১৯৭৫ সালে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তাঁর শাসনের সময় বলেছিলেন যে তাঁরা ঘাস-পাতা খেতে পারেন, ক্ষুধার্ত থাকতে পারেন, কিন্তু ভারত যদি পরমাণু বোমা বানায়, তাঁরাও পারমাণবিক বোমা তৈরি করবেন। কিন্তু তাঁর কথা সত্যি হতে তিন দশকেরও বেশি সময় লেগে গিয়েছিল। ১১ সেপ্টেম্বর বুলেটিন অফ দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্ট-এ প্রকাশিত '২০২৩ পাকিস্তান নিউক্লিয়ার হ্যান্ডবুক' নামে একটি বিশেষ প্রতিবেদনে লেখা আছে যে পাকিস্তানে প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত রয়েছে। পাকিস্তান তার পারমাণবিক বোমা তৈরি এবং রক্ষার বিষয়ে খুব সীমিত তথ্য দিয়েছে। ফেডারেশন অফ আমেরিকান সায়ান্টিস্টের গবেষক ম্যাট কোর্ডা জানিয়েছেন, ভারত ও পাকিস্তানের প্রায় একই পরিমাণ পরমাণু অস্ত্র মজুত রয়েছে, কিন্তু তাদের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। ভবিষ্যতে দুই দেশের পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত কতটা বাড়বে তা স্পষ্ট নয়। তবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে এর কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক সংক্রান্ত বিপদ বাড়ছে। দুই দেশ কেবল তাদের পারমাণবিক প্রস্তুতিই বাড়াচ্ছে না, তারা এমন ব্যবস্থাও তৈরি করছে যা সংঘাতের সময়ে আরও দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
রিপোর্টের অনুযায়ী পাকিস্তানের কাহুতা এবং গাদওয়ালে পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য যে প্ল্যান্ট তৈরি করা হচ্ছে তা প্রায় শেষের দিকে। নিউজ এজেন্সি রয়টার্স জুনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যা অনুযায়ী পাকিস্তান ও চিন ১,২০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ৪.৮ বিলিয়ান ডলারের চুক্তি করেছিল।
স্যাটেলাইট ছবির মাধ্যমে দেখতে পাওয়া গেল পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমা
স্যাটেলাইট ইমেজ দেখায় যে পাকিস্তান ইসলামাবাদের পশ্চিমে কালা চিত্তা দাহার পর্বতমালায় তার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং তাদের মোবাইল লঞ্চারগুলি মোতায়েন করেছে। এর সঙ্গে পাহাড়ের পশ্চিম অংশ (যেখানে তারা ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি ও পরীক্ষা করে) এবং পূর্ব অংশ (ফতেহ জংয়ের উত্তর, যেখানে এটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র রাখে) প্রসারিত করছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ধরণের ব্যালিস্টিক এবং ক্রুজ মিসাইলের জন্য রোড-মোবাইল ট্রান্সপোর্টার ইরেক্টর লঞ্চারগুলি। এই বছরের জুন মাসে, পাকিস্তান তার রোড-মোবাইল ট্রান্সপোর্টার ইরেক্টর লঞ্চার প্রদর্শন করেছিল। পাকিস্তান দেখিয়েছিল এর মাধ্যমে নাসর, শাহিন-আইএ ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং বাবর ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করা যেতে পারে।
স্যাটেলাইট চিত্রের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানের ৫টি ঘাঁটি। আর্কো আউটপস্ট, যেটি ভারতের সীমান্ত থেকে প্রায় ১৪৫ কিমি দূরে অবস্থিত। গুজরানওয়ালা পোস্ট, যেটি প্রায় ৬০ কিমি দূরে অবস্থিত। খুজদার পোস্ট ভারতের সীমান্ত থেকে সব চেয়ে দূরে অবস্থিত। পানো আকিল পোস্ট, যেটি ৮৫ কিমি দূরে অবস্থিত। পঞ্চম পাকিস্তানি ঘাঁটি যেটা কিরানা পাহাড়ে অবস্থিত, তার নাম সারগোধা পোস্ট।
ছবির ভিত্তিতে আমেরিকান রিপোর্টে লেখা হয়েছে যে পাকিস্তান তাদের পারমাণবিক অস্ত্রগুলি আরও বাড়াচ্ছে। এমনকি রকেট লঞ্চার রাখার জন্য নতুন জায়গাও তৈরি করা হয়েছে। পাকিস্তানের মিরাজ ৩ এবং মিরাজ ৫ পারমাণবিক বোমা বহনে সবচেয়ে বেশি সক্ষম। পাকিস্তানী মিরাজ ফাইটার বোমারু বিমান দুটি এয়ার বেসে রাখা হয়েছে। সেই দুটি এয়ার বেসের নাম মাসরুর এয়ার বেস এবং রফিকী এয়ার বেস।
পাকিস্তানের কাছে বর্তমানে পারমাণবিক ক্ষমতা সম্পন্ন ৬টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আবদালি (হাতফ-২), গজনভি (হাতফ-৩), শাহিন-১/এ (হাতফ-৪) এবং স্বল্প-পাল্লার স্ট্রাইক সক্ষমতা সহ নাসর (হাতফ-৯), মাঝারি-পাল্লার ঘৌরি (হাতফ-৫) এবং শাহিন-২ (হাতফ-৬)। উপরন্তু, পাকিস্তান দুটি পৃথক পারমাণবিক সক্ষম ব্যালিস্টিক সিস্টেমে কাজ করছে - মাঝারি-পাল্লার স্ট্রাইক সক্ষমতা সহ শাহিন-৩ এবং একাধিক স্বাধীনভাবে টার্গেটযোগ্য রিএন্ট্রি ভেহিকল আবাবিল।