জিম্বাবোয়ের ১৩ বছরের কিশোরী ভার্জিনিয়া মাবুঙ্গা ৩ মাসের এক শিশুর মা। তার সারাদিন কুয়ো থেকে জল ভরা, রাস্তার ধারে ফল ও সবজি বিক্রি করা, খাবার তৈরি, কাপড় ধোয়া ও সাফাই কাজেই অতিবাহিত হয়। এই সমস্ত কাজের মাঝে নিজের ছোট ৪ ভাইবোনকেও স্কুলের জন্য তৈরি করে সে। আবার তার স্কুল থেকে ফিরলে হোমওয়ার্কেও সাহায্য করে। ভাইবোনকে হোমওয়ার্কে সাহায্য করাটাই তাকে সবচেয়ে যন্ত্রণা দেয়, কারণ ভার্জিনিয়ার নিজের বয়স ১৩, এবং এই সময় তারই স্কুলে পড়া উচিত। কিন্তু এখন এটাই তার জীবন। প্রসঙ্গত, করোনাকালে জিম্বাবুয়ে সহ দক্ষিণ আফ্রিকার আরও দেশে মেয়েদের কম বয়সে গর্ভবতী হওয়ার ঘটনা বেড়েছে। ভার্জিনিয়াও তাদেরই একজন। দীর্ঘ সময় ধরেই জিম্বাবোয়েতে বাল্যবিবাহ ও অল্পবয়সে মেয়েদের গর্ভবতী হওয়ার ঘটনা বড় সমস্যা হিসেবে উঠে এসেছে।
আফ্রিকায় কম বয়সে গর্ভবতী হওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি
কোভিড ১৯-এর আগেও সেখানে প্রতি তিনজন মেয়ের মধ্যে একজনের বিয়ে ১৮ বছরের নিচে দিয়ে দেওয়া হত। এর বেশকিছু কারণ ছিল। যেমন, মেয়েরা গর্ভবতী হয়ে পড়া, বাল্যবিবাহ রোধে কঠিন আইন না থাকা, দারিদ্র্য, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় প্রথা। তারমধ্যে করোনা পরিস্থিতিতে আরও জটিল করে তুলেছে। ২০২০ সালে দেশে কড়া লকডাউন জারি করা হয়েছিল। আর সেই লকডাউনের খুবই খারাপ প্রভাব পড়ে মেয়েদের ওপরে। তাদের গর্ভ নিরোধক ওষুধ ও হাসপাতালের পরিষেবা দেওয়া হয়নি। এই বিষয়ে আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, বহু মেয়ে যৌন শোষণের শিকার হয়।
আইনে পরিবর্তন আনে সরকার
দেশে কম বয়সে মেয়েদের গর্ভবতী হওয়ার ঘটনা দেখে ২০২০ সালে আইনে পরিবর্তন আনে সরকার। ফলে গর্ভবর্তী মেয়েদেরও স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু আইন পরিবর্তন করেও কার কোনও সুফল মেলেনি। কারণ তারপরেও স্কুলে যাচ্ছে না গর্ভবতী মেয়েরা। যেমন গর্ভবতী অবস্থায় ভার্জিনিয়াও স্কুলে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রতিবেশীরা এই নিয়ে খুব হাসাহাসি করে। কারণ সেখানকার লোকেরা স্কুল ইউনিফর্মে গর্ভবতী মেয়েকে দেখতে অভ্যস্ত ছিল না, যার শিকার হতে হয়েছিল ভার্জিনিয়াকে।
'তোমার পেটে কী হয়েছে?'
এই বিষয়ে ভার্জিনিয়া জানাচ্ছে যে সাবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো। কেউ কেউ জানতে চাইতো যে তার পেটে কী হয়েছে? এরপরেই সে আর স্কুলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং নিজের ইউনিফর্মটি ২ ডলারে বিক্রি করে দেয়, যাতে সেই অর্থ দিয়ে সে নিজের সন্তানের জন্য কাপড় ও অন্যান্য বস্তু কিনতে পারেন। ভার্জিনিয়া আরও জানাচ্ছে, যে ব্যক্তি তাকে গর্ভবতী করেছে সে বলেছিল বিয়ে করবে। কিন্তু পরে সে তা অস্বীকার করে এবং সন্তানের দেখভালের দায়িত্বও নেয় না। এমনকী তার বাবা-মাও ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা খুব বেশিদিন চালাননি। জিম্বাবোয়ের আইন অনুযায়ী ১৬ বছরের নিচে কোনও মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করলে অভিযুক্তের ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মামলা দায়ের হয় না।
পরিবারেই শোষিত হয় মেয়েরা
এই বিষয়ে পুলিশের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, বেশিরভাগ সময় নাবালিকাকেই বিয়েতে বাধ্য করা হয়, এবং তার পরিবার ধর্ষকের সঙ্গে সমঝোতা করে নেয়। এভাবে পরোক্ষে নাবালিকার পরিবারই তার শোষক হয়ে হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে গর্ভবতী হওয়ার জেরে কত নাবালিকা স্কুল ছেড়েছে তার কোনও সঠিক তথ্যও সরকারের কাছে নেই।
ভার্জিনিয়ার আশা
জানা গিয়েছে, ভার্জিনিয়ার বাবা-মা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা চালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অভিযুক্ত জামিনে মুক্ত হয়ে প্রতিশ্রুতি দেয় যে সে সন্তানের দেখভাল করবে। তাই তাঁরা মামলা ফিরিয়ে নেন। বর্তমানে বাবার কাছেই থাকে ভার্জিনিয়া। তার আশা, একদিন সে আবার স্কুলে যাবে।