Advertisement

Bangladesh : মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বাংলাদেশে চা-শ্রমিকদের আন্দোলন

মাধবপুর উপজেলার সুরমা ও তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের কয়েক হাজার শ্রমিক বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে পৌন এক ঘণ্টা মহাসড়কের জগদীশপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে অবরোধ করেন। পরে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন ও চুনারুঘাট মাধবপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহসিন আল মুরাদ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। অবরোধের জেরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় মহাসড়কে।

চা শ্রমিকদের আন্দোলনচা শ্রমিকদের আন্দোলন
শাহিদুল হাসান খোকন
  • বাংলাদেশ,
  • 18 Aug 2022,
  • अपडेटेड 10:28 PM IST
  • মজুরি বৃদ্ধির দাবি
  • আন্দোলন চা শ্রমিকদের
  • অবরোধ-বিক্ষোভ

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ গোটা বাংলাদেশের ২৪১টি চা-বাগানে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছেন বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের চা-শ্রমিকেরা। চা শ্রমিক আন্দোলনের ৬ষ্ঠ দিনে মাধবপুর উপজেলার সুরমা ও তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের কয়েক হাজার শ্রমিক ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে। চা শ্রমিক নেতা ও শ্রম অধিদফতরের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে কোনও সমাধান সূত্র না মেলায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়য়ারি দিয়ে পথ অবরোধ করে শ্রমিকরা।

মাধবপুর উপজেলার সুরমা ও তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের কয়েক হাজার শ্রমিক বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে পৌন এক ঘণ্টা মহাসড়কের জগদীশপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে অবরোধ করেন। পরে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন ও চুনারুঘাট মাধবপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহসিন আল মুরাদ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। অবরোধের জেরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় মহাসড়কে।

কেন আন্দোলন?
দৈনিক ১২০ টাকা মুজুরিতে চা বাগানে কাজ করছে শ্রমিকরা। ঊর্ধ্বমুখী দ্রব্যমুল্যের এই বাজারে ১২০ টাকায় একজন চা শ্রমিকের সংসার চলে না। চা শ্রমিকদের দাবি, এই টাকা দিয়ে সবজি, মাছ, তেল, লবণ, ডাল, সাবান, চিকিৎসা ব্যয়, পোশাক, প্রসাধনী, ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ সবই করতে হয়। চা শ্রমিকরা আরও অভিযোগ, তাঁদের শ্রম শোষন করে চা বিদেশে রপ্তানী ও দেশে বিক্রি করে টাকার পাহাড় গড়ছেন চা কোম্পানীগুলোর মালিকরা। এই স্বল্প পারিশ্রমিকে তাঁধের পরিবারের লোকজনদের কষ্টের জীবন কাটলেও তাদের শ্রম শোষনকারি চা কোম্পানির মালিকদের পরিবার বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন। চা শ্রমিকরা দৈনিক ১২০ টাকা মুজুরির বদলে ৩০০ টাকা মুজুরি দাবি করে আসছেন অনেক দিন ধরেই। কিন্তু মালিক পক্ষ এ বিষয়ে কর্ণপাত  না করায় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে তাঁদের মজুরি ১৭০  টাকা করা।

আরও পড়ুন

সিলেট থেকে শুরু আন্দোলন
পাতা তোলার মরশুমে দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে সাময়িক কর্মবিরতির পর এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে গিয়েছেন লাখ লাখ চা শ্রমিক। এতে বাগান অচল হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সিলেট ভ্যালির ২৩টি, হবিগঞ্জের ২৪টি এবং মৌলভীবাজারের ৯২টি বাগানসহ মোট ২৪১টি চা বাগানের শ্রমিক একযোগে এ ধর্মঘট শুরু করেন তাঁরা। এই সময় শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে বাগানের বিভিন্ন সেকশনে মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শ্রমিকরা এই কর্মসূচি পালন করছেন। এর আগে ৯ অগাস্ট থেকে প্রতিদিন দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা। 

Advertisement
চা শ্রমিকদের আন্দোলন

অনির্দিষ্টকালের আন্দোলন
সারা দেশে চলমান চা-শ্রমিকদের অর্নিদিষ্টকালের ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালি, লংলা ভ্যালি, মনু-ধলাই ভ্যালি, জুড়ি ভ্যালি, লস্করপুর ভ্যালি, সিলেট ভ্যালি, চট্টগ্রাম ভ্যালিতে আলাদাভাবে চা-বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, বুধবার ঢাকায় শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশিয় চা সংসদ ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রিপাক্ষিক সভায় মালিক পক্ষ শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছিল এবং চলমান ধর্মঘট প্রত্যাহার করার কথা বলেছিল। শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালককে বলা হয়েছিল, মাঠপর্যায়ে শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। আজ সারা দেশের ৭টি ভ্যালির সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করা হয়েছে। কেউ এই প্রস্তাবে রাজি নন। কেন্দ্রীয় কমিটি সব বিষয় বিবেচনা করে মালিকপক্ষের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। 

তিনি আরও বলেন, যে কর্মসূচিগুলো আছে সেগুলি অব্যাহত রাখা হবে। সাধারণ চা-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করা হচ্ছে যাতে তিনি এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে শ্রমিকদের ন্যায্যমজুরি ও ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন করেন। নিপেন পাল বলেন, আগামী ২৩ আগস্ট ঢাকায় আরও একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে। সেখানে তাঁরা অংশ নেবেন। বর্তমানে শ্রমিকরা নিজ নিজ চা-বাগানে ধর্মঘট পালন করবেন। 

এদিকে বৃহস্পতিবার ধর্মঘটের ৮ম দিন দেশের বিভিন্ন চা-বাগানে শ্রমিকদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় চা বাগানের বাইরে অবস্থান করেন শ্রমিকরা। এর আগে ১০ অগাস্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করার পর, ১৩ অগাস্ট থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য  ধর্মঘটের ডাক দেন বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন।

বৃহস্পতিবার সকালে শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা-বাগানে আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি আদায়ের বিষয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। সমাবেশে উপস্থিত থাকা মহিলা চা-শ্রমিক উষা রানি বলেন, 'আমাদের দুঃখ কেউ বোঝে না। আমরা চার দিন কর্মবিরতি করেছি। কিন্তু কেউ আমাদের এসে আশ্বাস দিল না। আমরা এত কষ্ট করে কাজ করি, কিন্তু আমাদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হয় না। চাল, ডাল, তেল—সবকিছুর দাম বেড়েছে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ আছে। অসুখ হলে চিকিৎসা করাতে হয়। এর মধ্যে প্রতিদিনই জিনিসের দাম বাড়ছে।' শুক্রবারের মধ্যে মজুরি বৃদ্ধির দাবি মেনে নেওয়া না হলে মহাসড়কে অবস্থানের পাশাপাশি বিক্ষোভের ঘোষণাও করেছেন আন্দোলনরত চা-শ্রমিকেরা।


 

Read more!
Advertisement
Advertisement