মার্কিন মধ্যস্থতার পর থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া তিন দিন ধরে সীমান্তে চলা সংঘর্ষ বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন যে উভয় দেশের নেতারা আলোচনার পর যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছেন। তিনি উভয় দেশকে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন যে, যদি তারা লড়াই চালিয়ে যায়, তাহলে এই ডিলে প্রভাব পড়বে।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সহিংস সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৩০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ১.৩ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ট্রাম্প বলেন যে উভয় দেশের নেতারা বৈঠক করে যুদ্ধবিরতির রূপরেখা নির্ধারণ করবেন। স্কটল্যান্ড সফরে থাকা ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে করেন, যেখানে তিনি কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এবং থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ভেচায়াচাইয়ের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন বলে দাবি করেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লেখেন, 'উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি এবং শান্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।' তিনি আরও বলেন যে উভয় দেশই বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। ট্রাম্প বলেন, 'তারা (উভয় দেশের নেতারা) অবিলম্বে দেখা করতে এবং যুদ্ধবিরতির দিকে দ্রুত কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।'
যুদ্ধবিরতিতে সম্মত থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ভেচায়াচাই যুদ্ধবিরতির প্রতি 'নীতিগতভাবে সম্মতি' প্রকাশ করেছেন কিন্তু কম্বোডিয়ার 'উদ্দেশ্য' নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একটি ফেসবুক পোস্টে, তিনি ট্রাম্পকে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার জন্য থাইল্যান্ডের ইচ্ছা কম্বোডিয়ার কাছে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
কেন কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড সংঘর্ষে লিপ্ত?
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি গত দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর বলে মনে করা হচ্ছে। শনিবার, সংঘর্ষ থাইল্যান্ডের ত্রাত প্রদেশ এবং কম্বোডিয়ার পুরসাত প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে, যা প্রাথমিক সংঘাত অঞ্চল থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মে মাসের শেষের দিকে একজন কম্বোডিয়ান সৈন্যের মৃত্যুর পর এই হিংসা শুরু হয়। ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে, বিশেষ করে ইউনেস্কো-তালিকাভুক্ত প্রিয়াহ বিহার মন্দির নিয়ে। ১৯৬২ সালে, আইসিজে এটি কম্বোডিয়াকে প্রদান করে, কিন্তু থাইল্যান্ড এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
সংঘর্ষে ৩০ জনেরও বেশি নিহত
শনিবার, থাইল্যান্ডে ২০ জনের মৃত্যুর খবর কনফার্ম করা হয়েছে, যার মধ্যে সাতজন সৈন্য এবং ১৩ জন বঅসামরিক নাগরিক রয়েছে, যেখানে কম্বোডিয়ায় ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যার মধ্যে পাঁচজন সৈন্য এবং আটজন বঅসামরিক নাগরিক রয়েছে। কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডকে বেআইনি আক্রমণ এবং সামরিক সমাবেশের জন্য অভিযুক্ত করেছে, অন্যদিকে থাইল্যান্ড কম্বোডিয়াকে স্থলমাইন এবং সীমান্ত আক্রমণের জন্য অভিযুক্ত করেছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার কম্বোডিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের সীমান্ত এলাকা থেকে দূরে থাকার পরামর্শও দিয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কমিউনিটির চাপ প্রয়োগের আবেদন করেছিল, অন্যদিকে কম্বোডিয়া আবারও ICJ-তে যাওয়ার কথা বলেছে, যা থাইল্যান্ড প্রত্যাখ্যান করেছে।