ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে এক রহস্যময় পোস্ট করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা এই পোস্টে তিনি 'পারস্পরিক ট্যারিফ' নিয়ে বড়সড় পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন। স্বভাবতই এই ঘোষণার প্রভাব শুধু ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কেই নয়, বরং গোটা বিশ্ববাণিজ্যে পড়তে পারে।
ট্রাম্পের পোস্ট: ‘আজ সবচেয়ে বড় দিন…’
মঙ্গলবার ট্রাম্প একটি পোস্ট করেন, যেখানে তিনি লেখেন—
"তিনটি দারুণ সপ্তাহ কেটেছে, সম্ভবত এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো! কিন্তু আজ সবচেয়ে বড় দিন। আমেরিকাকে আবার মহান করে তুলতে হবে!"
এই পোস্টের পর থেকেই শুরু হয়েছে জল্পনা। কারণ মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের আলোচনায় বাণিজ্যিক শুল্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠতে চলেছে। ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ‘অন্যায্য বাণিজ্য নীতি’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এমনকি তারা ভারতকে চাপ দিয়ে বলছে, মার্কিন পণ্যের উপর ভারতের শুল্ক কমাতে হবে।
পারস্পরিক ট্যারিফ কী?
‘পারস্পরিক ট্যারিফ’ মূলত আমদানি করা পণ্যের উপর আরোপিত কর, যা এক দেশ অন্য দেশের শুল্ক নীতির প্রতিক্রিয়ায় নির্ধারণ করে। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই বলে আসছিলেন, "এক চোখের বদলে এক চোখ, এক ট্যারিফের বদলে এক ট্যারিফ, একদম সমান হারে!"
এর মানে, যদি কোনো দেশ মার্কিন পণ্যের ওপর ২০% শুল্ক ধার্য করে, তবে আমেরিকাও তাদের পণ্যের উপর একই হারে শুল্ক বসাবে। অর্থাৎ, ট্রাম্প প্রশাসন এখন ‘টিট ফর ট্যাট’ নীতি কার্যকর করতে চাইছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বড়সড় পরিবর্তন আনতে পারে।
ভারতের উপর প্রভাব পড়বে?
ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই শুল্ক নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। ট্রাম্প এর আগেও ভারতকে ‘শুল্কের রাজা’ বলে কটাক্ষ করেছেন। মার্কিন প্রশাসনের দাবি, ভারত মার্কিন পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক বসায়, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ভারসাম্য নষ্ট করছে।
ট্রাম্প প্রশাসন বারবার ভারতকে চাপ দিচ্ছে, যেন ভারতীয় বাজারে মার্কিন পণ্যের প্রবেশাধিকার সহজ করা হয়। বিশেষ করে আমেরিকার দুগ্ধজাত পণ্য, মেডিক্যাল ডিভাইস, প্রযুক্তি পণ্য ইত্যাদির ওপর ভারতের শুল্ক কমানোর দাবি তারা তুলেছে।
এই পরিস্থিতিতে ‘পারস্পরিক ট্যারিফ’ নীতি কার্যকর হলে ভারতের রপ্তানিকারক সংস্থাগুলোর উপর চাপ বাড়বে, কারণ আমেরিকায় ভারতীয় পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নীতির ফলে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি, টেক্সটাইল, ওষুধ ও ইলেকট্রনিক্স খাতের উপর বড়সড় প্রভাব পড়তে পারে।
মোদীর আমেরিকা সফর: কূটনৈতিক মহূর্ত
প্রধানমন্ত্রী মোদী এই মুহূর্তে তার দ্বিপাক্ষিক সফরে আমেরিকায় রয়েছেন। ফ্রান্স সফর শেষে ওয়াশিংটন ডিসিতে পা রেখেছেন তিনি। ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর মোদী হচ্ছেন চতুর্থ বিশ্বনেতা, যিনি তার সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন।
এই সফরে বাণিজ্য ছাড়াও প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। দুই দেশের মধ্যে সামরিক চুক্তি ও প্রযুক্তি স্থানান্তর নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে।
শুক্রবার ভারতীয় সময় অনুযায়ী রাত ২:৩০-এ মোদী ও ট্রাম্পের একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকের ফলাফলের উপরই নির্ভর করবে, ভারত-মার্কিন সম্পর্ক কোন পথে এগোবে।
ট্রাম্পের ‘পারস্পরিক ট্যারিফ’ নীতির ঘোষণা বিশ্ববাণিজ্যের মানচিত্র পাল্টে দিতে পারে। বিশেষ করে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় পরীক্ষা হতে চলেছে। মোদী-ট্রাম্প বৈঠকের পরই বোঝা যাবে, ভারত কতটা ছাড় দেবে, আর ট্রাম্প তার কঠোর বাণিজ্য নীতিতে কতটা স্থির থাকেন। বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য মহলের চোখ এখন ওয়াশিংটন ডিসির দিকে!