ডোনাল্ড ট্রাম্পের নয়া ট্যারিফ নীতিতে টালমাটাল ওয়াল স্ট্রিট। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘোষণার পরপরই বৃহস্পতিবার বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে প্রভাব দেখা গেল। আর সেই ভূমিকম্পের এপিসেন্টার আমেরিকারই ওয়াল স্ট্রিট। কোভিড-এর পর থেকে বাজারে এত বেশি পতন দেখেনি আমেরিকা।
রিপোর্ট অনুযায়ী, এদিন এক ধাক্কায় S&P 500 ইনডেক্স ৪.৮% পড়ে গিয়েছে। ডাও জোন্স পড়েছে ১,৬৭৯ পয়েন্ট বা ৪%। ন্যাসড্যাক কম্পোজিট পড়েছে ৬%।
কিন্তু শুল্ক আরোপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই প্রভাব পড়ছে কেন?
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই ট্যারিফ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বহু দেশের অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। S&P ডাও জোন্স ইনডিসেস-এর বিশ্লেষক হাওয়ার্ড সিলভারব্লাট জানিয়েছেন, একদিনেই বাজার থেকে উধাও হয়েছে ২ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
তেল, টেকনোলজি কোম্পানির স্টক, এমনকি সোনার দর পর্যন্ত পড়েছে। ছোট ছোট কোম্পানিগুলিরও শেয়ার নিচের দিকে। Russell 2000 ইনডেক্স ৬.৬% পড়ে গিয়েছে।
বুধবার রাতে ট্রাম্প আমদানি পণ্যের উপরে ন্যূনতম ১০% হারে শুল্ক বসানোর কথা জানান। চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের উপরে শুল্ক আরও বেশি। UBS জানিয়েছে, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ২% কমে যেতে পারে এবং মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে ৫%-এ পৌঁছাতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের ঘোষণায় বাজার আরও পড়তে পারে। বর্তমানে S&P 500 তার সর্বোচ্চ স্থান থেকে ১১.৮% নিচে।
বিশ্লেষক শন সান জানিয়েছেন, বাজার এখনও পুরোপুরি প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। এই হারে শুল্ক কার্যকর হলে বিশ্বব্যাপী ভোক্তা ও বাণিজ্যের উপর বড় প্রভাব পড়বে।
ট্রাম্প নিজে অবশ্য এই অবস্থাকে ইতিবাচকভাবে দেখেছেন। হোয়াইট হাউস থেকে ফ্লোরিডায় যাওয়ার পথে বলেন, "আমি জানতাম এভাবেই হবে। এটি একটি অস্ত্রোপচারের মতো।"
এই অবস্থায় ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর কথা ভাবতে পারে। এতে সংস্থাগুলি ও সাধারণ মানুষের ঋণ নেওয়া সহজ হবে। ১০ বছরের ট্রেজারি বন্ডের সুদ কমে হয়েছে ৪.০৪%।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুদের হার কমালে মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকিও বাড়তে পারে। বিশেষ করে ট্যারিফ বৃদ্ধির ফলে মার্কিন পরিবারগুলির ব্যয় আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা।
এই অবস্থায় মার্কিন অর্থনীতি এখনও বাড়ছে। বেকারভাতা চাওয়া কমেছে। পরিষেবা খাতেও কিছুটা বৃদ্ধির ইঙ্গিত মিলেছে। তবে বৃদ্ধির গতি প্রত্যাশার তুলনায় কম।
S&P 500-র ৫টি স্টকের মধ্যে ৪টিই পড়ে গেছে। Best Buy-এর স্টক পড়েছে ১৭.৮%, United Airlines ১৫.৬%, Target পড়েছে ১০.৯%।
S&P 500 পড়েছে ২৭৪.৪৫ পয়েন্ট, নতুন অবস্থান ৫৩৯৬.৫২। ডাও জোন্স পড়েছে ১,৬৭৯.৩৯ পয়েন্ট, নতুন অবস্থান ৪০৫৪৫.৯৩। ন্যাসড্যাক পড়েছে ১০৫০.৪৪ পয়েন্ট, নতুন অবস্থান ১৬৫৫০.৬১।
বিশ্বের অন্যান্য বাজারেও পতন দেখা গেছে। ফ্রান্সের CAC 40 পড়েছে ৩.৩%, জার্মানির DAX পড়েছে ৩%। জাপানের Nikkei পড়েছে ২.৮%, হংকংয়ের Hang Seng পড়েছে ১.৫% এবং দক্ষিণ কোরিয়ার Kospi পড়েছে ০.৮%।