৫০ শতাংশ শুল্কের পর এবার H-1B ভিসা এবং গ্রিনকার্ড নিয়েও ভারতকে বিপাকে ফেলতে পারে আমেরিকা। মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বর্তমান H-1B ভিসা কর্মসূচিকে 'একটি প্রতারণা' বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে এই প্রক্রিয়া মার্কিন শ্রমিকদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করছে। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, বড় ধরনের সংস্কার করা হবে। যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে ভারতীয়দের উপর।
H-1B ভিসা যাদের রয়েছে, তাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠই ভারতীয়। হাওয়ার্ড লুটনিকের কথায়, 'বর্তমান H-1B ভিসা ব্যবস্থা একটি প্রতারণা। এর জেরে ভিনদেশীরা আমেরিকার চাকরির বাজার দখল করে নিচ্ছে। আমেরিকান কর্মীদের নিয়োগই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত মার্কিন সংস্থাগুলিতে। কিন্তু তেমনটা মোটেই হচ্ছে না।'
হাওয়ার্ড লুটনিক নিশ্চিত করেছেন, লটারিভিত্তিক H-1B বরাদ্দ হবে এবার থেকে। বর্তমান ব্যবস্থা বাতিল করে উচ্চ বেতনভিত্তিক ব্যবস্থা চালু করা হবে। তাঁর কথায়, 'আমরা এই কর্মসূচি বদলাব। এটি ভয়াবহ। আমরা গ্রিন কার্ডও পরিবর্তন করব।'
গ্রিন কার্ড ব্যবস্থারও কড়া সমালোচনা করেন মার্কিন বাণিজ্য সচিব। হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, 'আমরা ভুল প্রার্থীদের গ্রিন কার্ড দিচ্ছি। গড়ে একজন মার্কিন নাগরিক বছরে ৭৫ হাজার ডলার আয় করে। অথচ গড়ে গ্রিন কার্ডপ্রাপ্তদের আয় মাত্র ৬৬ হাজার ডলার। আমরা কেন এটা করছি? এত যেন নিম্নস্তরের কর্মীদের বেছে নেওয়া হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন অভিবাসন নীতি এমনভাবে রূপান্তরিত হবে, যাতে আরও সম্পদশালী ও দক্ষ মানুষকে টানা যায়। এ কারণেই ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রিন কার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়া পরিবর্তন করবেন এবং সেই জায়গায় আসবে গোল্ড কার্ড।'
প্রস্তাবিত গোল্ড কার্ড কর্মসূচির বিস্তারিত জানিয়েছেন হাওয়ার্ড লুটনিক। আমেরিকায় অন্তত ৫০ লক্ষ ডলার বিনিয়োগ করলে তবেই বিদেশিদের স্থায়ী নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যেই এর চাহিদা আকাশছোঁয়া হয়ে গিয়েছে। ২ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ গোল্ড কার্ডের জন্য আবেদন আগ্রহী। এটি আমেরিকায় ১.২৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আনতে পারে বলে মনে করছে ট্রাম্প প্রশাসন।
হাওয়ার্ড লুটনিক জোর দিয়ে বলেন, 'এই গোল্ড কার্ডের মাধ্যমেই আমরা এই দেশে সেরা মানুষদের নিয়ে আসব। এখনই সময় পুরনো বস্তাপচা প্রক্রিয়ার পরিবর্তন করার।'
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য পূর্বে একাধিকবার H-1B ভিসার পক্ষেই বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেছিলেন, 'দক্ষ ও যোগ্য মানুষদের আমেরিকায় নিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।' গত জানুয়ারিতে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেছিলেন, 'আমাদের সেরা মানুষগুলোকে পেতেই হবে। উচ্চ মেধার মানুষের প্রয়োজন রয়েছে এদেশে। তবেই ব্যবসা বাড়বে, আর তাতেই সবার উপকার হবে।'
তবে সত্যিই কোনও সংস্কার হলে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে ভারত। ২০২৩ অর্থবছরে অনুমোদিত H-1B ভিসার ৭২ শতাংশই ভারতীয়দের জন্য ছিল। চিনের পরিসংখ্যান মাত্র ১১.৭ শতাংশ ছিল। বর্তমানে বার্ষিক H-1B কোটা ৬৫ হাজারের সঙ্গে অতিরিক্ত ২০ হাজার আসন রয়েছে আমেরিকায় উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের জন্য, যা সম্পূর্ণভাবে লটারির মাধ্যমে বণ্টন করা হয়।