বছরভর আপামর বাঙালি ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষে মুখিয়ে থাকেন, কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের (Kolkata International Film Festival / KIFF) দিকে। বুধবার থেকে শুরু ৩০ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (30th Kolkata International Film Festival)। এদিন ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে উদ্বোধন হল সিনেমার পার্বণের। অনুষ্ঠানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে হাজির ছিলেন চলচ্চিত্র জগতের তারকারা, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রতিনিধিরা এবং বিদেশী অতিথিরা।
অন্যবার নেতাজি ইন্ডোরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। তবে এবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয় ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে। ইন্ডাস্ট্রিতে জোর আলোচনা, কিছুটা হলেও অন্য বছরের থেকে জৌলুস কমেছে এবারের চলচ্চিত্র উৎসবের। মনে করা হচ্ছে, সম্প্রতি শহরের কিছু ঘটনাই দায়ী এর জন্য। আরজি কর কাণ্ড, ফেডারেশনের সঙ্গে পরিচালকদের সংঘাত সহ আরও বেশ কয়েকটি বিষয়ে, সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে মত বিরোধ ও দূরত্ব তৈরি হয় টলিপাড়ার অনেকের। এজন্যেই নাকি চলচ্চিত্র উৎসবে সামিল হচ্ছেন অনেক কম সংখ্যক টলি তারকা।
উদ্বোধন ও শেষ লগ্নে ঢেলে সাজানো হয়েছে অনুষ্ঠান। তবে এবছর আসেননি শাহরুখ খান, সলমন খান কিংবা অমিতাভ বচ্চনরা। আগে শোনা গিয়েছিল, অতিথি হয়ে উপস্থিত থাকবেন জাভেদ আখতার, শাবানা আজমিরা। তবে শেষমেশ তাঁদেরও দেখা মেলেনি। বি-টাউন সেলেবদের মধ্যে সামিল হয়েছিলেন শুধুমাত্র শত্রুঘ্ন সিনহা। এছাড়া মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং টলিপাড়ার কিছু তারকা। উদ্বোধনের দিন উৎসবে উপস্থিত থাকতে না পারলেও, ৬ ডিসেম্বর, শিশির মঞ্চের সেমিনারে হাজির থাকবেন বিদ্যা বালন।
গত কয়েক বছরে রীতিমতো চাঁদের হাট বসেছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে। তবে এবার কিছুটা অন্য চিত্র। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহান, তনুশ্রী চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তীর মতো তারকাদের এবার দেখা যায়নি। এবছর সঞ্চালনা করেন যিশু সেনগুপ্ত এবং জুন মালিয়া। এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সামিল হয়েছিলেন মাধবী মুখোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, মুনমুন সেন, সব্যসাচী চক্রবর্তী, দুলাল লাহিড়ী শতাব্দী রায়, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেব, রুক্মিণী মৈত্র, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, বনি সেনগুপ্ত, কৌশানী মুখোপাধ্যায় সহ আরও বেশ কিছু টলি তারকা।
'বাংলার মাটিতে বিশ্বের ছবি' এই থিমেই মূলত সেজে উঠবে নন্দন সহ অন্যান্য ভেন্যু। ৩০ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ফোকাস দেশ ফ্রান্স। কিছু কিংবদন্তি ফরাসি ছবি প্রদর্শিত হবে। এবারের উৎসবের থিম সং-এর ভাবনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এবং গানের কথা লিখেছেন ও গেয়েছেন নচিকেতা চক্রবর্তী। ৩০ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব হবে ৪ থেকে ১১ ডিসেম্বর অবধি। প্রতিবারের মতো এবছরও থাকছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উন্নতমানের চলচ্চিত্র। এবছর চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারপার্সন রূপে রয়েছেন গৌতম ঘোষ।
২০টি ভেন্যুতে প্রদর্শিত হবে প্রায় ১৭৫টি ছবি। গত বছরের মতো শহরের কিছু মাল্টিপ্লেক্স ও সিঙ্গেল স্ক্রিনে দেখা যাবে দেশ- বিদেশের ছবিগুলি। ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহ, নন্দন (১,২,৩), শিশির মঞ্চ, রবীন্দ্র সদন, নজরুল তীর্থ (১, ২), চলচ্চিত্র শতবর্ষ ভবন (রাধা স্টুডিও), রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবন, নবীনা, স্টার থিয়েটার, মেনকা, এসএসআর অজন্তা, এসএসআর গ্লোব সিনেমা, পিভিআর (মানি স্ক্যোয়ার), আইনক্স (মেট্রো), আইনক্স (কোয়েস্ট মল), আইনক্স (সাউথ সিটি মল) এবং নিউ এম্পায়ারে স্ক্রিনিং হবে ৩০ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ছবিগুলি।
৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শতবর্ষের শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো হবে তপন সিনহা, অরুন্ধতী দেবী, হরিসাধন দাশগুপ্ত, আক্কিনেনি নাগেশ্বর রাও, সেরগেই পারাজানভ, মার্লোন ব্র্যান্ডো এবং মার্সেলো মাস্ত্রোইয়ান্নি শতবর্ষ উদযাপন হবে চলচ্চিত্র উৎসবে। এছাড়াও গগনেন্দ্র প্রদর্শনশালায় তপন সিনহাকে নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, এবারের কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার ছায়া পড়েছে চলচ্চিত্র উৎসবেও। প্রতিবেশী দেশ- বাংলাদেশের কোনও ছবি প্রদর্শিত হবে না সিনেমার পার্বণে। জানা যাচ্ছে এবছর মাত্র একটি বাংলাদেশী ছবির আবেদন জমা পড়েছিল, কিন্তু তা প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়নি। এবছর ঢাকার শঙ্খ দাশগুপ্ত তাঁর 'ডিয়ার মালতি' ছবিটি পাঠিয়েছিলেন কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিযোগিতার জন্যে। যদিও ছবিটি ভারতের ৫৫ তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে।