মস্কোতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিন দিনের রাশিয়া সফরে গিয়েছেন জয়শঙ্কর। রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার অজুহাত দেখিয়ে ভারতীয় পণ্যের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। যা ২৭ অগাস্ট থেকে কার্যকর হবে। তার মধ্যেই পুতিন ও জয়শঙ্করের বৈঠক বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক সেরে ফেরার পরে সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন।
বৃহস্পতিবার জয়শঙ্কর ভারতীয় পণ্যের মার্কিন শুল্ক আরোপের পদক্ষেপের সমালোচনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে অন্যান্য দেশ মস্কোর জ্বালানির অনেক বড় ক্রেতা। মস্কোতে সাংবাদিক বৈঠকে এক প্রশ্নের উত্তরে জয়শঙ্কর স্পষ্ট করে বলেন যে ভারতকে অন্যায্যভাবে এক্ষেত্রে আলাদা করা দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, 'আমরা রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা নই, চিন সবচেয়ে বড় ক্রেতা। আমরা এলএনজি-র (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) সবচেয়ে বড় ক্রেতা নই, এটা ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আমরা এমন একটি দেশ নই যেখানে ২০২২ সালের পর রাশিয়ার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার মনে হয় দক্ষিণের কিছু দেশের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্য বেড়েছে। আমরা এমন একটি দেশ যেখানে আমেরিকানরা গত কয়েক বছর ধরে বলে আসছে যে রাশিয়া থেকে তেল কেনা সহ বিশ্ব জ্বালানি বাজার স্থিতিশীল করার জন্য আমাদের সবকিছু করা উচিত। প্রসঙ্গত, আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও তেল কিনি এবং তার পরিমাণো বেড়েছে। সত্যি বলতে, আপনি (মিডিয়া) যে যুক্তির কথা উল্লেখ করেছেন তাতে আমরা খুবই বিভ্রান্ত।'
বুধবারই জয়শঙ্কর ভারত-রাশিয়া সম্পর্ককে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের প্রধান সম্পর্কগুলির মধ্যে সবচেয়ে স্থিতিশীল বলে উল্লেখ করেছিলেন। রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভও সেই অনুভূতির প্রতিধ্বনি করে এই সম্পর্ককে দুই দেশের নেতাদের দ্বারা গঠিত বিশেষ কৌশলগত অংশীদারিত্ব হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
বুধবার ভারতে নিযুক্ত রাশিয়ার চার্জ ডি'অ্যাফেয়ার্স, রোমান বাবুশকিন বলেছেন যে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং ভূ-রাজনৈতিক চাপ সত্ত্বেও ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, যা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাড়ছে।
ভারত-রাশিয়া বাণিজ্য গত চার বছরে পাঁচ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০২১ সালে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২০২৪-২৫ সালে ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। মূলত রাশিয়ান হাইড্রোকার্বন আমদানির কারণে। নয়াদিল্লিতে রাশিয়ান দূতাবাস গত পাঁচ বছরে এই বৃদ্ধি ৭০০ শতাংশ অনুমান করেছে। কিন্তু জয়শঙ্কর ক্রমবর্ধমান ভারসাম্যহীনতার বিষয়টি তুলে ধরেন। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি, যা ২০২১ সালে মাত্র ৬.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল, তা প্রায় ৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।