অনেকের মতে তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা। অনেকের মতে তিনি নারীতে আসক্ত ছিলেন। অনেকে তাঁর মধ্যে মহান দার্শনিককে দেখেছিলেন। তিনি স্যর চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন। যিনি সারা বিশ্বে চার্লি চ্যাপলিন নামেই বিখ্যাত। তাঁর অভিনয় করা ১০০ বছর আগেকার সিনেমা আজও চোখের পলক না ফেলে দেখেন দর্শকরা। প্রকৃত অর্থে কিং অফ কমেডি যদি কেউ থাকেন, তবে তা চার্লি চ্যাপলিন ছাড়া আর কেউ নন। শুধু অভিনেতা নন, পরিচালক, সঙ্গীত পরিচালক, সম্পাদক, প্রযোজক হিসাবেও খ্যাতির শিখরে উঠেছিলেন তিনি। তাঁর তাঁর জন্মদিনে জেনে নিন তাঁর জীবনের কিছু হাসি-কান্না মেশানো তথ্য।
১৯১৫ সালে চার্লি চ্যাপলিনকে সবচেয়ে ভালো কে নকল করতে পারেন নিয়ে একটি প্রতিযোগিতা হয়। চ্যাপলিন নিজেই ছদ্মবেশে সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। আশ্চর্যজনক ভাবে সেই প্রতিযোগিতায় তিনি তৃতীয় স্থান পেয়েছিলেন।
মাত্র ৮ বছর বয়সে মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন চার্লি। তাঁর বাবা-মা দুজনেই মঞ্চাভিনেতা ছিলেন। মা হানা ভালো গানও করতেন। চার্লির যখন ৫ বছর বয়স সে সময় একটি অনুষ্ঠানে তাঁর মায়ের গলার স্বর হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায়। দর্শকরা তখন অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে পড়েন। উড়ে আসে নানা কুমন্তব্য। মাকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে জ্যাক জোনস গানটি গেয়ে ওঠেন চার্লি। মঞ্চে একটি শিশুকে এই গানটি করতে দেখে দর্শকরা পয়সার বৃষ্টি করেন স্টেজের উপর। সেটাই চার্লি চ্যাপলিনের প্রথম রোজগার ছিল।
প্রায় ৪০ বছর আমেরিকাতে থাকলেও তিনি কখনই মার্কিন নাগরিকত্ব পাননি। তাঁর মডার্ণ টাইমস ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর তিনি কম্যুনিজম এর সমর্থক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৫২ সালে চ্যাপলিন যখন ছুটি কাটাতে নিজের ইংল্যান্ড যান, তখন মার্কিন সরকার তাঁর আমেরিকায় ফেরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ক্ষোভে দুঃখে তার পর থেকে তিনি কোনও দিন আমেরিকায় পা রাখেননি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাটিয়েছেন সুইৎজারল্যান্ডে।
পর্দায় তাঁর অভিনয় জীবন শুরু হয় বারো বছর বয়সে। ‘দ্য ফোর্থ গ্যারিডেব — নুমিসম্যাটিক্স অফ শার্লক হোমস’ চলচ্চিত্রে বিলি-র চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, যা সে সময় বেশ প্রশংসিত হয়।
বিশ্বের প্রথম অভিনেতা হিসেবে চার্লি চ্যাপলিন ১৯২৫ সালের জুলাই মাসে টাইম ম্যাগাজিনের সংখ্যার প্রচ্ছদের মুখ হয়েছিলেন।
সঙ্গীতে কখনও কোনও তালিম নেননি চ্যাপলিন। তা সত্ত্বেও তাঁর অসংখ্য চলচ্চিত্রে নিজেই সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। ১৯৫২ সালে লাইমলাইট ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনার জন্য অস্কার পান।
বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন। চ্যাপলিন তাঁর ছবি সিটি লাইটস-এর মুক্তি উপলক্ষে আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানান প্রিমিয়ারে। তাঁদের এক সঙ্গে দেখে উপস্থিত জনতা পাগল প্রায় অবস্থা। এটা দেখে আইনস্টাইনকে চার্লি বলেন, ‘এঁরা আমাদের দুজনকে দেখেই উল্লাসিত। কারণ কেউ আপনার বৈজ্ঞানিক মেধার কিছুই বোঝে না, আর সবাই দাবি করে যে আমার সব কিছু বোঝে।’
চার্লি চ্যাপলিন তার কর্মজীবনে কমপক্ষে দশজন নারীর সঙ্গে জটিল সম্পর্কে জড়িয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকটি সম্পর্কের পরিণতি ছিল ভয়াবহ। সম্পর্কের বিচ্ছেদ নিয়ে মামলা হয়, যা তাঁর চরিত্র এবং খ্যাতিকে অনেকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। জীবনের চারবার বিয়ে করেন। ১১ সন্তানের পিতা ছিলেন। ৪৪ বছর বয়সে চতুর্থ বিয়ে করেন উওনা চ্যাপলিনকে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁরা এক সঙ্গে ছিলেন।
চরম পারফেকশনিস্ট হিসাবে কুখ্যাতি এবং সুখ্যাতি দুইই ছিল চার্লি চ্যাপলিনের। চার্লি পরিচালিত সিটি লাইটস ছবিতে ভার্জিনিয়া শেরিলের একটি সংলাপ পছন্দ না হওয়ায় বার বার রিপিট করতে বলেন। অবশেষে ৩৪২তম বারে গিয়ে চার্লির সেই সংলাপ বলা পছন্দ হয়!
তার সর্বপ্রথম সন্তান মাত্র তিনদিন জীবিত ছিল। সন্তানের মৃত্যুর দু বছর পর মুক্তি পায় ‘দ্য কিড’ ছবিটি। যেখানে দারিদ্র্য, বাবা-মা’র বিচ্ছেদ ও এক শিশুর অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তোলা হয়। অনেকেই বলেন, ছোটবেলার স্ট্রাগল এবং সন্তান হারানোর বেদনা থেকেই অনুপ্রেরণা নিয়ে এই ছবিটি তৈরি করেন চার্লি।