প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দু'দিনের বাংলাদেশ সফরে সকলেরই নজর ছিল ওড়াকান্দির দিকে। সফরের প্রথম দিনে ঢাকাতেই ছিলেন মোদী। ওই দিন বিকেলে ঢাকার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বক্তব্য রাখেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে গান্ধী শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করেন। তবে বঙ্গ ভোটের আবহে মোদীর শনিবারের কর্মসূচির দিকেই সকলের বাড়তি নজর ছিল। যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে পুজো দিয়ে দিন শুরু করেন মোদী। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাও জানান। এরপরেই ওড়াকান্দিতে মতুয়াদের ঠাকুরবাড়িতে হাজিন হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে পুজোও দেন। জানান বহুবছর ধরেই এখানে আসার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরের সময়ই নাকি ওড়াকান্দি যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কাশিয়ানীতে মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান ওড়াকান্দি মন্দিরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। মতুয়া সম্প্রদায়ের মন্দিরে পুজোও দেন তিনি। বলেন, “আমার বিশ্বাস আছে, শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের আশীর্বাদে গুরুচাঁদ ঠাকুরের প্রেরণায় আমরা দুই দেশ একবিংশ শতকের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করব। ভারত এবং বাংলাদেশ উন্নতি ও প্রেমের পথে বিশ্বে পথপ্রদর্শন করতে থাকবে।”
মতুয়াবাদের প্রবক্তা হরিচাঁদ ঠাকুর ও তার ছেলে গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে পুজো দেওয়ার পরে বাংলাদেশের মতুয়া নেতাদের সঙ্গে বার্তালাপও করেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ এই স্থান ভারত ও বাংলাদেশের আত্মিক সম্পর্কের তীর্থস্থান। আজ শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের আশীর্বাদের এই পুন্যভূমিতে প্রণাম করার সৌভাগ্য হয়েছে। আমি মাথা নত করে প্রণাম জানাচ্ছি।” এরপরেই মোদী জানান এখানে বহুবছর ধরেই তাঁর আশার ইচ্ছে ছিল। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “এই দিনের এই পবিত্র মহূর্তের প্রতীক্ষা আমার বহু বছর ধরে ছিল। ২০১৫ সালে যখন আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার বাংলাদেশে আসি, তখনই আমি এখানে আসার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলাম। আমার সেই প্রত্যাশা-কামনা আজ পূর্ণ হল। আমি নিয়মতভাবে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুগামীদের থেকে ভালোবাসা ও স্নেহ পেয়েছি, পরিবারের সদস্যদের ঘনিষ্ঠতা পেয়েছি।"
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন যে আমার মনে আছে, আমি যখন পশ্চিমবঙ্গের ঠাকুরনগরে গিয়েছিলাম, তখন আমার মতুয়া ভাই-বোনরা আমাকে সেখানে পরিবারের সদস্য হিসাবে ভালোবাসা দিয়েছিলেন। বিশেষত, বড়মার স্নেহ, মায়ের মতো তাঁর আশীর্বাদ আমার জীবনের মূল্যবান মুহূর্ত। এরপরেই নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গের ঠাকুরনগর থেকে বাংলাদেশের ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত একইরকমের শ্রদ্ধা রয়েছে। একইরকমের আস্থা রয়েছে। একই রকমের অনুভূতি রয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন “আজ সব ভারতবাসীর সৌভাগ্য যে তারা এখানে বাংলাদেশে শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। ওড়াকান্দিতে শিক্ষার অভিযানে এখন থেকে ভারতের জনগণও যুক্ত হবে, ওড়াকান্দিতে মেয়েদের মিডল স্কুল আপগ্রেড করবে, নতুন নতুন সুবিধা প্রদান করবে। ভারত সরকার এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করবে। এটি ভারতের কোটি কোটি জনগণের পক্ষ থেকে শ্রী শ্রী হরিচাদ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ, তারা এ কাজে আমাদের সাথে রয়েছে।”
ওড়াকান্দিতে মোদী আরও বলেন, “আজ ভারত এবং বাংলাদেশের সামনে যে ধরণের একইরকম চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা সমাধানের জন্য শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুপ্রেরণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের একজোট হয়ে প্রত্যেকটি চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করা উচিত। এটি আমাদের কর্তব্য, দুই দেশের কোটি কোটি জনগণের কল্যাণের পথ।”
মতুয়া ভোট এবারের বাংলার নির্বাচনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ
মতুয়া মতবাদের প্রবক্তা হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান হল গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার ওড়াকান্দি। এই গ্রামের মন্দিরটি পরিচিত মতুয়া সম্প্রদায়ের কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদার তীর্থস্থান হিসেবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী এমন এক সময়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের মন্দিরে প্রার্থনা করেছেন যখন আজ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রথম পর্বের ভোটগ্রহণ চলছে। পশ্চিমবঙ্গে মতুয়া সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা প্রায় তিন কোটি। মতুয়া সম্প্রদায় পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ নির্নায়ক শক্তি। ভোটপর্বে মোদীর মতুয়াদের প্রধান তীর্থাস্থানে যাওয়া বাংলায় তাদের সুবিধা হবে বলেই মনে করছে গেরুয়া শিবির।