সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দখল চেয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। রাজি হননি শেখ হাসিনা। আর সেই রাগেই চক্রান্ত করে বাংলাদেশের সরকারের পতন ঘটানো হয়েছে। দেশ ছাড়ার পর প্রথম প্রতিক্রিয়াতেই এমন দাবি তুলেছেন শেখ হাসিনা। ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের দিয়ে সংবাদমাধ্যমকে বার্তা দিয়েছেন তিনি। সেখানেই তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশ অধীনস্থ এই ছোট্ট দ্বীপে ঘাঁটি করতে চেয়েছিল আমেরিকা। তিনি সেটা না করাতেই তাঁকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমাকে যাতে মৃত্যুমিছিল দেখতে না হয়, সেই কারণেই আমি পদত্যাগ করেছি। যদি আমি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সার্বভৌমত্ব আমেরিকার কাছে সমর্পণ করতাম, তাহলে ক্ষমতায় থাকতাম।'
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কোথায়? এটা নিয়ে আমেরিকার আগ্রহ থাকবে কেন?
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কোথায়?
বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরের একটি ছোট্ট দ্বীপ এটি। নিচে গুগল ম্যাপের মাধ্যমে দেখতে পাবেন, ঠিক কোথায় এই দ্বীপটি অবস্থিত।
ম্যাপেই দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের দক্ষিণে এই দ্বীপ। বাংলাদেশের শেষ প্রান্ত এটি। মায়ানমার থেকেও এটি বেশ কাছে।
দ্বীপটি খুব একটা বড়ও নয়। ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১.২ কিলোমিটার চওড়া। এই ছোট্ট দ্বীপের বাসিন্দা ৩,৭০০ জন। ৯টি গ্রাম। মূলত কৃষি, পর্যটন নারকেল ও মাছ বিক্রির মাধ্যমে বাসিন্দারা জীবিকা নির্বাহ করেন। অন্যদিকে মূল বাংলাদেশ ও মায়ানমার থেকে এখানে দ্রব্যাদি আমদানি করা হয়।
কিন্তু এমন ছোট দ্বীপে আমেরিকার আগ্রহ থাকবে কেন?
আওয়ামী লিগের সমর্থক-নেতারা বলছেন, এই দ্বীপটি কৌশলগতভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশে রয়েছে। এখানে বিমানঘাঁটি করলে, নৌবহর রাখলে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জলভাগে নজরদারি করা যাবে। দ্রুত ভারত মহাসাগরের আশেপাশের যে কোনও এলাকায় পৌঁছানো যাবে। দ্বীপটি এয়ারস্ট্রিপ করার জন্য আদর্শ।
আওয়ামী লিগের নেতাদের দাবি, বহুকাল ধরেই বিভিন্ন শক্তিশালী দেশ তাই এই দ্বীপটি দখল করতে চাইছে। কারণ এখানে একবার বিমানঘাঁটি বা নৌবহর রাখলেই দক্ষিণ এশিয়ায় সেদেশের শক্তি বেড়ে যাবে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যে কোনও দেশের কাছে এমন স্ট্র্যাটেজিক পজিশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া বাণিজ্যিক তাৎপর্যও অনেক।
আগেও বলেছিলেন শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনাও এর আগে বলেছিলেন যে, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে 'পূর্ব তিমুরের মতো খ্রিস্টান দেশ' তৈরির ষড়যন্ত্র চলছে। তবে ভারতের নাম নেননি শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেছিলেন, একজন শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি তাঁকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যদি সেই বিদেশি দেশকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বিমানঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দেন, তাহলে বিনা বাধায় এই বছরের সাধারণ নির্বাচনে জিতে যাবেন।
তবে এই 'শেতাঙ্গ ব্যক্তি' বা তাঁর দেশের নাম খোলসা করেননি শেখ হাসিনা।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপেরও নাম করেননি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছিলেন, 'প্রাচীনকাল থেকেই উপসাগর ও ভারত মহাসাগরের মাধ্যমে বাণিজ্য হয়ে আসছে। এই জায়গাটার দিকে অনেকের চোখ আছে। এখানে কারও মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। আমি এটা হতে দিইনি... আর এটাও আমার একটা অপরাধ।'
শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাও ঢাকার ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য আমেরিকাকে দায়ী করেছেন। মার্কিন কূটনীতিবিদরা শেখ হাসিনাকে চিনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চাপ দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ করছেন তাঁরা। আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, তিনিও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি)-র পক্ষ নিয়েছেন।
বাংলাদেশের কাছে এই দ্বীপ গুরুত্বপূর্ণ
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যাওয়ার একমাত্র উপায় হল সমুদ্রপথ। কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে নৌকা ও ফেরিপথে এখানে বহু পর্যটক যান। এটি কক্সবাজার থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৯৯১ সালের টাইফুনের পর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বাংলাদেশ ন্যাশানাল গ্রিড থেকে আর বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় না। তাই বেশির ভাগ হোটেল জেনারেটর ও সৌরশক্তির উপর নির্ভরশীল।