ফের নক্ষত্রপতন। প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ী (Bappi Lahiri Passes Away)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। মঙ্গলবার রাতেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় তাঁর। 'অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ)' -তে আক্রান্ত হয়ে মুম্বইয়ের হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন 'ডিস্কো কিং' (Disco King)। কিংবদন্তী সুরকার- গায়কের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিল্পীমহল তথা সঙ্গীতপ্রেমীদের মধ্যে।
বাপ্পি লাহিড়ী ও ঊষা উত্থুপের একাধিক কালজয়ী গান আজও সুপারহিট। বুধবার সকালে এই মৃত্যু খবর শুনে রীতিমতো কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ঊষা উত্থুপ (Usha Uthup)। আজতক বাংলার তরফ থেকে তাঁকে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, "আমি কী বলব ওঁর সম্পর্কে...বাপ্পি দা সত্যিই একজন 'ডিস্কো কিং'। এই খবরটা শোনার পরে আমি মর্মাহত, বিশ্বাস হচ্ছে না এটা হয়েছে। আমি ওঁর সম্পর্কে কখনও বলতে পারব না 'ছিলেন'...উনি সব সময় 'আছেন' আমার জন্য। আমি প্রায় ৫০ বছর ধরে গান গাইছি, যার মধ্যে প্রায় ৪০ বছরের গানের কেরিয়ারে একটাও শো নেই, যেদিন 'রাম্বা হো' বা 'হরি ওম হরি' গাইনি। 'কই ইহা নাচে নাচে', 'উরি উরি বাবা'...এই গানগুলো সব সময় থাকে সেই তালিকায়। আমি বাপ্পি দা-এর জন্য বলব, 'তোমায় আমি ভালোবাসি, তোমায় আমি চাই'।"
ঊষা উত্থুপ আক্ষেপ করে বললেন, "আমায় মনে হয় না, বাপ্পি দা যোগ্য সম্মান পেয়েছেন। ওঁর সঙ্গে কত সুন্দর এবং স্পেশাল স্মৃতি রয়েছে। উনি একজন 'ট্রেন্ড সেটার' ছিলেন। 'রাম্বা হো' গানটা ইলেকট্রনিক মেশিন ব্যবহার করে উনি তৈরি করেছিলেন। আগে লোকেরা ডিস্কো মানে হাসতেন। উনি সেই ধারাণা পাল্টেছেন, যা এখনও জনপ্রিয়। আমাদের জুটি দারুণ ছিল।"
আরও পড়ুন: "এই শূন্যতা কোনও দিনও পূরণ হবে না!" 'গীতশ্রী'-র স্মরণে সঙ্গীতশিল্পীরা
শিল্পী যোগ করলেন, "বাপ্পি দা-এর সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছে কোভিডের আগে। কিন্তু তারপরে বহুবার ফোনেও যোগাযোগ করেছি। এমনকী আমায় বলেছিলেন দুটো গান করার জন্য। আমি সে সময় কলকাতা ছেড়ে মুম্বই যেতে পারিনি বলে, আমায় গানটা পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলেন, যাতে এখানেই রেকর্ড করে নিতে পারি। তখন আমি তাঁকে জানাই গানটা আমিই করতে চাই, অন্য কেউ যাতে না করে। বাপ্পি দা তখন বলেন, 'না অন্য কেউ করবে না আমরাই জুটিতে করব'..."
আরও পড়ুন: ওঁর সঙ্গে ছবিতে গান গেয়েছি, আরও একবার যেন মাতৃবিয়োগ হল: সৈকত মিত্র
প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গের ছেলে অলোকেশ লাহিড়ী পরে বাপ্পি লাহিড়ী নামে পরিচিত হয়। তাঁর অসামান্য প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রমে সর্বভারতীয় খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অবিস্মরণীয় সুরের জাদুতে শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন তিনি। হিন্দি,বাংলা ছাড়াও তেলুগু, তামিল, কন্নড় সহ একাধিক ভাষার গানে সুর দিয়ে, সকলের মননে তিনি রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ২০১২ সালে 'বিশেষ চলচ্চিত্র পুরস্কার', ২০১৫ সালে 'স্পেশাল লাইফ টাইম অ্যাওয়ার্ড, ২০১৬ সালে 'মহানায়ক সম্মান' ও ২০১৭ সালে 'বঙ্গবিভূষণ' সম্মান প্রদান করে।