ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই বড় পদক্ষেপ নিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুগানস্ককে পৃথক দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে বিদ্রোহীদের সঙ্গে শিগগিরই চুক্তি স্বাক্ষরের কথাও বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। এটিকে ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর দিকে রাশিয়ার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পুতিনের সর্বশেষ ঘোষণার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। জেলেনস্কি বলেছেন, বিদ্রোহীদের স্বীকৃতি দেওয়ার রাশিয়ার সিদ্ধান্তে তিনি ভীত নন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে ইউক্রেন সরকার পশ্চিমি দেশগুলির কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন পাবে। ইউক্রেন ইস্যুতে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও আজ বৈঠকে বসবে। ইউক্রেন নিয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি হবে একটি ওপেন মিটিং। ভারতও এতে তার বক্তব্য রাখবে।
রাশিয়ার এই পদক্ষেপের নিন্দা করেছে ইউরোপিয় ইউনিয়ন, ন্যাটোর পাশাপাশি আমেরিকা এবং অনেক দেশ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিক্রিয়াও এসেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফোনেফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলরের সঙ্গে কথা বলেছেন। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, রাশিয়ার পদক্ষেপের জবাব দিতে হবে বলে তিন নেতা একমত হয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টও একটি আদেশে সই করেছেন। এই আদেশের মাধ্যমে, ইউক্রেনের তথাকথিত ডিপিআর (দোনেৎস্ক ) এবং এলপিআর (লুগানস্ক) অঞ্চলে আমেরিকান নাগরিকদের বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।
ব্রিটেন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলেছে। যুক্তরাজ্য থেকে বলা হয়েছে, আজ মঙ্গলবার রাশিয়ার ওপর সরকারের পক্ষ থেকে কিছু নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। যুক্তরাজ্য রাশিয়ার সর্বশেষ পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করেছে। এটাকে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার ওপর আক্রমণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী কাজা ক্যালাসও রাশিয়ার এই পদক্ষেপের নিন্দা করেছেন এবং একে ইউক্রেনের অখণ্ডতার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাশিয়া কূটনৈতিক দরজা বন্ধ করে যুদ্ধের অজুহাত তৈরি করছে। ইউরোপিয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল এবং ইউরোপিয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন রাশিয়ার এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রধানের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাশিয়ার এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের পাশাপাশি মিনস্ক চুক্তিরও লঙ্ঘন। এর প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপিয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলেছে। ইউরোপীযি ইউনিয়ন আরও বলেছে যে আমরা ইউক্রেনের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং সীমানার মধ্যে আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতিরক্ষার জন্য আমাদের অটুট সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি।
ন্যাটোর (NATO) কড়া প্রতিক্রিয়া
ন্যাটোও রাশিয়ার এই পদক্ষেপে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ রাশিয়ার সিদ্ধান্তের নিন্দা করে বলেছেন, এটি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে ক্ষুন্ন করবে এবং সংঘাত সমাধানের প্রচেষ্টার সঙ্গে মোকাবিলা করবে। এটিও মিনস্ক চুক্তির লঙ্ঘন। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে, রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা নিশ্চিত করে, যার মধ্যে রাশিয়া অন্তর্ভুক্ত ছিল। দোনেৎস্ক ও লুগানস্কক ইউক্রেনের অংশ।
ন্যাটো মহাসচিব আরও বলেন, মস্কো বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে পূর্ব ইউক্রেনে সংঘাতে ইন্ধন অব্যাহত রেখেছে। রাশিয়া আবারও ইউক্রেন আক্রমণের অজুহাত খুঁজছে। ন্যাটো তার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানার মধ্যে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সমর্থন করে। তিনি আরও বলেন, বন্ধুপ্রতীম দেশগুলো রাশিয়াকে কূটনীতির পথ বেছে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল এবং ইউক্রেনের আশেপাশে বড় পরিসরে মোতায়েন করা সেনাবাহিনীকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।