পাকিস্তান থেকেই জিহাদ পরিচালিত হওয়ার কথা স্বীকার করলেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান এবং পাকিস্তানের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। তিনি বলেছেন যে অতীত থেকে পালাতে চান না এবং বলতে চান যে পাকিস্তানের প্রাক্তন স্বৈরশাসকরা দেশের 'জিহাদীকরণ'র জন্য দায়ী ছিলেন। গত শুক্রবার বিলাওয়াল আল জাজিরা টিভিকে বলেছিলেন যে, আস্থা তৈরির ব্যবস্থা হিসেবে লস্কর-ই-তইবা প্রধান হাফিজ সইদ এবং জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারের মতো জঙ্গিদের ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের কোনও আপত্তি নেই। তবে এক্ষেত্রে নয়াদিল্লির সহযোগিতা প্রয়োজন।
দ্য ওয়্যারের সিনিয়র সাংবাদিক করণ থাপারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন, জইশ ই মহম্মদ ও লস্কর ই তইবার মতো গোষ্ঠীগুলিকে দেশের ভেতরে ও বাইরে হামলা চালানোর অনুমতি পাকিস্তান দেয় না। পহেলগাঁওয়ের ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদী হামলা বলে অভিহিত করে বিলাওয়াল ভুট্টো আরও দাবি করেন যে পাকিস্তান নিজেই সন্ত্রাসবাদের শিকার। তিনি বলেন, 'আমরা মোট ৯২,০০০ মানুষকে হারিয়েছি। আমি নিজেও সন্ত্রাসবাদের শিকার। তাই পহেলগাঁও হামলায় নিহতদের বেদনা বুঝি।'
সাক্ষাৎকারে যখন বিলাওয়ালকে বলা হয়েছিল যে তাঁর দেশের প্রাক্তন সেনাপ্রধান পারভেজ মোশারফ নিজেই বলেছেন যে আমরা সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থন করেছি এবং কাশ্মীরে লড়াই করার জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এর জবাবে বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, 'পারভেজ মোশারফের মতামত সম্পর্কে আমার কিছু বলার নেই। তবে এটুকু বলাই যথেষ্ট যে ঠান্ডা যুদ্ধের পরে এই অঞ্চলের নীতি এমন হয়ে গিয়েছিল যে লস্কর-ই-তইবার মতো সংগঠনগুলিকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হত না। এর আগে ৯/১১ হওয়ার আগে এই গোষ্ঠীর লোকদের স্বাধীনতা সংগ্রামী বলা হত। পাকিস্তান সরকার তখন আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে যুদ্ধ করার জন্য এই ধরনের সংগঠনগুলিকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু তারপরেও আমি এবং আমার মা এর বিরুদ্ধে ছিলাম।'
বিলাওয়াল ভুট্টোর মা বেনজির ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাঁকে জঙ্গিরা খুন করেছিল। বিলাওয়ালের দাদু জুলফিকার আলি ভুট্টোও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
সাক্ষাৎকারের সময় যখন করণ থাপার যখন বলেন, বিলাওয়াল আপনার বাবা আসিফ আলি জারদারিও বলেছিলেন যে আজকের সন্ত্রাসবাদীরা অতীতের নায়ক। আপনার বাবাও পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী গঠনের কথা মেনে নিয়েছেন। তখন বিলাওয়াল ভুট্টো ক্ষুব্ধ হন। তিনি বলেন, 'আমরা অতীত থেকে পালিয়ে যাচ্ছি না, তবে অতীতে জড়িয়ে পড়ে আমাদের বাস্তবতা উপেক্ষা করা উচিত নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়া-উল-হকের সঙ্গে পাকিস্তান একটি সমাজ হিসাবে পাকিস্তানের 'জিহাদীকরণ' করার পরিকল্পনা করেছিল। যাতে আমরা আফগানিস্তানের প্রেক্ষাপটে তাদের যুদ্ধ লড়তে পারি। পাকিস্তানে উপস্থিত পাকিস্তানি গোষ্ঠী বা ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আফগানিস্তানের প্রেক্ষাপটে 'জিহাদ' করার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। এটি অতীতের ঘটনা। অতীতে এটিই ঘটেছে।' বিলাওয়াল আরও বলেন, 'আল কায়েদা হোক বা অন্য কোনও সন্ত্রাসবাদী সংগঠন, তারা সকলেই আফগানিস্তান জিহাদের সঙ্গে যুক্ত ছিল। আফগানিস্তান জিহাদ শেষ হওয়ার পর, কিছু গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা ৯/১১ ঘটিয়ে কাজ করবে। এই গোষ্ঠীগুলির মধ্যে কিছু গোষ্ঠী কাশ্মীরে জিহাদ চালাতে গিয়েছিল। সেই সময় পাকিস্তানে এমন কিছু লোক ছিল যারা এই গোষ্ঠীগুলির বিরোধিতা করেনি। লস্কর-ই-তইবার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সইদের কথা বলতে গেলে, পাকিস্তান ২০২২ সালের এপ্রিলে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের অভিযোগে তাকে ৩১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।'