মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটি। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকে সময়ে পৃথিবীতে ফিরতে পারেননি সুনীতা উইলিয়ামস। কিন্তু তাতেও উল্টে খোশমেজাজেই আছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী। সরাসরি স্পেস স্টেশন থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করেন তিনি। সেখানে জানান, 'এটা আমার পছন্দের জায়গা। মহাকাশে থাকাটা আমি উপভোগ করি।'
বোয়িং স্টারলাইনার ক্যাপসুলের সমস্যার কারণে স্পেশ স্টেশনেই রয়ে গিয়েছেন মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর। শুক্রবার তাঁরা জানিয়েছেন, প্রথমে যখন তাঁদের ছাড়াই মহাকাশযানটা পৃথিবী ফিরে গেল, তখন একটু খারাপ লাগছিল বটে। কিন্তু সেই পর্যন্তই। তারপরে আর বেশি খারাপ লাগছে না তাঁদের। বরং মহাকাশে আরও ক'দিন থাকতে পেরে তাঁরা খুশিই হয়েছেন।
গত জুনে স্টারলাইনার ক্যাপসুলে স্পেস স্টেশনে পৌঁছেছিলেন দুই মহাকাশচারী। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তাঁদের ফেরার পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায়। ক্যাপসুলটিতে সমস্যা ধরা পড়ে। ফলে তাতে করে মহাকাশচারীদের ফেরানোটা ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। এই মিশন এখন আট মাসেরও বেশি সময় ধরে চলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
উইলমোর বলেন, 'কিছু সময় বেশ কঠিনই ছিল। আমরা মহাকাশযানের পাইলট। তাই সেটা আমাদের ছাড়াই ফিরে যাচ্ছে দেখে খারাপ লাগছিল, কিন্তু সেটাই হয়েছে।' সুনীতা উইলিয়ামস জানান, 'এই ধরনের সমস্যাগুলো মহাকাশ অভিযানের অংশ। আমরা জানিই যে যেকোনও সময়ই জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।'
উইলমোর এবং উইলিয়ামস এখন স্পেস স্টেশনের ফুল-টাইম ক্রু মেম্বার হিসেবেই রুটিন রক্ষণাবেক্ষণ ও গবেষণায় অংশ নিচ্ছেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সুনীতা উইলিয়ামস স্পেস স্টেশনের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব নেবেন।
সম্প্রতি স্পেস স্টেশনে একটি সয়ুজ মহাকাশযানে দুইজন রুশ এবং একজন আমেরিকান মহাকাশচারী পৌঁছান। স্পেস স্টেশনে এখন মোট ১২ জন রয়েছেন। আবার, এই মাসের শেষের দিকেই স্পেসএক্সের আরেকটি মহাকাশযান স্পেস স্টেশনে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
সুনীতা উইলিয়ামস জানান, স্পেস স্টেশনে আরও কয়েক মাস থাকার বিষয়টা মানিয়ে নেওয়াটা তাঁর পক্ষে কোনও বড় ব্যাপার নয়। তিনি জানান, এর আগেও তিনি সেখানে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। সুনীতা উইলিয়ামস বলেন, 'এটি আমার পছন্দের জায়গা। মহাকাশে থাকাটা আমি উপভোগ করি।' বুচ উইলমোরও জানান যে তিনি দ্রুত মানিয়ে নিয়েছেন।
খালি একটাই সমস্যার কথা জানালেন সুনীতা উইলিয়ামস। সেটা হল, একটানা মহাকাশে থাকার কারণে পরিবারকে সময় দেওয়া হচ্ছে না। মায়ের সঙ্গে সরাসরি সময় কাটানো হচ্ছে না বলে কিছুটা মন খারাপের কথাও জানান সুনীতা। অন্যদিতে বুচও জানান, তাঁর ছোট মেয়ের এটাই স্কুলের ফাইনাল ইয়ার। এরপর সে কলেজে চলে যাবে। তাই এই সময়টা মেয়ের সঙ্গে কাটানো হচ্ছে না ভেবে তাঁর একটু মন খারাপ লাগছে।
স্টারলাইনার ক্যাপসুলের প্রথম অভিযানে একাধিক সমস্যা হয়েছিল। থ্রাস্টার ফেলিওর এবং হিলিয়াম লিক পাওয়া গিয়েছিল। সেই কারণে এতে করে মহাকাশচারীদের ফেরানো ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়ে দেন বিজ্ঞানীরা। যদিও পরে এটি মনুষ্যহীনভাবে নিরাপদেই পৃথিবীতে ফিরে আসে। তবে নাসার বাণিজ্যিক ক্রু প্রোগ্রামে বোয়িংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। যদিও সমস্ত সমস্যা কাটিয়ে ওঠার ও ভবিষ্যতে ত্রুটি এড়ানোর বিষয়ে কাজ করছে বোয়িং।