আজতক বাংলার তরফ থেকে যখন ঐন্দ্রিলাকে যোগাযোগ করা হল, তখন দ্বিতীয় কেমো চলছে তাঁর। ফোনের ওপাশ থেকে শান্ত - মিষ্টি গলায় উত্তর এল, "আমার এখন কেমো চলছে, বিকেলে করি?......" ।।
শরীরে থাবা বসিয়েছে মারণ ক্যান্সার (Cancer)। তাও তিনি লড়ে যাচ্ছেন। কথা হচ্ছে জনপ্রিয় ধারাবাহিক 'জিয়ন কাঠি' (Jiyon Kathi)-র জাহ্নবী চ্যাটার্জী ওরফে ঐন্দ্রিলা শর্মাকে (Aindrila Sharma) নিয়ে। তবে এটা কোনও রিল লাইফের গল্প না। একেবারে রিয়েল লাইফের কঠিন বাস্তবের এক গল্প। শুক্রবার দ্বিতীয় কেমো থেরাপি (Chemotherapy) নিলেন ঐন্দ্রিলা। এরপরই তিনি চুলকে বিদায় জানালেন সাময়িক ভাবে। সমাজের কাছে এক বার্তাও পৌঁছে দিলেন সাহসী এই মেয়ে।
গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন দিল্লির এক প্রাইভেট হাসপাতালে। প্রথম কেমো নেওয়ার পরই ফের নারী দিবসের দিনই কাজে যোগ দিয়েছেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। কয়েকদিনের অন্তরে দ্বিতীয় কেমো! প্রথমে লম্বা চুল কেটে একেবারে ছোট করেছিলেন, ফের একেবারে সেটুকুও রাখলেন না। ইন্সটাতে সেই ছবি পোস্ট করে অভিনেত্রী লিখেছেন, "চুলেই নারীর সৌন্দর্য , আর নয়।" সত্যিই সৌন্দর্যের যেন এক নতুন সংজ্ঞা। মুখের অমলিন হাসি এবং আত্মবিশ্বাস!
জীবনে বাঁধা বিপত্তি অনেক। কিন্তু পাশে রয়েছে পরিবার ও কাছের কয়েকজন বন্ধু। যারা সর্বক্ষণ সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন ঐন্দ্রিলার। কাছের বন্ধু পারমিতা সেনগুপ্তও প্রিয় বান্ধবীর জন্য চুলকে বিদায় জানালেন। সেই ছবিও পোস্ট করে অভিনেত্রী লিখেছেন, "কিছু বন্ধুত্ব এরকম ও হয়...আমি নির্বাক।"
ঐন্দ্রিলার খুব কাছের বন্ধু অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরী (Sabyasachi Chowdhury)। দুজনের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে প্রায়শই দেখা মেলে তাঁদের একসঙ্গে বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি। প্রিয় বন্ধুকে সাহস যোগাতে সব্যসাচীও গিয়েছিলেন দিল্লিতে। সেখান থেকে তিনিও শেয়ার করেছেন ঐন্দ্রিলার ছবি। বন্ধু কতটা সাহসী মেয়ে, তা বারবার প্রকাশ পেয়েছে তাঁর নানা পোস্টে। সব্যসাচী জনপ্রিয় পৌরাণিক ধারাবাহিক, 'মহাপীঠ তারাপীঠ'- এ বামাক্ষ্যাপা চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে জনপ্রিয়। এদিনও ঐন্দ্রিলার সঙ্গে ৫ মাস আগে ও পরের একটি ছবির কোলাজ শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, "৫ মাস কত পার্থক্য করতে পারে?- চুলের খারাপ দিন শেষ।"
এর আগেও প্রায় ৬ বছর আগে ২০১৫ শালে শিরদাঁড়ার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। প্রায় দেড় বছর কঠিন লড়াইয়ের পর সুস্থ হয়েছিলেন তিনি। আবার সেই দুঃস্বপ্নের দিনগুলি ফিরে এসেছে তাঁর জীবনে। এইবার কাঁধে সাংঘাতিক ব্যথা হওয়ার পর একের পর এক টেস্ট করতে হয় তাঁকে। ফের উড়ে যান দিল্লিতে।
রাজধানীর হাসপাতালে তাঁর ডান দিকের ফুসফুসে টিউমার ধরা পড়ে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে সেকথা জানিয়েছেন অভিনেত্রী নিজেই।
সরস্বতী পুজোর ঠিক আগের দিন কাঁধের ব্যথা শুরু হওয়ার পরই ঐন্দ্রিলার পরিবার আর দেরি করেননি। তড়িঘড়ি তাঁকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার পর ক্যান্সার ধরা পড়ে। প্রথম কেমো নিয়েই শহরে ফিরে আসেন তাঁরা। কিছুদিনের বিশ্রামের পরই ফের চেনা ও কাছের শ্যুটিং ফ্লোরে ঐন্দ্রিলা। সেখান থেকে মেকআপ করার ছবিও শেয়ার করেন তিনি। আর সেই পোস্টেই তাঁকে শুভেচ্ছা বার্তায় ভরিয়ে দিয়েছেন সকলে।
ঐন্দ্রিলা যে কত মানুষের মনে লড়ে যাওয়ার সাহস যোগাচ্ছেন, তা তিনি হয়তো নিজেও জানেন না। ঐন্দ্রিলা যাতে খুব তাড়াতাড়ি একেবারে সুস্থ হয়ে ওঠেন এখন সেটাই তাঁর সকল পরিবার-পরিজন, অনুগামীদের প্রার্থনা। আজতক বাংলার তরফ থেকেও ঐন্দ্রিলা শর্মার জন্যে অনেক শুভ কামনা।