তাঁকে হাসতে দেখা গেছে, তাঁকে গাইতে শোনা গেছে। একান্ত মনের মানুষটিকে কাছে পেতে তাঁর ফেরারী মন যেমন কখনও কখনও কোনও বাধা মানেনি, তেমনই সেই তিনিই আবার নিজের অপরাধের জন্য প্রিয় মানুষটির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন ও বুকের সমস্ত কষ্ট দূরে সরিয়ে বদলে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন। তাঁর কণ্ঠ আর গিটারে ভর করেই বাংলা রক মিউজিক পেয়েছে নতুন এক দিশা। তিনি আইয়ুব বাচ্চু (Ayub Bachchu)। শুধু ওপার বাংলার বা বাংলাদেশ নয়, পশ্চিমবঙ্গের শ্রোতাদের কাছেও তিনি সমান জনপ্রিয়।
জন্মদিনে উপহার পান গিটার
১৯৬২ সালের ১৬ অগাস্ট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশের (Bangladesh) এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম আইয়ুব বাচ্চুর। নিজের ১১ তম জন্মদিনে বাবার কাছ থেকে একটি গিটার উপহার পান তিনি। ব্যাস, সেই থেকেই বোধ হয় গিটারের সঙ্গে নিজের সুর মিলিয়ে নেন বাচ্চু। জেকব ডায়াজ নামে এক বার্মিজ ব্যক্তির কাছে গিটার শেখা শুরু করেন তিনি। প্রথম থেকেই পাশ্চাত্য রক মিউজিকের প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল তাঁর। যত বড় হয়েছেন ততই ডুবে থেকেছেন পশ্চিমী নোটেশানে। তবে সবার মধ্যে জিমি হেনড্রিক্সের গিটার বাজনায় সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হন তিনি। শোনা যায় একটা সময় এক বন্ধুর ইলেকট্রিক গিটার ধার নিয়ে বাজাতেন বাচ্চু। পরবর্তী সময়ে গিটারটির প্রতি বাচ্চুর আগ্রহ ও ভালবাসা দেখে তাঁর বন্ধু তাঁকে সেটি দিয়ে দেন।
আইয়ুব বাচ্চু-জেমস একসঙ্গে
এলআরবি আইয়ুব বাচ্চুকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে গেলেও জীবনে আরও বেশকিছু ব্যন্ডের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন তিনি। কলেজ জীবনে সহপাঠীদের নিয়ে তৈরি করেন ব্যান্ড, নাম দেন 'গোল্ডেন বয়েজ'। পরে সেই ব্যান্ডের নাম বদলে হয় 'আগলি বয়েজ'। এরপর বাচ্চু যোগ দেন 'ফিলিংস'-এ। সেই ব্যান্ডে বাংলাদেশের অপর এক জনপ্রিয় শিল্পী জেমসের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। শোনা যায়, বাচ্চুকে একটি চায়ের দোকানে গিটার বাজাতে দেখেছিলেন জেমস। বাচ্চুর বাজনা জেমসের (James) এতটাই ভাল লেগে যায় যে সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁকে ফিলিং-এ যোগ দিতে বলেন। জেমসের কথায় রাজি হয়ে ফিলিংস-এ যোগ দেন বাচ্চু। সেখানে কয়েকবছর গানবাজনা করার পর 'সোলস' নামে অপর একটি ব্যান্ডে যোগ দেন তিনি। সেখানে প্রায় এক দশক কাজ করার পর ১৯৯১ সালে নিজের 'লিটল রিভার ব্য়ান্ড' গড়ে তোলেন বাচ্চু। পরবর্তী কালে অবশ্য 'লাভ রানস ব্লাইন্ড' বা 'এলআরবি' (LRB) নামে বিপুল খ্যাতি অর্জন করে সেই ব্যান্ড।
একক অ্যালবামে আধুনিক গানের ছোঁয়া
ব্যান্ডের সঙ্গে কাজের বাইরে একক শিল্পী হিসেবেও অনেক গান গেয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। নিজে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের অনুরাগী হলেও অদ্ভূতভাবে তাঁর একক অ্যালবামগুলির কিছু ট্র্যাকে বাংলা আধুনিকগানের প্রভাব দেখা গিয়েছে। আর এভাবেই কণ্ঠ ও গিটারের ফ্রেটবোর্ডে আঙ্গুলের জাদুতে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি শ্রোত-দর্শকের মন জয় করেছেন তিনি। কিন্তু এহেন রকস্টারকে খুব বেশিদিন পেলেন না তাঁর ভক্তরা। ২০১৮ সালে আজকের দিনে মাত্র ৫৬ বছর বয়সেই 'রূপালী গিটার' (Rupali Guitar) ছেড়ে চলে গেলেন আইয়ুব বাচ্চু।
আরও পড়ুন - চোখ-মুখহীন প্রাণীর সন্ধান গভীর সমুদ্রে, এলিয়েন নাকি? দেখুন