শরীরে থাবা বসিয়েছে মারণ ক্যান্সার (Cancer)। তাও তিনি লড়ে যাচ্ছেন। কথা হচ্ছে জনপ্রিয় ধারাবাহিক 'জিয়ন কাঠি' (Jiyon Kathi)-র জাহ্নবী চ্যাটার্জী ওরফে ঐন্দ্রিলা শর্মাকে (Aindrila Sharma) নিয়ে। তবে এটা কোনও রিল লাইফের গল্প না। একেবারে রিয়েল লাইফের কঠিন বাস্তবের এক গল্প। তিনবার কেমো থেরাপির পরে, চলতি সপ্তাহে হবে ঝুঁকিপূর্ণ সার্জারি। তবুও কখনও অবসাদে ভোগেননি তিনি। মুখের হাসিও কখনও অমলিন হতে দেখেননি কাছের মানুষেরা। উল্টে দাঁতে দাঁত চেপে আরও কঠিন লড়াই করে যাচ্ছেন ঐন্দ্রিলা।
গত মার্চ মাসে দ্বিতীয় কেমো থেরাপি (Chemotherapy) নেওয়ার পরই চুলকে সাময়িক ভাবে বিদায় জানিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। সমাজের কাছে এক বার্তাও পৌঁছে দিয়েছিলেন এই সাহসী মেয়ে। জীবনে বাঁধা বিপত্তি অনেক। কিন্তু পাশে রয়েছে পরিবার ও কাছের কয়েকজন বন্ধু। যারা সর্বক্ষণ সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন তাঁকে। সেই বন্ধু তালিকায় সবার আগে যার নাম আসে, তিনি অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরী (Sabyasachi Chowdhury)।
প্রথমে সেভাবে প্রকাশ্যে না আনলেও পরে ঐন্দ্রিলা - সব্যসাচী, দু'জনের কেউই লুকোছাপা করেননি নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে। বরং নেটাগরিকরা সাক্ষী থেকেছেন তাঁদের বিভিন্ন মিষ্টি মুহূর্তের। কাছের মানুষটিকে সাহস যোগাত্ ঐন্দ্রিলা হাসপাতালে থাকাকালীন সব্যসাচীও গিয়েছিলেন দিল্লিতে। এরপর যে কোনও উৎসব হোক, কিংবা কারও পাশে দাঁড়ানো, মুখে হাসি নিয়ে নিজেদের সাধ্য মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা গেছে এই জুটিকে।
আরও পড়ুন: কেমন কাটছে লকডাউনের ঘরবন্দি জীবন? আজতক বাংলাকে সিক্রেট শেয়ার করলেন 'মিঠাই'
সামনেই সংকটজনক অস্ত্রোপচার হবে ঐন্দ্রিলার। আর তাঁর আগে একটি মানবিক পোস্ট করলেন ছোটপর্দার বামাক্ষ্যাপা - সব্যসাচী। তিনি লিখেছেন, "গত কয়েক মাসে অজস্র মানুষ আমার কাছে জানতে চেয়েছে ঐন্দ্রিলার কথা, ওর অনুমতি নিয়ে তাদের জন্যে লিখলাম। 13cms X 11cms X 9cms পারলে একবার স্কেল দিয়ে মেপে দেখো। এই মাপের একটা মাংসপিন্ড পাঁজরের ভেতর নিয়ে ফেব্রুয়ারী অবধি চুটিয়ে অভিনয় করেছে, ফাটিয়ে ঝগড়া করেছে, রীতিমতন দাপিয়ে বেরিয়েছে স্কুটি চালিয়ে। পাশে থেকেও একটিবারের জন্যে বুঝতেও পারিনি।"
সব্যসাচী আরও লেখেন, " গত চার মাস কেমোথেরাপি চলার পর টিউমারটা প্রায় অর্ধেক আয়তনে নেমে এসেছে। ওষুধ এবং খাদ্যের নিয়মানুবর্তিতা আর ওর শৃঙ্খলাবোধ থেকেই তা সম্ভবপর হয়েছে। এই সপ্তাহে ওর সার্জারি হবে এবং ডাক্তারের কথায় তা যথেষ্ট ক্রিটিক্যাল। আজ অবধি আমি ওকে অবসাদে ভুগতে দেখিনি, দাঁতে দাঁত চিপে সব কষ্ট সহ্য করতে দেখেছি। যদি আগের ছবিগুলো দেখে থাকো, তাহলেই দেখবে সব ছবিতেই ওর হাসিটা অটুট থাকে...।"
গত ফেব্রুয়ারিতে ঐন্দ্রিলা ভর্তি হয়েছিলেন দিল্লির এক বেসরকারি হাসপাতালে। প্রথম কেমো নেওয়ার পরই ফের নারী দিবসের দিনই কাজে যোগ দিয়েছেন তিনি। কয়েকদিনের অন্তরে দ্বিতীয় ও তারপর তৃতীয় কেমো! প্রথমে লম্বা চুল কেটে একেবারে ছোট করেছিলেন, ফের একেবারে সেটুকুও রাখেননি। ইন্সটাতে সেই ছবি পোস্ট করে অভিনেত্রী লিখেছেন, "চুলেই নারীর সৌন্দর্য , আর নয়।" সত্যিই সৌন্দর্যের যেন এক নতুন সংজ্ঞা। মুখের চেনা হাসি এবং দৃঢ় আত্মবিশ্বাস!
আরও পড়ুন: 'দ্য শো মাস্ট গো অন!" দ্বিতীয় কেমোর পর চুলকে বিদায় ঐন্দ্রিলার
এর আগেও প্রায় ৬ বছর আগে ২০১৫ শালে শিরদাঁড়ার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। প্রায় দেড় বছর কঠিন লড়াইয়ের পর সুস্থ হয়েছিলেন তিনি। আবার সেই দুঃস্বপ্নের দিনগুলি ফিরে এসেছে তাঁর জীবনে। এইবার কাঁধে সাংঘাতিক ব্যথা হওয়ার পর একের পর একটি পরীক্ষা করতে হয় তাঁকে। ফের উড়ে যান দিল্লিতে। রাজধানীর হাসপাতালে তাঁর ডান দিকের ফুসফুসে টিউমার ধরা পড়ে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে সেকথা জানিয়েছেন অভিনেত্রী নিজেই।
সরস্বতী পুজোর ঠিক আগের দিন কাঁধের ব্যথা শুরু হওয়ার পরই ঐন্দ্রিলার পরিবার আর দেরি করেননি। তড়িঘড়ি তাঁকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার পর ক্যান্সার ধরা পড়ে। প্রথম কেমো নিয়েই শহরে ফিরে আসেন তাঁরা। কিছুদিনের বিশ্রামের পরই ফের চেনা ও কাছের শ্যুটিং ফ্লোরে ঐন্দ্রিলা। সেখান থেকে মেকআপ করার ছবিও শেয়ার করেন তিনি। আর সেই পোস্টেই তাঁকে শুভেচ্ছা বার্তায় ভরিয়ে দিয়েছেন সকলে।
আরও পড়ুন: কেমো নিয়েই শ্যুটিং ফ্লোরে ক্যান্সারে আক্রান্ত ঐন্দ্রিলা! 'জিয়ন কাঠি'-র নায়িকাকে কুর্নিশ সকলের
ঐন্দ্রিলা যে কত মানুষের মনে লড়ে যাওয়ার সাহস যোগাচ্ছেন, তা তিনি হয়তো নিজেও জানেন না। ঐন্দ্রিলা যাতে খুব তাড়াতাড়ি একেবারে সুস্থ হয়ে ওঠেন এখন সেটাই তাঁর পরিবার-পরিজন ও অনুগামীদের প্রার্থনা। আজতক বাংলার তরফ থেকেও ঐন্দ্রিলা শর্মার জন্যে অনেক শুভ কামনা।