বাংলাদেশের রাজনীতি এখন উত্তাল মহম্মদ ইউনূসকে ঘিরে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই বলছেন, কাজ করতে পারছেন না। এর মধ্যেই ঢাকার শাহবাগে শনিবার ডাক দেওয়া হল ‘March for Yunus’-এর। এই কর্মসূচিকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে দেশজুড়ে। শাহবাগে যে পোস্টার লাগানো হয়েছে, তাতে স্পষ্ট লেখা— ‘ইউনূস থাকুক পাঁচ বছর’।‘আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন’।
‘নতুন ধরনের ক্ষমতার খেলা’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার মূলত অল্প সময়ের জন্য, যেন একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। কিন্তু এই শ্লোগান যেন সেই ধারণাকেই উল্টে দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, যিনি নিজেই বলছেন কাজ করতে পারছেন না, তাঁকেই আবার পাঁচ বছরের জন্য রাখার দাবি কেন? এই কর্মসূচিকে অনেকেই বলছেন, ‘নতুন ধরনের ক্ষমতার খেলা’। কেউ কেউ মনে করছেন, ইউনূস হয়তো এখন পদত্যাগের কথা বললেও, পিছনে কোনও শক্তি তাঁকে দীর্ঘমেয়াদী ভাবে ক্ষমতায় রাখতে চাইছে।
ইউনূস কি আদৌ দায়িত্ব নিতে এসেছিলেন?
অস্থির বাংলাদেশে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ছায়ার মতো চলেছেন মহম্মদ ইউনূস। এখন বলছেন, কাজ করতে পারছেন না। তাহলে প্রশ্ন, তিনি আদৌ দায়িত্ব নিতে এসেছিলেন, নাকি শুধুই খ্যাতির মোড়কে দায়িত্ব এড়াতে? সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তিনি বলছেন, ‘আমি যদি কাজ করতে না পারি, তাহলে এই পদে থাকব কেন?’ এই বক্তব্যে এক ধরনের নাটকীয়তা আছে। মুখে স্বীকার করছেন, কাজ করতে পারছেন না, অথচ পদত্যাগ করছেনও না। উল্টে, জাতির উদ্দেশে ভাষণের খসড়া তৈরি করছেন। নাকি নিজের ব্যর্থতা আগেভাগে ঝেড়ে ফেলার কৌশল? এই হতাশা কি নতুন? তিনি কি সত্যিই ভাবেননি, বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হবে না একদিনে?
প্রয়োজনে আরেকটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন
তিনি বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে মানুষ তাঁকে কৃতিত্ব দেবে না, কিন্তু খারাপ হলে দায় দেবেই। সুতরাং তিনি এখন সেই দায় এড়াতে চান? নেতৃত্বের আসল পরীক্ষা তো সঙ্কটেই হয়। আর ইউনূস সে পরীক্ষায় নিজেকে সরিয়ে রাখতে চাইছেন। জাতির উদ্দেশে ভাষণের কথা বলে আসলে তিনি কি শুধু দায় ঝেড়ে ফেলার অগ্রিম ব্যাখ্যা সাজাচ্ছেন? এদিকে রাজনীতির মাঠে প্রতিদিন দানা বাঁধছে উত্তাপ, ব্যালট ছিনতাইয়ের আশঙ্কা স্পষ্ট, আর ইউনূস একরকম ‘বাইস্ট্যান্ডার’ হয়ে তা দেখছেন। তিনি এখন বলছেন, প্রয়োজনে আরেকটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করুন। এই কথাটাই আসলে তাঁর ‘অব্যাহতি চাওয়ার’ কূটনৈতিক ভাষা।
রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য শুধু মনোবল নয়, দরকার সাহসিকতা। ইউনূস হয়তো মানবতার কথা বলতে পারেন, কিন্তু নেতৃত্বের দাবিতে তিনি এখনও দুর্বল। হয় নেতৃত্ব দিন, নয় সরুন—এই স্পষ্ট বার্তা তাঁকে এখন দেশের মানুষই দিচ্ছে।