গায়ক জুবিন (Zubeen Garg) নেই, এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না অসমের মানুষ। মৃত্যুর পর প্রায় ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও শোক কাটছে না উত্তরপূর্বের মানুষের।
রবিবার সকালে অসমের গুয়াহাটি বিমানবন্দরে পৌঁছয় জুবিন গর্গের দেহ। শনিবার রাত থেকেই অল্পস্বল্প ভিড় জমেছিল রাস্তায়। তবে এত সংখ্যক মানুষ যে প্রিয় গায়ককে শ্রদ্ধা জানাতে রাস্তায় নামবে, তা বোধহয় আন্দাজ করতে পারেনি অসম প্রশাসনও।
বিমানবন্দর থেকে শিল্পী জুবিনের বাড়ির দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। এই পথে লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়ো হয়। তারা হাঁটতে থাকে জুবিনের শেষযাত্রায়।
আট থেকে আশি, কেউ বাদ ছিল না। সবার চোখ মুখ শুকনো, কেউ কেউ তো দূর থেকে প্রিয় জুবিনদাকে দেখে কেঁদেই ফেলল।
এদিন বিমানবন্দরে জুবিনের স্ত্রী গরিমা দেহ গ্রহণ করেন। স্বামীকে কফিনে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। কফিনটি বুকে জড়িয়ে ধরেন।
স্বামীকে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান গরিমা। কফিনে রেখে দেন একটি অসমীয়া গামছা। বিমানবন্দরের কর্মীদের চোখও জলে ভিজে যায়। রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা আগে থেকেই হাজির ছিলেন বিমানবন্দরে। ফুল দিয়ে তাঁরা শেষ শ্রদ্ধা জানান।
বিমানবন্দর থেকে দেহ বের করে তা তোলা হয় অ্যাম্বুলেন্সে। অ্যাম্বুলেন্স প্রধান সড়কে নামা মাত্রই দেখা পাওয়া যায় ভিড়ের। তখন রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ। একবার দূর থেকে দেখার চেষ্টা প্রিয় গায়ককে।
সমবেক কণ্ঠে স্লোগান ওঠে 'জয় জুবিন দা'। তার মাঝেই চলছে রাজ্যের কিংবদন্তি গায়কের দেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সে অহরহ ফুল বর্ষণ।
আর শিল্পীর প্রতি এতটা শ্রদ্ধা দেখানোর কারণও আছে। প্রায় তিন দশকে ৪০টি ভাষা ও উপভাষায় ৩৮ হাজারেরও বেশি গান করেছেন জুবিন। তালিকায় আছে হিন্দি, বাংলা, অসমীয়াও।
শেষকৃত্য কখন হবে তা এখনও জানানো হয়নি সরকারের তরফে। তবে শিল্পীর কাহিলিপাড়ার বাসভবনে রবিবার দেহ প্রায় দেড় ঘণ্টা রাখা হবে। পরিবারের সদস্যরা সেখানে থাকবেন।
সোমবারও দেহ থাকার কথা অর্জুন ভোগেশ্বর বরুয়া স্পোর্টস কমপ্লেক্সে। সকাল সাতটায় দেহ নিয়ে যাওয়া হবে সেখানে।
সিঙ্গাপুরে নর্থইস্ট ফেস্টিভ্যালে যোগ দিতে গিয়েছিলেন জুবিন। ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠানে তাঁর গান পরিবেশনের কথা ছিল। কিন্তু অনুষ্ঠানের আগের দিনই ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে জুবিন, প্রথমে এমনটা শোনা গেলেও পরে জানা যায়, লাইফ জ্যাকেট ছাড়া সাঁতার কাটার সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
এই তথ্য সামনে এনে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছিলেন, লাইফ জ্যাকেট ছাড়া সাঁতার কাটতে গিয়ে মৃত্যু হয় জুবিনের। সেই সময় জুবিনের সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, সিঙ্গাপুরের স্থানীয় প্রশাসন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে।