প্রায় দীর্ঘ ৪০ দিন ধরে হাসপাতালে কঠিন লড়াইয়ের পর জীবনযুদ্ধে হার মানেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মৃত্যর পর কেটে গেছে প্রায় দু'মাস। বাংলার চলচ্চিত্র থেকে সংস্কৃতিক জগৎ হারিয়েছে তাদের বটবৃক্ষকে।
১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি কলকাতার শিয়ালদহ রেল স্টেশনের কাছে মির্জাপুর স্ট্রিটে (বর্তমানে সূর্য সেন স্ট্রিট) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর প্রথম জীবনের দশ বছর পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরে কেটেছে। আজ বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ৮৬ তম জন্মদিন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ করেছিলেন সৌমিত্র। ছাত্র থাকাকালীন তিনি বাংলা থিয়েটারের খ্যাতনামা অভিনেতা-পরিচালক অহিন্দ্র চৌধুরীর অধীনে অভিনয় শিখেছিলেন।
তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওতে ঘোষক হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন। সেখানে থাকাকালীন চলচ্চিত্র জগতে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন।
সত্যজিৎ রায় সেই সময়ে নতুন মুখের সন্ধান করছিলেন 'অপরাজিতা' (১৯৫6) -র জন্যে। সৌমিত্র তখন রায়ের সংস্পর্শে আসেন। তার দু'বছর পরে তিনি সত্যজিৎ রায়ের থেকে প্রাপ্তবয়স্ক অপুর চরিত্রে অভিনয় করার অফার করে।
সৌমিত্র, সত্যজিৎ রায় ছাড়াও মৃণাল সেন এবং তপন সিনহার মতো কিংবদন্তি পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছিলেন। মৃণাল সেনের 'আকাশ কুসুম' (১৯৬৫) -তে তাঁর অভিনয় যথেষ্ট চর্চিত।
মহানায়ক উত্তম কুমারকে কঠিন চ্যালেঞ্জ দিয়ে তপন সিনহার 'ঝিন্দের বন্দি' (১৯৬১)- তে ঘোড়ায় চড়ার দৃশ্য খলনায়কের ভূকিমায় অভিনয় করে সকলের আত্মবিশ্বাস জিতেছিলেন।
কার্তিক চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত 'নীলাচলে মহাপ্রভু' (১৯৫৭) বাংলা ছবির জন্যে তাঁর স্ক্রিন টেস্টে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার, একবার দাদাসাহেব ফালকে পুরষ্কার ছাড়াও পেয়েছেন একাধিক পুরষ্কার। এছাড়াও ভারত সরকার এই কিংবদন্তি শিল্পী পদ্মভূষণ সম্মান দিয়েছিলেন।
আজতক বাংলা-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁর মেয়ে বাবার স্মৃতিচারণ করে জানান, "বাবার খুব ভাল সেন্স অফ হিউমার ছিল। এছাড়া সবার প্রতি ওঁর খুব স্নেহ ছিল। আমার প্রতি, আমার ছেলে মেয়ের প্রতি, দাদার প্রতি...(আবেগপ্রবণ গলায়) আমাদের সবাইকে খুব ভালোবাসতেন। সব সময় আমাদের সঙ্গে থাকতেন। আমার ছেলে মেয়েদের স্নান করানো, স্কুলে পৌঁছে দেওয়া, দাদার সঙ্গে কবিতা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা করা, আমার নাচের প্র্যাকটিস দেখা... যখন আমি নাটক পরিচালনা করতাম বসে বসে দেখতেন। কিন্তু কখনও হস্তক্ষেপ করতেন না। ' কালমৃগয়া', 'ফেরা', ' ঘটক বিদায়' এই তিনটি নাটকে আমার পরিচালনায় উনি অভিনয় করেছিলেন। পরিচালক হিসেবে আমি যা বলেছি উনি তাই শুনেছেন। আমি এমন একজনকে হারালাম, যিনি হয়তো আমার সবচেয়ে কাছের...."
KIFF-এ উদ্বোধনী ছবি হিসাবে রবীন্দ্র সদনে দেখানো হয়েছে ‘অপুর সংসার’(Apur Sangsar)। এছাড়াও তাঁর প্রথম জীবন, কাজ, মঞ্চ, কবিতা, ছবি এবং বিভিন্ন শিল্পকর্মগুলি প্রদর্শিত হয়েছে। শিশির মঞ্চে ছিল বর্ষীয়ান অভিনেতার রেট্রোস্পেকটিভ।
সেলুলয়েডে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় 'ফেলুদা' মোটে দুবার। 'সোনার কেল্লা' এবং 'জয় বাবা ফেলুনাথ'। তাতেই জনপ্রিয়তায় হার মানিয়েছেন অনেককেই। তিনি অমর থাকবেন বাঙালি ও চলচ্চিত্র প্রেমীদের মননে।