বাংলার পাশাপাশি ওড়িয়া ও দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় তিন দশক ধরে দাপিয়ে কাজ করছেন অভিনেত্রী রচনা বন্দোপাধ্যায় (Rachana Banerjee)। বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দাতেও তিনি সমানভাবে জনপ্রিয়। তাঁর গেম শো-এর নতুন সিজন আসছে। এবারও সঞ্চালিকার দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। গেম শো -এর নতুন ফরম্যাট, ভ্যালেন্টাইনস ডে এবং সর্বপরি জীবন নিয়ে আজতক বাংলার সঙ্গে অপকট আড্ডা বাংলার 'দিদি নম্বর ১' (Didi No 1) -এর।
আজতক বাংলা: একেবারে অন্য রূপে আসছে 'দিদি নম্বর ১'। কী কী নতুন দেখা যাবে?
রচনা: সম্পূর্ণ ফরম্যাট পরিবর্তন হয়েছে। খেলা বা গানের রাউণ্ড, সেট সবটাই নতুন। সেই সঙ্গে প্রচুর উপহার পাওয়া যাবে।
প্রশ্ন: 'দিদি নম্বর ১' মানেই রচনা বন্দোপাধ্যায়! ভাল লাগে, না বাড়তি চাপ মনে হয়?
রচনা: একেবারেই না। ভীষণ ভাল লাগে। বাড়তি চাপ লাগে না, কারণ রোজ তো শ্যুট হয় না। তাই খুবই মজা পাই কাজটা করতে। আর আমার মনে হয়, সেটা না হলে এত বছর কোনও শো টানা যেত না।
প্রশ্ন: কখনও একঘেয়ে লাগেনি?
রচনা: যদি কাজটা একই মানুষদের সঙ্গে হত, তাহলে হয়তো একঘেয়েমি আসত। রোজই নতুন নতুন মহিলাদের সঙ্গে আলাপ হয়। তাঁদের ব্যাপারে এত কিছু জানতে পারি, জীবনের দৃষ্টিভঙ্গিই পাল্টে যায়।
প্রশ্ন: ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপনে মেতেছেন অনেকেই। আপনার কাছে এই দিনের গুরুত্ব কতটা?
রচনা: আমার কাছে ভ্যালেন্টাইনস ডে-এর কোনও গুরুত্ব নেই। ফাদার্স ডে, মাদার্স ডে, কিস ডে, এসব বিদেশী কোনও সংস্কৃতিই আমি মানি না। আমাদের ভারতবর্ষের অনেক সংস্কৃতি আছে।
প্রশ্ন: তাহলে কি সরস্বতী পুজোই বাঙালিদের ভ্যালেন্টাইনস ডে?
রচনা: (হেসে) সরস্বতী পুজোকে এখন সবাই ওভাবে ভাবছেন। কিন্তু এটা তো আসলে পুজোর দিন। যেহেতু স্কুল - কলেজে পুজো হয় এবং সবাই ঘোরাঘুরি করে, সেজন্যে সেটা হয়ে গেছে আমাদের ভ্যালেন্টাইনস ডে।
প্রশ্ন: প্রেমের জন্য তাহলে আলাদা কোনও দিনের প্রয়োজন নেই?
রচনা: একেবারেই প্রয়োজন হয় না। বাবা-মায়ের জন্য ফাদার্স ডে, মাদার্স ডে -এর যেমন কোনও মানে হয় না। কারণ রোজই তাঁদের দিন। আমি কখনই এই ধরণের সংস্কৃতির মানে বুঝি না, উদযাপনও করি না।
প্রশ্ন: ছেলে তো বড় হচ্ছে? সে মাদার্স ডে উদযাপন করতে চায় না?
রচনা: না। আমার ছেলে একেবারে অন্য রকম। ও নিজের দুনিয়ায় থাকে, নিজের মতো করে। এই যুগের ছেলে, তাদের থেকে এমনিতে কিছু না আশা করাই ভাল। আমি ওর থেকে কিছুই আশা করি না। আমার শুধু মনে হয়, নিজে রোজকার করো, নিজের মতো করে বাঁচো। সন্তানকে ভাল করে মানুষ করো, এটুকুই যথেষ্ট।
প্রশ্ন: আপনার সোশ্যাল মিডিয়া পেজে চোখ রাখলে বোঝা যায়, খুব পজিটিভ থাকতে ভালোবাসেন...
রচনা: সত্যিই আমি খুব পজিটিভ। কোনও জিনিসই আমার জীবনে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারে না। হয়তো আমি আমার জগৎটা সেভাবে তৈরি করে নিয়েছি। আর বাবা চলে যাওয়ার পর তো আরই কিছুই যায় আসে না।
প্রশ্ন: এখন কতটা সামলেছেন নিজেকে?
রচনা: এই শূন্যতা কখনই পূরণ হবে না। তবে নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছি। বাবা কষ্ট পাচ্ছিলেন খুব, তাই মেনে নিতেই হবে। আর তো কিছু করার নেই। আমি মানসিকভাবে খুবই স্ট্রং। আর গত ১০ বছরে 'দিদি নম্বর ১' করে, সেখান থেকেই অনেকটা শক্তিশালী হয়েছি।
প্রশ্ন: অভিনয়ের পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করায় কটাক্ষের মুখোমুখি হতে হয়েছিল আপনাকে। ট্রোলিং কি একটা সামাজিক অসুখ?
রচনা: (হেসে) হ্যাঁ বলা যায়। সোশ্যাল মিডিয়া আসার পর মানুষের কাছে অনেক সুযোগ বেড়ে গেছে। যে যা পাচ্ছে কমেন্ট করছে। তবে কে কী বলল, তা নিয়ে আমি ভাবি না। আমি বিশ্বাস করি, যতদিন পারবে নিচের কাজটা করে যাও। রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে দশ জন চেঁচাবেই। সেগুলো শুনলে হবে না, কান বন্ধ করে জীবনে এগিয়ে যেতে হবে।
প্রশ্ন: জীবনটা কীভাবে গুছিয়ে নিয়েছেন?
রচনা: আমি কারও উপর নির্ভরশীল নই। আমার একটা বাড়ি আছে, আমার কাছে যেটুকু আছে ডাল -ভাত খেয়ে, সারা জীবন সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারব। কারও কাছে হাত পাতার নেই, কারও থেকে কাজ পাওয়ার জন্য কিছু বলার নেই।
প্রশ্ন: এটা কী এত বছরের অভিজ্ঞতার ফল?
রচনা: একদম! এত কম বয়স থেকে কাজ করতে করতে, দুনিয়ে দেখতে দেখতে। নিজের এই জায়গাটা আমি নিজে তৈরি করেছি।
প্রশ্ন: বড় পর্দাকে মিস করেন?
রচনা: না! আমি খুব খুশি আছি। বড় পর্দায় ফেরার কোনও ইচ্ছে নেই।
প্রশ্ন: আর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম?
রচনা: এখন ওটিটি-তে অনেকে কাজ করছে। কিন্তু আসলে আমার সে সময়টা নেই এখন। আমি কোনও জিনিসকেই না বলি না। কখনও হয়তো করতে পারি। তবে একটা সময় এত ছবি করেছি। সিনেমা করার সেই আগ্রহটাই আর নেই। প্রচুর কাজ করেছি, আরও করব...তবে আমি একটু শান্তিতে ও আরামে থাকতে চাই।