নেপালে ক্ষোভের আগুন অনেকদিন ধরেই বাড়ছিল। শেষমেশ সেই আগুনেই পুড়ল কেপি শর্মা অলির গদি। মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র জমা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। নিজের চিঠিতে ওলি লিখেছেন, 'সমস্যার সমাধান সহজতর করতে এবং রাজনৈতিক মীমাংসার পথ খুলে দিতে আমি সরে দাঁড়াচ্ছি।'
নেপালে ঠিক কীভাবে অশান্তি শুরু হল?(What Happened in Nepal)
ঘটনার সূত্রপাত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যানের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। গত সপ্তাহে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ-সহ একাধিক জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দিয়েছিল বামপন্থী ওলি সরকার। কারণ হিসাবে বলা হয়েছিল যে, এই কোম্পানিগুলি নেপালের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের নিয়ম মেনে রেজিস্ট্রেশন করেনি। এতে এক ধাক্কায় প্রায় এক কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যবসা থেকে পড়াশোনা সবই হয়। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, এক্স, লিঙ্কডইন এমনকি ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করায় আতান্তরে পড়েন সাধারণ মানুষ।
বিশেষত তরুণ প্রজন্ম ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। এর মধ্যে আগুনে ঘি ঢালেন কেপি ওলি স্বয়ং। তিনি বলে বসেন, 'কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির আয় বা চাকরির থেকে দেশের স্বার্বভৌমত্ব বেশি গুরুত্বপূর্ণ।' এরপরেই জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভে নামেন সাধারণ মানুষ। দুর্নীতি, বেকারত্ব, স্বজনপোষণ বন্ধ না করে সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করা হচ্ছে বলে দাবি তোলেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধের মাধ্যমে দেশবাসীর কন্ঠরোধ করতে চাইছে সরকার। বিশেষত 'নেপো বেবি' শব্দটি নেপালে ট্রেন্ড করছিল গত ক’দিন ধরেই। অর্থাৎ, নেপালে উচ্চপদে যে কেবলমাত্র প্রভাবশালীদের সন্তানরাই স্থান পান, সেই দাবিই করা হচ্ছিল। স্পষ্টতই, এই ক্ষোভ অনেক দিন ধরেই জমছিল। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যান শুধু স্ফুলিঙ্গের কাজ করেছে।
দুই দিনে মৃত্যু ২২ জনের
প্রথমে জেদে অনড় ছিলেন কেপি ওলি। বলেন, 'আমার প্রধানমন্ত্রিত্ব গেলেও নিষেধাজ্ঞা তুলব না।' তবে সোমবার রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে নেপাল। সরকারি দফতর, সংসদ, মন্ত্রীদের বাসভবনের সামনে ভাঙচুর, বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্দোলনে এখনও পর্যন্ত ২ দিনে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম ৩০০ রও বেশি। এমতাবস্থায় মঙ্গলবার সকালে সরকার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যানের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে।
তবে তাতে আর মানতে নারাজ আন্দোলনকারীরা। কাঠমান্ডু থেকে সুনসারি, পুরো দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। গুলি, জলকামান, টিয়ার গ্যাসেও থামেনি আন্দোলন। সোমবারের পর মঙ্গলবারও প্রাণ হারান আরও দু’জন।
রাস্তায় নামল যুবসমাজ
২৪ বছরের ছাত্র যুবরাজ ভট্টাচার্য জানালেন, 'শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নয়, আমাদের রাগ দুর্নীতি আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে।' অপর এক ছাত্রীর কথায়, 'এ বার বদল চাই। আগের প্রজন্ম সহ্য করে নিয়েছে; আমরা করব না।'
কেন টলল ওলি সরকার
মঙ্গলবার সকালেও অলি অনুরোধ করেছিলেন, 'হিংসা কোনও সমাধান নয়। শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই পথ খুঁজে বের করতে হবে।' সন্ধ্যায় সবদলীয় বৈঠকেরও ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই ঝড়ের গতি এতই প্রবল হয়ে উঠল যে, আর থাকতে পারলেন না গদিতে।
২০০৮ সালে রাজতন্ত্র শেষ হওয়ার পর থেকে, নেপালে একের পর এক সরকার এসেছে আর গিয়েছে। ১৩ বছরে ১৩ জন প্রধানমন্ত্রী। দুর্নীতি, অস্থিরতা, উন্নয়নের অভাব, সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মানুষের মধ্যে ক্ষোভ জমে ছিল। সেই ক্ষোভই এবার ফেটে পড়ল নতুন প্রজন্মের মাধ্যমে। আপাতত প্রশ্ন একটাই, এরপর কোনদিকে এগোবে নেপাল? সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।