
ওসমান হাদির মৃত্য়ুর পর থেকেই অশান্ত বাংলাদেশ। গত কয়েকদিনে ঢাকা শহরে চোখে পড়েছে চূড়ান্ত ভারত বিদ্বেষ। হিংসার ঘটনা টানা ঘটে চলেছে। ভারতের বিরোধিতা করে মুসলিম মৌলবাদীরা শ্লোগান করছেন, কখনও দাবি উঠছে বর্ডার আক্রমণেরও! এমনকী চট্টগ্রামে ভিসা আবেদন কেন্দ্র থেকে ভিসা পরিষেবাও স্থগিত করেছে ভারত। এরপরেই বাংলাদেশও সাময়িকভাবে কনস্যুলার এবং ভিসা পরিষেবা বন্ধ করেছে। ফলে সব মিলিয়ে দু'দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে।
এবার এই বিষয়ে মুখ খুলল রাশিয়াও। দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া জানাচ্ছে, বাংলাদেশ যত তাড়াতাড়ি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে ততই মঙ্গল।
বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার জি. খোজিন সোমবার বাংলাদেশ ও ভারত উভয়কেই উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকায় রুশ দূতাবাসে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে খোজিন বলেন, "বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনের আগে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। তাই ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা হ্রাস করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যত তাড়াতাড়ি এটা করা হবে, ততই মঙ্গল।"
তবে এ বিষয়ে রাশিয়ার অবস্থানও স্পষ্ট করেছেন খোজিন। তিনি বলেন, "রাশিয়া বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে হস্তক্ষেপ করতে চায় না। কিন্তু বর্তমানে উত্তেজনা আর না বাড়তে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।" খোজিন আরও জোর দিয়ে জানান, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পারস্পরিক বিশ্বাস এবং আস্থার উপর ভিত্তিতেই হওয়া উচিত।
উল্লেখ্য ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক বাংলাদেশের সূচনা লগ্ন থেকেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বলা চলে ভারতের সহায়তাতেই পূর্ব পাকিস্তান বদলে হয়েছিল বাংলাদেশ। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও নয়াদিল্লির সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। কিন্তু গত বছরের জুলাই-অগাস্টের ছাত্র বিক্ষোভের ফলে হাসিনা সরকারের পতন ঘটে এবং তিনি ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ শাসনের দায়িত্ব নেয় ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের আমলে সংখ্যা লঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে।
তবে সাম্প্রতিক ঘটনার সূত্রপাত ১২ ডিসেম্বর থেকে। ওই দিন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা গুলি করে। গত বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হলে অশান্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। হাদির মৃত্যুর পর বাংলাদেশে তাণ্ডব চালায় দাঙ্গাকারীরা। বাংলাদেশের একাধিক মিডিয়া অফিস ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এমনকী ভারতীয় কূটনৈতিক আবাসগুলি লক্ষ্য করেও হামলা চালানো হয়। এরপরেই দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি হতে শুরু করে।