সম্পূর্ণ নতুন ফরম্যাটে শুরু হয়েছে 'দিদি নম্বর ১' সিজন ৯। তারকা থেকে সাধারণ মানুষ, জীবনযুদ্ধে জয়ীদের গল্প শোনা যায় রচনা বন্দোপাধ্যায়ের গেম শো -এর এই মঞ্চে। এবার 'দিদি নম্বর ১'-এর বিশেষ পর্বে দেখা যাবে অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মাকে।
প্রায় এক বছরের বেশি সময় পরে শ্যুটিং ফ্লোরে, ক্যামেরার সামনে ঐন্দ্রিলা। মাঝের সময়টা কেটেছে জীবনযুদ্ধে। ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগের সঙ্গে, লড়াইয়ের অবসান ঘটিয়ে বর্তমানে অনেকটাই সুস্থ অভিনেত্রী। এতদিন পরে 'লাইট- ক্যামেরা-অ্যাকশন' -এর চেনা ছন্দে ফিরে দারুণ খুশি তিনি।
আজতক বাংলার তরফ থেকে ঐন্দ্রিলা শর্মাকে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বললেন, "উৎসাহিত ছিলাম, খুবই ভাল লাগছে। এতদিন পরে ক্যামেরার সামনে এসে খুব ভাল লাগছিল, দারুণ মজা করেছি।"
তিনি যোগ করলেন, "আমার শ্যুটিংটা ছিল সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ২ টো পর্যন্ত। তা সত্ত্বেও আমি এতটাই আনন্দে ছিলাম যে, ক্লান্তিবোধ হয়নি বা সেভাবে শরীর খারাপ লাগেনি। আমি বাড়ি থেকেই খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম। এছাড়া আমি যে ধরণের খাবার এখন খাই, ওখানে সে সব কিছু আনিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। তাই কোনও অসুবিধা হয়নি।"
গেম শো খেলতেও মজা করেছেন অভিনেত্রী। তাঁর কথায়, "অনেক দিন পর বেশ শপিং করলাম একটা রাউন্ডে। সেভাবে দৌড়াতে পারছিলাম না, যেহেতু এখনও সেই শক্তি নেই, মনে হয় পড়ে যাব। তাও এক জায়গায় দাঁড়িয়েই আমি ভাল করে জিনিসপত্র নিয়েছি। বেশ মজা হয়েছে।"
কিছুদিন আগেই কাছের মানুষদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। সেই অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, "২০১৯ -এর পর আমি ঘুরতে গেলাম। মাঝে টানা সিরিয়াল চলছিল, তারপর অসুস্থ হয়ে পড়লাম। আমাদের প্ল্যান ছিল যে, চিকিৎসা শেষ হওয়ার পরই ঘুরতে যাব।"
ঐন্দ্রিলা জানালেন, "আমরা চাইছিলাম কাছাকাছি কোথাও যেতে, যাতে কোনও সমস্যা হলে, তাড়াতাড়ি আবার ফিরে আসতে পারি। সেক্ষেত্রে প্রথমে ভেবেছিলাম দার্জিলিং যাব, কিন্তু সেখানের তাপমাত্রা দেখে লাটাগুড়িতে যাওয়া হল। সেখান থেকে লাভা, লোলেগাঁও, লাটাগুড়ি সেভেন পয়েন্ট, জঙ্গল সাফারি সব কিছুর অভিজ্ঞতা হল। বেশ ভাল লেগেছে।"
সব ঠিক থাকলে এবছরই অভিনয়ে ফিরছেন চান ঐন্দ্রিলা। তাঁর কথায়, "এখন আমি অনেকটা ফিট। এবার কাজে ফিরব ভেবেছি। দেখি কেমন কী অফার আসে...সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করব।"
বুধবার ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে একটি বিশেষ পোস্ট করেন তাঁর মনের মানুষ, অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরী। অভিনেত্রীর অসুস্থতা এবং 'দিদি নম্বর ১'-এর দুটো ছবি কোলাজ করে সব্যসাচী লেখেন, "প্রথম ছবিটি দিল্লির হাসপাতালে তোলা, কেমো শুরু হয় সেইদিন। ১ মার্চ, ২০২১। দ্বিতীয় ছবিটি গতকালের। ১ মার্চ, ২০২২। উপায় না থাকলে, হিমশীতল রাতে নিজের স্বপ্নগুলোকে ঝলসে তাপ পোয়াতে হয়। ভোরের আলো ফুটলে, ফের নতুন করে স্বপ্ন বুনতে হয়। নিজের স্বপ্নপোড়া গন্ধ যতদিন তোমার নাকে লেগে থাকবে, জানবে তুমি অপ্রতিরোধ্য। এভাবেই ফিরে আসা যায়।"
ঐন্দ্রিলার এই কঠিন লড়াইয়ে তাঁর সঙ্গে সব সময় ছায়াসঙ্গী হয়ে রয়েছেন সব্যসাচী চৌধুরী অর্থাৎ ছোটপর্দার 'বামাক্ষ্যাপা'। বিভিন্ন সময় তাঁর শারীরিক অবস্থার আপডেট মিলেছে সব্যসাচীর থেকেই।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের সরস্বতী পুজোর ঠিক আগের দিন কাঁধের ব্যথা শুরু হওয়ার পরই ঐন্দ্রিলার পরিবার আর দেরি করেননি। তড়িঘড়ি ফেব্রুয়ারি মাসেই ঐন্দ্রিলা ভর্তি হয়েছিলেন দিল্লির এক প্রাইভেট হাসপাতালে। সেখানে ফের ক্যান্সার ধরা পড়ে তাঁর। প্রথম কেমো নেওয়ার পর, নারী দিবসের দিন কাজে যোগ দিয়েছেন তিনি। কয়েকদিনের অন্তরে দ্বিতীয় ও তারপর তৃতীয় কেমো! প্রথমে লম্বা চুল কেটে একেবারে ছোট করেছিলেন, পরে সেটুকুও রাখেননি।
এর আগেও প্রায় ৭ বছর আগে ২০১৫ সালে শিরদাঁড়ার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। প্রায় দেড় বছর কঠিন লড়াইয়ের পর সুস্থ হয়েছিলেন তিনি। আবার সেই দুঃস্বপ্নের দিনগুলি ফিরে এসেছিল তাঁর জীবনে। এবার কাঁধে সাংঘাতিক ব্যথা হওয়ার পর একের পর এক টেস্ট করতে হয় তাঁকে। রাজধানীর হাসপাতালে তাঁর ডান দিকের ফুসফুসে টিউমার ধরা পড়ে।
একাধিকবার ঝুঁকিপূর্ণ সার্জারির পর চলে কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন। তবুও মুখের হাসি কখনও অমিল হতে দেখেননি কাছের মানুষেরা। উল্টে দাঁতে দাঁত চেপে আরও কঠিন লড়াই করে গিয়েছেন ঐন্দ্রিলা। বছরভর দীর্ঘ লড়াইয়ের পর, বর্ষশেষে হাসিমুখে দেখা যায় লড়াকু অভিনেত্রীকে। ২৯ ডিসেম্বর শেষ কেমোথেরাপি নেওয়ার পর, এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ।