রাশিয়ার ক্রমহ্রাসমান জন্মহার মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এক অভিনব ও বিস্ময়কর পরামর্শ দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মেট্রোর একটি প্রতিবেদনের বরাতে জানা গেছে, পুতিন রাশিয়ান কর্মীদের তাদের মধ্যাহ্নভোজ বা কফি বিরতির সময় যৌন মিলনে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মূলত, দেশটির বর্তমান প্রজনন হারকে বাড়ানোর লক্ষ্যে এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যা বর্তমানে প্রতি মহিলায় ১.৫ শিশুর নিচে নেমে এসেছে। অথচ জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় হার ২.১।
রাশিয়ার জনসংখ্যা সংকট
রাশিয়ার জন্মহার দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগের বিষয় ছিল। ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধ এবং তরুণদের দেশত্যাগের কারণে এই পরিস্থিতি আরও গুরুতর আকার ধারণ করেছে। গত কয়েক বছরে, দেশটির প্রায় এক মিলিয়নের বেশি তরুণ নাগরিক দেশ ছেড়ে চলে গেছেন, যার প্রভাব রাশিয়ার কর্মক্ষম জনসংখ্যার উপর পড়েছে। এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।
পুতিনের নির্দেশ
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডক্টর ইয়েভজেনি শেস্তোপলোভ পুতিনের এই পরামর্শকে সমর্থন করে বলেন, "কাজের চাপ সন্তান জন্মদানে বাধা হওয়া উচিত নয়।" তিনি রাশিয়ানদের আহ্বান জানান, কাজের বিরতির সময়টুকু সন্তান জন্মদানের জন্য কাজে লাগানোর। শেস্তোপলোভ আরও বলেন, "কাজে ব্যস্ত থাকার অজুহাত সন্তান জন্মদানে বাধা হতে পারে না। বিরতির সময় বাচ্চা তৈরি করুন।"
অন্যান্য পদক্ষেপ
এছাড়া ক্রেমলিন আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন মস্কোতে ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে উর্বরতা স্ক্রীনিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্ক অঞ্চলে কর্তৃপক্ষ জন্মহার বাড়ানোর লক্ষ্যে আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে, যেখানে ২৪ বছরের কম বয়সী মহিলাদের প্রথম সন্তানের জন্মের পরে প্রায় ১.০২ লক্ষ রুবেল প্রদান করা হবে।
ক্রমবর্ধমান সীমাবদ্ধতা
গর্ভপাতের অ্যাক্সেসও ক্রমশ কঠোর করা হচ্ছে এবং ডিভোর্সের ফিও বাড়ানো হয়েছে। এর মাধ্যমে রাশিয়ার সরকার সামাজিক এবং ধর্মীয় নেতাদের সহায়তায় নারীদের সন্তান ধারণ এবং লালনপালনকে তাদের প্রধান দায়িত্ব হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে।
রাশিয়ার রেকর্ড হ্রাসপ্রাপ্ত জন্মহার
২০২৪ সালের প্রথমার্ধে রাশিয়ার জন্মহার ২৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুন মাসে প্রথমবারের মতো জন্মহার এক লাখের নিচে নেমে আসে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে মোট ৫,৯৯,৬০০ শিশুর জন্ম হয়েছে, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৬,০০০ কম।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই পরিস্থিতিকে "জাতির ভবিষ্যতের জন্য বিপর্যয়কর" বলে অভিহিত করেছেন। ইউরোপের অন্যান্য দেশ ও জাপানের মতো রাশিয়ারও জনসংখ্যা সংকটে ভুগতে শুরু করেছে, যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়ার ক্রমহ্রাসমান জন্মহার মোকাবিলার জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিনের এই অপ্রচলিত পরামর্শ নতুন আলোচনা তৈরি করেছে। যদিও জন্মহার বাড়াতে আরও অনেক কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তবে পুতিনের এই অনুরোধ কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকরা সন্দিহান।