২০২১-এর জুলাই। ক্রেমলিনের ওয়েবসাইটে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের (Vladimir Putin) একটি আর্টিকল প্রকাশিত হয়েছিল। ইউক্রেনে রাশিয়া (Russia-Ukraine Conflict) ঠিক কী চায়, ওই আর্টিকল থেকে খানিক মালুম হয়।
আরও পড়ুন: Russia Ukraine Crisis: ইউক্রেন নিয়ে ঘোষণা করে বিপাকে পুতিন? মার্কিন তত্পরতা শুরু
কী লেখা ছিল ওই আর্টিকল-এ? পুতিন ওই প্রবন্ধে রাশিয়ান ও ইউক্রেনিয়ানদের এক জাতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়নের (ইউএসএসআর) (Soviet Union) পতনকে ঐতিহাসিক রাশিয়ার বিচ্ছিন্নতা' হিসাবে ঘোষণা করেন। পুতিনের বিশ্বাস, ইউক্রেনের নেতারা রাশিয়া বিরোধী প্রকল্প চালাচ্ছে।
রাশিয়াকে বাদ দিলে ইউক্রেন ইউরোপের বৃহত্তম দেশ। ভ্লাদিমির পুতিনের অধীনে রাশিয়া ইউক্রেনের দিকে নজর রেখে চলেছে বহু দিন ধরেই। ইতিমধ্যে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের একটি উপদ্বীপ ক্রিমিয়াকে যুক্ত করেছে।
ইউক্রেনের পরিস্থিতি
আমেরিকা, ব্রিটেন সহ গোটা পশ্চিমি দুনিয়া চিন্তায় রয়েছে, পুতিন যে কোনও মুহূর্তে রুশ সেনাকে ইউক্রেনে প্রবেশে নির্দেশ দিতে পারেন। বস্তুত, রাশিয়াতেও ইউক্রেনকে সমর্থন করেন, এমন বহু মানুষ রয়েছেন। বিশেষ করে দক্ষিণ রাশিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা সব সময়ই চান, রুশভাষীদের একটি পৃথক দেশ হোক। ফলে, নিজের দেশেই ইউক্রেন দখলের সমর্থন রয়েছে পুতিনের কাছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট বলছে,ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রাশিয়া মিলিটারি ড্রিল বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তেই নয়, ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ বেলারুশেও রুশ সেনার গতিবিধি বাড়ছে।
ইউক্রেন সঙ্কটের কারণ কী?
ইউক্রেনের বর্তমান সঙ্কটের মূলে রয়েছে ন্যাটো (Nato) সম্প্রসারণে রাশিয়ার অসম্মতি। সেই ১৯৯০ সাল থেকেই ন্যাটোর সম্প্রসারণকে রাশিয়া ভাল চোখে দেখে না। কারণ, ন্যাটো ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যের ঠান্ডা যুদ্ধ দীর্ঘ ৪৫ বছরের।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ১৯৪৫ সালের পর থেকেই পশ্চিমি দুনিয়া রাশিয়াকে ইউরোপে সবচেয়ে বড় সামরিক হামলা চালানোর জন্য অভিযুক্ত করেছে। রাশিয়া বরাবরই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেছে এসেছে।
যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জল্পনার মধ্যেই ফ্রান্স হঠাত্ ঘোষণা করল, ইউক্রেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছেন।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, যদি রাশিয়া ইউক্রেনে ঢোকে, তা হলে রাশিয়ান ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে আমেরিকা। মোদ্দা বিষয়, রাশিয়ার উপরে অর্থনৈতিক আঘাত হানবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৈরি।
পুতিন তাঁর গোটা রাজনৈতিক জীবনে ন্যাটোর সম্প্রসারণের বিরোধিতা করে গিয়েছেন। এখনও বিরোধী। রাশিয়া চায় না, ইউক্রেন মার্কিন শাসিত ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে চলে যাক। পুতিনের প্রাথমিক অভিযোগটাই হল, ন্যাটো ইউক্রেনকে হাতের মুঠোয় নিতে চাইছে। ইউক্রেন ৩০টি দেশভূক্ত ন্যাটোতে যোগ দেবে না, পশ্চিমি দেশগুলির কাছে এই বিষয়ে সম্পূর্ণ আশ্বাস চাইছেন পুতিন।
ইউক্রেনে রাশিয়া ও বিচ্ছিন্নতাবাদ
সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রাক্তন সদস্য ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন খুবই গভীর। কিন্তু অর্থনৈতিক ও ভৌগলিক রাজনীতির দিক থেকে ইউক্রেনের ঝোঁক উন্নত পশ্চিমি দেশগুলির দিকেই বেশি। রাশিয়ার বক্তব্য, ইউক্রেনের বেশির ভাগ মানুষই রুশ ভাষায় কথা বলে। রাশিয়ার প্রতি তাদের একটা সফ্ট কর্নার রয়েছে।
পুতিনের বক্তব্য, রাশিয়া দীর্ঘ সময় ধরে ধৈর্য ধরেছিল। ২০১৪ সালে যখন ইউক্রেনীয়রা তাদের রুশপন্থী প্রেসিডেন্টকে পদচ্যুত করেছিল তখন তাদের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটে। ক্রিমিয়া দখল করে জবাব দেয় রাশিয়া। পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন জোগাতে শুরু করে। ইউক্রেনের সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষে ১৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
ন্যাটোকে ঠেকিয়ে রাশিয়া কী চায়?
পশ্চিমি দেশগুলির থেকে রাশিয়া আইনত বাধ্যতামূলক অঙ্গীকার চায় যে ন্যাটোকে এই অঞ্চলে আরও সম্প্রসারণ করা হবে না। রাশিয়ার বক্তব্য, ইউক্রেন কখনওই ন্যাটোর সদস্য হবে না। এ বিষয়ে তাদের নিশ্চিত করতে হবে। রাশিয়ার আরও দাবি,ন্যাটো রাশিয়ার সীমান্তের কাছে অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারবে না ন্যাটো। যার নির্যাস, মধ্য ইউরোপ, পূর্ব ইউরোপ এবং বাল্টিক অঞ্চল থেকে ন্যাটোর সামরিক ভাবে পিছু হঠে যাওয়া।
এমন একটা জয়ও পুতিনকে উপহার দিতে রাজি নয় পশ্চিমি দুনিয়া। অতঃপর...