বাংলাদেশের মতোই রাতারাতি ক্ষমতা বদলে গেল সিরিয়ায়। বাংলাদেশেও যেমন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান, ঠিক তেমনই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এখন প্রশ্ন, এরকম ঘটনা ঘটল কেন?
ঘটনার কারণ খুঁজতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে ২০১১ সালে। ওই বছর সিরিয়ায় আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যূত করার জন্য বিদ্রোহীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু কড়া হাতে সেই বিক্ষোভ দমন করেন তিনি। গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। মৃত্যু হয় ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষের। আজ ১৩ বছর পর ৮ ডিসেম্বর আসাদ দেশ ছেড়ে পালালেন। বিদ্রোহীদের হাতে এখন সিরিয়ার ক্ষমতা।
২৭ নভেম্বর বদলে যায় সমীকরণ
প্রায় ৮ বছর সিরিয়ায় বিদ্রোহীরা মাথাচাড়া দিতে পারেনি। রাশিয়া ও ইরানের সহযোগিতায় আসাদ শাসন চলছিল। যদিও সিরিয়ার উত্তর ও পশ্চিমে বিদ্রোহীরা নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেই রেখেছিল। কিন্তু গত ২৭ নভেম্বর হয়াত তহরির আল-শাম নামক ইসলামিক সংগঠনটি সব হিসেব উল্টে দেয়। ৫ বছর ধরে এই সংগঠন সিরিয়ার ইদলিবের প্রান্তে ১৩টি গ্রাম দখল করে শাসন করছে। কিছু দিনের মধ্যে এরা সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো, হামা দখল করে নেয়। এবং শেষে রাজধানী দামাস্কাসও দখলে নিয়ে নেয়।
কীভাবে সাফল্য পেল হয়াত তহরির আল-শাম?
HTS (হয়াত তহরির আল-শাম)-এর সাফল্য আসলে বিশ্বের নানা দুটি যুদ্ধের ফসল। একদিকে ইরান ইজরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। অন্যদিকে রাশিয়া ব্যস্ত ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে। এই ডামাডোলে HTS মাথাচাড়া দেয়। তারা এই সুযোগ হাতছাড়া করেনি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা অবশ্য অনেকেই সিরিয়ার ক্ষমতা বদলকে আফগানিস্তানের সঙ্গে তুলনা করছে। কারণ এখানেও দেখা যাচ্ছে, বিনা যুদ্ধে সেনা আত্মসমর্পণ করেছে।
সেনা কেন আত্মসমর্পণ করল?
সিরিয়া নিয়ে ওয়াকিবহাল মহল বলছে, সেনায় ব্যাপক দুর্নীতি ও দীর্ঘদিন ধরে চলা গৃহযুদ্ধে ক্লান্ত হয়েই আত্মসমর্পণকে বেছে নিল তারা। এইচটিএস-এর নেতা আবু মহম্মদ আল জুলানি সম্প্রতি CNN-কে দেওয়া একটি সাক্ষাত্কারে জানিয়েছেন, বিদ্রোহী যোদ্ধাদের সঠিক প্রশিক্ষণ ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে লড়াইয়ের ফল হিসেবেই এই সাফল্য এসেছে।
এখন সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন?
বৃহত্তম এলাকা সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (SDF) দ্বারা অধিষ্ঠিত, যা মার্কিন সমর্থিত এবং পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিমে কুর্দ অধ্যুষিত এলাকাগুলি নিয়ন্ত্রণ করে। উত্তরে তুরস্কের সীমান্ত বরাবর, সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি রয়েছে, আঙ্কারা দ্বারা সমর্থিত, যেটি HTS দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের চেয়েও বড় এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। দামাস্ক দখল করার পর, এইচটিএস এখন সিরিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শক্তিতে পরিণত হয়েছে এবং আসাদ সরকার শাসিত এলাকাগুলিকেও তারা নিয়ন্ত্রণ করবে। সিরিয়ার মতো একটি জটিল অঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির মধ্যে নিয়ন্ত্রণ এবং প্রভাবের লড়াই অব্যাহত থাকায় এই সাদৃশ্যটি এত সহজ না-ও হতে পারে। দক্ষিণে, স্থানীয় যোদ্ধা গোষ্ঠীগুলি সুইদা এবং দারার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি এইচটিএস সহ আক্রমণে অংশ নিয়েছিল, তবে অতীতে তাদের মতবিরোধ ছিল এবং তাদের স্বার্থ আলাদা।
এরপর কী হবে?
সিরিয়ার জনগণের জন্য পরবর্তী কী হবে তা একটি জটিল প্রশ্ন। এটা নিশ্চিত যে দামাস্কের যেকোনো রাজনৈতিক শাসনে এইচটিএস কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবে। সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি এইচটিএস-নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সরকার গঠন করবে কিনা সে প্রশ্ন উন্মুক্ত রয়েছে। কিন্তু এই তিন দলের মধ্যে রয়েছে গভীর শত্রুতা। উদাহরণস্বরূপ, এইচটিএস আলেপ্পো দখল করার পর সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মির সদস্যরা এসডিএফ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বেশ কয়েকজনকে হত্যা করেছে।