তালিবানদের সামনে এখন গোটা আফগানিস্তান। হাতে রয়েছে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। তবু সব কিছু হাতে থাকা সত্ত্বেও সরকার গঠনের প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাচ্ছে কেন ? ফের তারিখ বদল কে ঘিরে ঘনিয়েছে রহস্য। উঠছে নানা প্রশ্ন।
তালিবানিরা ভয় পাচ্ছে বিরোধী জোটকে
আসলে বহু সংগঠন এবং তার নেতৃত্ব এখন থেকেই তালিবানদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে দিয়েছে। সংঘর্ষের হুমকি দিচ্ছে তালিবান বিরোধীরা। আলাদা আলাদা সংগঠনের সর্দাররা। তালিবানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং প্রতিবাদের জোয়ালামুখী খুলে দিয়েছেন তাঁরা। সম্মুখ সমরে তালিবানদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন।তালিকায় বহু নাম শামিল। আর এখানেই কপালে ভাঁজ ফেলেছে তালিবানদের।
তালিবানিদের বিরুদ্ধে জোট বাঁধছে একাধিক সংগঠন
এর আগে দেশীয় বিদ্রোহীদের কাছ থেকে তেমন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কিন্তু দীর্ঘ কুড়ি বছর আমেরিকার সৈন্যের নিরাপত্তায় আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষ যে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল, তালিবানদের জোর-জুলুমের মধ্যে থাকতে রাজি নয়। হয় মৃত্যু, নয় স্বাধীনতা। এই নীতিতেই তালিবানদের বিরুদ্ধে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।
২-৩ দিনের মধ্যে গঠন হবে সরকার !
এদিকে আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের গঠন এর কেন পিছিয়ে গেল, তা নিয়ে তালিবানের এক আধিকারিকের বক্তব্য পাওয়া গিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে সরকারের গঠন ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে করা হবে। এরই মধ্যে তালিবানদের তরফ-এ দাবি করা হয়েছে। তারা পঞ্জশির করে নিয়েছেন। আর পুরো আফগানিস্তান এখন তাদের হাতের মুঠোয়। সেখানে সরকারে কারা শামিল হয়েছেন, তাদের নাম এখনও পরিষ্কার করা হয়নি।
কেন "তারিখ পে তারিখ" বদলে যাচ্ছে ?
এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর নতুন সরকার গঠনের দাবি করা হয়েছিল। এর মধ্যে ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তালিবানদের হাতে যখন সব কিছুই রয়েছে, তাহলে সরকার বানাতে তাদের তারিখের পর তারিখ কেন বদলাতে হচ্ছে। আসলে সিংহাসন হাসিল করতে এসে তারা এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে আফগানিস্তানের মানুষের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দখল নিতে পারেনি। তাদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিস্ফোরণ সংগঠিত করা হচ্ছে। তা তারা খুব বুঝতে পেরেছেন।
কাদের দেখে ভয় পাচ্ছে তালিবান ?
বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা তাদের বিরুদ্ধে মোর্চা তৈরি করতে শুরু করেছেন। সেই কারণেই তারা এখনও পর্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। কারা কারা তাদের স্থানে তালিবানদের বিরোধী নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আসুন দেখে নিই। কাদের ভয়ে কাঁপছে তালিবানরা।
১) মহম্মদ আতা নূর - তালিবান বিরোধী এবং ভারতের বন্ধু এবং সহযোগী বলে জানা যায়। নূরের বক্তব্য ভারতকে কাবুলে তালেবানের সঙ্গে কথাবার্তা এর ভূমিকা নেওয়া উচিত।
২) আব্দুর রশিদ দোস্তম - টার্কির রাষ্ট্রপতির খুব নিকটের বলে পরিচিত। যেখানে দোস্তম নিজেও আফগানিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। নিজেও রাশিয়ার রাষ্ট্রপতিরও কাছাকাছি তিনি। সম্পর্ক রেখে চলেন। তবে পাকিস্তানকে পছন্দ করেন না।
৩) ইসমাইল খান - পশ্চিম আফগানিস্থানের প্রভাবশালী নেতা। আপাতত কাবুলে রয়েছেন। তালিবান এবং গনি সরকারের মুখ্য বিরোধী ছিলেন। তিনি ভারতের সাথে ইসমাইল খানের ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
৪) আব্দুল রাব সেয়ক - তালিবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নর্দান অ্যালায়েন্সের সাথে রয়েছেন তিনি। পাকিস্তানের খুব কাছাকাছি হলেও তিনি ভারতকে বন্ধু মনে করেন।
৫) নামগুল আগা শেরজাই - আফগানিস্তানের নাঙ্গরহার এর প্রাক্তন গভর্নর ছিলেন। তিনি এখন তালিবান সরকারে জায়গা চান। যদি তিনি জায়গা না পান, পূর্ব আফগানিস্তান থেকে তালিবান সরকারের বিরোধিতা করবেন।
৬) আহমেদ মাসুদ - তালিবানদের বিরুদ্ধে চলতে থাকা লড়াইয়ের তিনি কমান্ডার। নর্দান অ্যালায়েন্সের অন্যতম নেতা। পঞ্জশিরে কব্জা করেছে বলে তালিবানদের যে দাবি, তা খারিজ করেছেন তিনি।
৭) আব্দুল গনি আলিপুর - হাজারা সমুদায়ের এই নেতা গনি আফগানিস্তানের বর্ষীয়ান নেতা এবং তালিবানদের ঘোর বিরোধী।
৮) মহম্মদ ইউসুফ - আফগানিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এবং বোরহানউদ্দিন রব্বানির সরকারের মন্ত্রী ছিলেন তিনি।
৯) করিম খলিলি - আফগানিস্তানের বড় নেতা। তিনিও হাজারা সমুদায়ের সঙ্গে যুক্ত। তিনি এখন পাকিস্তানে বসে রয়েছেন।