হতে চলেছে। এরমধ্যেই সামনে এল নতুন খবর। বাংলাদেশ করাচি বন্দর ব্যবহার করতে পারবে বলে সম্মতি দিয়েছে পাকিস্তান।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে টানাপোড়েনের কারণে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের উপর চাপ আরও তীব্র হয়ে উঠছে, এমন এক সময়ে ঢাকাকে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তান। সোমবার, পাকিস্তান বাংলাদেশকে পাটজাত পণ্য এবং অন্যান্য পণ্য রফতানির জন্য তাদের করাচি বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে। ভারত বাংলাদেশী পাটের স্থলপথে আমদানির দরজা বন্ধ করার কয়েক সপ্তাহ পরে, পাকিস্তানের এই প্রস্তাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের এই পদক্ষেপকে ভারতকে ভূ-রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জ করার একটি চাল হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া, বাংলাদেশের পাট রফতানি বৃদ্ধিকে সহায়তা করার জন্য পাকিস্তান পাট এবং অন্যান্য কিছু পণ্যের উপর কর কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে জানানো হয়েছে। এই বছরের শুরুতে, পাকিস্তান ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে পাট আমদানির উপর ২% শুল্ক প্রত্যাহার করেছে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ২০ বছর পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে নবম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠক হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো লক্ষ্যেই এ আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। বৈঠকে পাকিস্তানি বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছে ঢাকা। অন্যদিকে, বাংলাদেশ করাচি বন্দর ব্যবহার করতে পারবে বলে সম্মতি দিয়েছে পাকিস্তান।
গত সোমবার রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা কমিশনে এই বৈঠক হয়। বৈঠকে কৃষি গবেষণা, হালাল ফুড, তথ্যপ্রযুক্তি ও নৌপরিবহনসহ কয়েকটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (MOU) নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে সংবাদধ্যমের সামনে কথা বলেন বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পাকিস্তানের জ্বালানিমন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক।
বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, পাকিস্তান বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০০ নতুন বৃত্তি প্রদানের প্রস্তাব করেছে। দেশটি বাংলাদেশে তাদের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনে আগ্রহী। ব্যাঙ্ক খাতে কারিগরি প্রশিক্ষণও দিতে চায় পাকিস্তান।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের অগাস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর হয়। কয়েক দফায় দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করেন। পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ কমিটির (সিজেসিএসসি) চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা গত শনিবার বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন।