'আনন্দ' সিনেমায় রাজেশ খন্নার চরিত্র বলেছিল,'বাবুমশাই জিন্দেগি বড়ি হোনি চাহিয়ে লম্বি নেহি।' যার কাছাকাছি বাংলা মর্মার্থ,'দীর্ঘায়ু নয় জীবন প্রাণবন্ত হওয়া দরকার।' ঐন্দ্রিলার ছোট্ট ২৪ বছরের জীবনও যেন সেই দিলখোলা বাঁচার লড়াই। স্বপ্নপূরণের লড়াই। অবশেষে হাল না ছাড়া নাছোড় লড়াই থামল। হাসপাতালের শয্য়ায় ২৪ বছরের মেয়ের জীবন-মরণ লড়াই কয়েক দিন ধরে আলোড়ন ফেলেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আনন্দের সঙ্গে যেমন নিজেকে একাত্ম করে ফেলেছিলেন বাবুমশাই তেমনই নেটিজেনরাও তাঁর সঙ্গে নিজেদের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছিল। তাই তো ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর পর হাহাকার নেট মাধ্যমে। যেন আপন কেউ হারিয়ে গেল। আসলে মানসিক জোরটুকুই তো এ মেয়ের সম্বল। দু'বার মারণ রোগ ক্যানসারকে হারিয়ে ফিরে এসেছেন। মৃত্যুকে হারিয়ে অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্নপূরণ করেছিলেন। তবে তৃতীয়বার আর মিরাকল হল না!
১৯৯৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে জন্ম ঐন্দ্রিলার। আর পাঁচটা মেয়ের মতো তাঁর যৌবন কাটেনি। ২০১৫ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি ১৭ বছরের কিশোরী ঐন্দ্রিলার জানতে পারলেন, তাঁর শরীরের অস্থিমজ্জায় ক্যানসার হয়েছে। সেই শুরু হল তাঁর লড়াই। তখন তিনি একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। ওই বয়সে বড় হওয়ার লক্ষ্য থাকে চোখেমুখে। ঐন্দ্রিলারও স্বপ্ন ছিল অভিনেত্রী হওয়ার। সে স্বপ্ন কি তবে পূরণ হবে না?
দিল্লিতে শুরু হল ঐন্দ্রিলার লড়াই। পরপর কেমোথেরাপি। সেই সঙ্গে ওষুধ। হাঁটার ক্ষমতা নেই। হইলচেয়ারই তাঁর ভরসা হয়ে উঠল। কেমোর জন্য মাথার চুল,ভ্রু নেই। চিকিৎসকরা সময় দিয়েছিলেন ৬ মাস। তবে হার মানেননি কিশোরী। স্বপ্ন যে পূরণ করবেন। তার পর দেড় বছর পর ২০১৬ সালে ক্যানসারমুক্ত হন ইন্দ্রিলা।
সুস্থ হওয়ার পর অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্নপূরণের পথে নেমে পড়েন ঐন্দ্রিলা। ২০১৭ সালে ছোট পর্দায় অভিষেক হল। ঠিক পড়েছেন। সালটা ২০১৭-ই। ক্যানসারমুক্ত হওয়ার এক বছর পরেই নেমে পড়েছিলেন স্বপ্নপূরণের রাস্তায়। অনেকেই এই পরিস্থিতিতে আশাহত হয়ে বাড়িতে বসে থাকতেন। তবে ঐন্দ্রিলা সেই গোত্রের নন। ‘ঝুমুর’ধারাবাহিকে অভিষিক্ত হন। সেই ধারাবাহিকের সময় থেকে তাঁর সঙ্গে সব্যসাচীর দেখা। শুরু বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বই আরও গাঢ় হল।
আবার তাল কাটল ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেম দিবসের উদযাপন করার কথা ছিল সব্যসাচী ও ঐন্দ্রিলার। কিন্তু তা আর হয়নি। ডান হাত থেকে ঘাড় পর্যন্ত অসম্ভব যন্ত্রণা শুরু হয়। ফুসফুসে ১৫ সেন্টিমিটারের একটি টিউমার ধরা পড়ে। আবার শুরু লড়াই। ২০২২ সালে আবারও যুদ্ধজয়। সর্বক্ষণ তাঁর পাশে থেকেছেন সব্যসাচী চৌধুরী। নেট মাধ্যমে আপডেট দিয়ে গিয়েছেন। এখান থেকেই নেট মাধ্যমের চর্চার বিষয় হয়েছিল- সব্যসাচী-ঐন্দ্রিলার অকৃত্রিম প্রেমযাপন।
দ্বিতীয়বার ফেরার পর 'ভাগাড়' নামে ওয়েব সিরিজে অভিনয়ও করেন। আরও একটি ওয়েবসিরিজে কাজ করার কথা ছিল। গোয়ায় শ্যুটিং। আবারও ধাক্কা। তবে এবার আর ফেরা হল না। ছবির আনন্দের মতোই বিদায় নিলেন ঐন্দ্রিলা।