যত দিন যাচ্ছে বাংলা ধারাবাহিকগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা যেন আরও বেড়ে চলেছে। আর সেই টক্কর আরও একধাপ বাড়ল, ১০ ফেব্রুয়ারি। বৃহস্পতিবার মানেই ছোট পর্দার কোন ধারাবাহিক কেমন স্কোর করছে, তার ফলাফল বেরানোর দিন। সামনে এসেছে বছরের ষষ্ঠ সপ্তাহের টিআরপি তালিকা। যা দেখে রীতিমতো চক্ষু ছানাবড়া ছোটপর্দার দর্শকদের।
দীর্ঘ সাতচল্লিশ সপ্তাহ পরে, শীর্ষ স্থানে মিলেনি জি বাংলার 'মিঠাই'-র। সেই স্থানে বাজিমাত করেছে প্রতিযোগী চ্যানেল স্টার জলসার 'গাঁটছড়া'। দারুণ স্কোর করে 'মিঠাই' -র স্থান নিয়েছে 'গাঁটছড়া'। প্রকাশ্যে আসা শেষ টিআরপি তালিকা অনুযায়ী, প্রথম স্থানে গাঁটছড়া পেয়েছে ১০.১।
অন্যদিকে মুখ থুবড়ে পড়েছে 'মোদক পরিবার'। পঞ্চম স্থানে 'মিঠাই' -র প্রাপ্তি ৯.২ রেটিং পয়েন্ট। বলাই বাহুল্য দু'ভাগ হয়ে গেছে ছোট পর্দার দর্শকেরা। কারও বেজায় মন খারাপ ও কেউ করছেন উদযাপন। আর সেই প্রমাণ মেলে, দুই ধারাবাহিকের ফ্যান পেজ থেকেই। কিন্তু কেন এই ব্যর্থতা? দোর গোড়ায় এসেও কেন হাফ সেঞ্চুরি হল না 'মিঠাই'-র?
নাচে -গানে পর্ব শেষ
হল্লা পার্টি বরাবরই নাচ -গান -আনন্দ করে। তবে সম্প্রতি 'মিঠাই'-তে সেই নাচ -গান যেন একটু বেড়ে গেছে। এমনকী অনেক ক্ষেত্রে গোটা পর্ব বা অর্ধেকের বেশি পর্ব শেষ হয়ে যাচ্ছে গোটা গানে। যেমন মিষ্টির হাব উদ্বোধন, সরস্বতী পুজো বিশেষ পর্বে তা দেখা যাচ্ছে। যা একেবারেই পছন্দ করছেন না দর্শকেরা।
'মিঠাই'-র নিজস্বতা হারানো
আগে মনে করা হত, অন্যান্য ধারাবাহিকের থেকে এই মেগা অনেকটাই আলাদা, তাই দর্শকেরা নিজেদের সঙ্গে তা মেলাতে পারতেন। তবে গল্পে বর্তমানে এমন কিছু মোড় এসেছে, তা গতানুগতিক ধারায় এগিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, মনে হয়েছে গল্পের গরু গাছে উঠছে।
হঠাৎ একাধিক চরিত্রের অনুপস্থিতি
এই ধারাবাহিকের অনেক অভিনেতাই এখন অন্যান্য প্রোজেক্ট নিইয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। ফলে হঠাৎ করেই, তাদের অনুপস্থিতি চোখে লাগার মতো। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গল্পের কোনও জায়গাতেই উচ্চারণ করা হয়নি তাদের নামও। যেমন দাদাই, ঠাম্মি বা অন্য কেউ আগে দৃশ্যে না থাকলে, গল্পে দেখান হত তারা কোথাও গিয়েছেন। কিছুদিন আগেই রিয়েল লাইফে পা ভেঙেছে নীপা অর্থাৎ ঐন্দ্রিলা সাহার, এজন্য দীর্ঘদিন তাঁকে দেখা যাচ্ছে ধারাবাহিকে। কিন্তু গল্পে একবারের জন্যও উল্লেখ করা হয়নি, তিনি কেন নেই।
পরিচালক পরিবর্তন
এটাই মূল কারণ বলে মনে করছেন অনেকেই। আগে 'মিঠাই' পরিচালনা করছেন রাজেন্দ্র প্রসাদ দাস। বর্তমানে তিনি ব্যস্ত 'পিলু' নিয়ে। তাই এখন এই মেগার বেশিরভাগটাই দেখছেন রূপক দে।
স্বল্প পরিসরে নতুন মোড়
প্রায় প্রতি সপ্তাহেই 'মিঠাই -তে দেখা যায় নতুন মোড়। তবে দর্শকদের অনেকই অভিযোগ জানাচ্ছেন, তা খুবই স্বপ পরিসরে হয়। কিছুক্ষেত্রে খুবই তাড়াহুড়োয় শেষ করা হয় সেই পর্বগুলি। উদাহরণস্বরূপ মিঠাইয়ের মায়ের মারা যাওয়া এবং সেই সংক্রান্ত পর্বগুলি খুব তাড়াতাড়ি দেখানো হয়েছে। মায়ের মৃত্যুর পর সেই শোকও একেবারে ভুলে আবার হাসিখুশি মিঠাইকে পছন্দ করছেন না এক সময়ের ফ্যানেরা।
চ্যানেল পরিবর্তন না করা
আরও একটি কারণ আছে এর পিছনে, বলে অনেকেই মনে করছেন। স্টার জলসায় ৭ টায় সম্প্রচারিত হয় 'গাঁটছড়া' এবং ৭.৩০ -র সময় সম্প্রচারিত হয় 'আলতা ফড়িং'। এই দুই মেগাই খুব পছন্দ করছেন দর্শকেরা। সেই প্রমাণ মিলেছে রেটিং চার্টে। মনে করা হচ্ছে, একই চ্যানেলে ভাল মেগাগুলি দেখে অনেকেই আর চ্যানেল পরিবর্তন করছেন না। 'মিঠাই'-র জায়গায় সেই সময় দেখছেন 'ধুলোকণা'।
তবে 'কাহানি মে ট্যুইস্ট' এনে শীর্ষ স্থানে ফিরে, আবার দর্শকদের সুখে- দুখে - মিষ্টিমুখে থাকতে পারবে কিনা মিঠাই', তা সময়ই বলবে।