Advertisement

Aparajito Movie: এ যেন সত্যিই 'অপরাজিত'! পর্দায় জিতু, নাকি স্বয়ং সত্যজিৎ?

Aparajito: কিছুটা কাকতালীয় মনে হলেও, এমনটাই ঘটেছিল 'অপরাজিত'-র শ্যুটিংয়ের সময়। নানা বাধা পেরিয়ে অবশেষে ১৩ মে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল এছবি। ক্রমে বাড়ছে শো সংখ্যা, বাঙালির মুখে মুখে ফিরছে এই ছবির নাম। ফিল্ম রিভিউ না, আজ শেয়ার করি ছবি দেখে হওয়া নিজের কিছু অনুভূতি। 

 'অপরাজিত' ছবিতে সত্যজিৎ রায় রূপে জিতু কমল 'অপরাজিত' ছবিতে সত্যজিৎ রায় রূপে জিতু কমল
সৌমিতা চৌধুরী
  • কলকাতা ,
  • 17 May 2022,
  • अपडेटेड 10:47 PM IST

১৯৫২ সালের ৩ নভেম্বর, জীবনের প্রথম ছবির শ্যুট করবে ভেবে এক ঢ্যাঙা সিনেমাপাগল ছেলে, চারজন নবীন অথচ অদম্য জেদী যুবক মিলে বোরালের এক কাশবনের লোকেশনে গেলেন। রেকি করার সময় সব ঠিক ছিল। কিন্তু সমস্যা হল শ্যুটিংয়ের দিন গিয়ে। গরুতে সব কাশফুল খেয়ে নিয়েছে। এবার উপায়? অগত্যা সেভাবেই সামলাতে হল সবটা। পাঁচের দশকের এই ঘটনা থেকে কাট টু, বর্তমান সময়... 

একই ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি। আগের দিন রাতে দেখে আসা বড় বড় কাশফুল, পরের দিন সকালে ভ্যানিস। কারণ, সারা রাতব্যাপী নিরবিচ্ছিন্ন বৃষ্টি। কিছুটা কাকতালীয় মনে হলেও, এমনটাই ঘটেছিল 'অপরাজিত' (Aparajito)-র শ্যুটিংয়ের সময়। নানা বাধা পেরিয়ে অবশেষে ১৩ মে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল এছবি। ক্রমে বাড়ছে শো সংখ্যা, বাঙালির মুখে মুখে ফিরছে এই ছবির নাম। ফিল্ম রিভিউ (Aparajito Movie Review) না, আজ শেয়ার করি ছবি দেখে হওয়া নিজের কিছু অনুভূতি। 

অল ইন্ডিয়া রেডিওতে প্রথম ছবি বানানোর নেপথ্য কাহিনী শেয়ার করছেন অপরাজিত রায়। একের পর এক প্রশ্নবাণ ছুঁড়ে দিচ্ছেন প্রশ্নকর্তা, ঠাণ্ডা মাথায়, মুখে হালকা হাসি নিয়ে স্মৃতিচারণ করছেন অপরাজিত। বিজ্ঞাপনের ইলাস্ট্রেটর হিসাবে কর্মরত অপরাজিত কীভাবে তার ছবি বানানোর স্বপ্নপূরণ করেছিলেন... না, শুধু পূরণ করেছিলেন বললে ভুল হবে, বিশ্বের দরবারে পৌঁছেছিলেন সেই কাহিনী ফুটে উঠল পর্দায়। 

আরও পড়ুন

অপু -দুর্গা রূপে মানিক -উমার, কাশবনের মধ্যে দিয়ে প্রথম ট্রেন দেখে সেই দৌড়, ভাই -বোনের বৃষ্টিতে ভেজা, হাড়ি বোঝাই করে মিষ্টিওয়ালার গ্রামের রাস্তা দিয়ে মিষ্টি নিয়ে যাওয়া এবং জলে তার প্রতিচ্ছবি, চুনিবালা দেবী রূপে ননীবালা দেবীর মৃত্যু এই সব রিক্রিয়েশন দেখে মনে হল, যেন 'দেজা ভু' (অর্থাৎ এরকম ঘটনা আগেও ঘটেছে, এক্ষেত্রে এই দৃশ্যগুলো আগেও দেখেছি মনে হওয়া) হচ্ছে। সেই তালিকায় আছে সর্বজয়া কিংবা হরিহর রূপে সর্বমঙ্গলা ও হরিমাধব এবং সর্বপরি বোরাল রূপে সড়াল গ্রাম।    

Advertisement

  

শিরোনামে 'অপরাজিত'! এবার আসা যাক এই সাফল্যের সম্ভাব্য কিছু কারণে। মুক্তির আগে থেকে দর্শকদের হলমুখী করতে যার কৃতিত্ব মনে করানোর মতো, তিনি হলেন ইন্ডাস্ট্রির প্রস্থেটিক ম্যাজিশিয়ান- মেকআপ আর্টিস্ট সোমনাথ কুণ্ডু (Somnath Kundu)। যার কারণেই সত্যজিৎ রায় রূপে জিতু কমলের (Jeetu Kamal) লুক সামনে আসার পর থেকেই, আলোচনায় আসতে শুরু করে এই ছবি। এরপর আসা যাক ছবির দৃশ্যায়নে। সাদা-কালো ফ্রেম ধরতে সুপ্রতীম ভোল কতটা পারদর্শী, তা তিনি আবারও প্রমাণ করলেন এছবিতে। 'অপরাজিত' সাফল্যে, দেবজ্যোতি মিশ্রের আবহ সঙ্গীত এবং অর্ঘ্যকমল মিশ্রের সম্পাদনা প্রশংসার দাবি রাখে। 

এবার আসা যাক অভিনেতাদের কথায়। জিতু কমল প্রমাণ করলেন যে তিনি,  'লম্বা রেসের ঘোড়া'। অন্য আরেক প্রথম সারির অভিনেতার সঙ্গে সমস্যা হওয়ায়, তাঁকে কাস্টিং করা কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল, তা এখন বুঝতে পারছেন নির্মাতারা। বড় পর্দায় জিতুকে দেখলে নিজের চোখকে বিশ্বাস করা মুশকিল হয়ে পড়বে অনেক সময়ই। এটা কি সত্যিই জিতু? নাকি স্বয়ং সত্যজিৎ? এই প্রশ্ন বারবার মনে জেগেছে তাঁর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে। সেই স্টাইল, সেই চাহনি, হাতে সিগারেট ধরার ধরন, ম্যানারিজম সব এতটাই নিখুঁত যে, জিতু কমলের খাটনি, নিষ্ঠা ও অভিনয়ের প্রতি প্যাশন পর্দায় ফুটে উঠেছে।    

 

      

পর্দার অপরাজিতর গলার স্বর শুনেও বারবার মনে পড়বে 'মানিক বাবুর' (Satyajit Ray) কথা। এক্ষেত্রে যিনি কৃতিত্বের দাবিদার তিনি হলেন চন্দ্রাশিস রায়। জিতুর দারুণ অভিনয়ের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে চন্দ্রাশিসের ডাবিং। বিজয়া রায়ের ছায়ায় তৈরি বিমলা চরিত্রে যথেষ্ট সাবলীল সায়নী ঘোষ। তিনি যখনই পর্দায় ছিলেন, চরিত্রের সঙ্গে ন্যায়বিচার করেছেন এবং পর্দায় তাঁকে নয়া লুকে দেখতেও ভাল লেগেছে। ভাল কাজ করেছেন বাকী চরিত্ররাও। 

'ক্যাপ্টেন অফ দ্য শিপ' অনীক দত্তের (Anik Dutta) কথা বলতে গেলে, সবার প্রথমে পরিচালকের সাহস নিয়ে কথা বলতেই হয়। এমনিতেই তাঁর প্রায় সব ছবি নিয়েই কাটাছেঁড়া হয়। তা সত্ত্বেও এবার তিনি এমন একজনের গল্প বলবেন বলে ঠিক করলেন, যার ব্যাপারে পান থেকে চুন খসলে বাঙালি ছেড়ে কথা বলবে না। বাঙালির মনে- প্রাণে -চেতনায় র‍য়েছেন সত্যজিৎ রায়। তবে কিংবদন্তী শিল্পীকে নিয়ে পরিচালকের যাপন, এই ছবি দেখে স্পষ্ট হল দর্শকদের। এক কথায় বলা যায়, সত্যজিৎ রায়কে তিনি যোগ্য শ্রদ্ধার্ঘ্য দিতে পেরেছেন 'অপরাজিত'-র মাধ্যমে। ছবির প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসানকেও সাধুবাদ এরকম একটা ছবিতে লগ্নি করার জন্য। 

আরও একটি উল্লেখযোগ্য জিনিস নজরে এলো। 'অপরাজিত'-তে ব্যবহৃত নামগুলি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বেশ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন পরিচালক। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়- অপরাজিতর ডাকনাম অপু, উল্টো দিকে 'পথের পদাবলী'-র ছোট ছেলেটির নাম মানিক। এদিকে আবার রায় বাড়ির ভৃত্যের নাম দেখানো হয়েছে প্রহ্লাদ (শঙ্কুর রেফারেন্স)। চিত্রগ্রাহক সুবীর মিত্রকে (সুব্রত মিত্রের ছায়ায় তৈরি চরিত্র) একটি দৃশ্যে অপরাজিত বলছেন, 'সাবাস মিঃ মিটার!' (ফেলুদার রেফারেন্স)। 

সিনেমা বানানোর ব্যাকরণ থেকে 'নিও-রিয়ালিজম' এই সব নিয়েই বেশ কিছু ধারণা হবে দর্শকদের এছবি দেখে। কীভাবে নানা বাধা -বিপত্তি পেরিয়ে 'পথের পাঁচালী' বানিয়েছিলেন বিশ্ববরেণ্য পরিচালক, সে বিষয়ও জানতে পারবেন সকলে। যে বাঙালিরা প্রথমে পাত্তা দেননি, হ্যাটা করেছিলেন, তারাই যখন পরে প্রশংসা করবে অপরাজিত রায়ের, গর্বে আপনারও বুক ফুলে উঠবে। কফি হাউজে অপরাজিতকে সকলের সম্মান জানানোর দৃশ্যে চোখের কোণে সামান্য জল চিকচিকও করতে পারে... বাকিটা না হয় পর্দায় গিয়ে দেখলেন। 

Advertisement

সব শেষে বলা যায়, বাঙালির ভাল ছবি দেখার খিদে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে 'অপরাজিত'। একাধিক শো যেমন বাড়ানো হচ্ছে, হলের বাইরেও 'হাউজফুল' বোর্ডের সংখ‍্যা ক্রমেই বাড়ছে। সেই সঙ্গে আর একটা বিষয় ভাল লাগার মতো। হল ভর্তি দর্শক রয়েছেন বিভিন্ন বয়সের। বাঙালি যেন তাদের প্রিয় 'মানিক দা'-কে আবার উদযাপন করছে এছবির মাধ‍্যমে।

 

Read more!
Advertisement
Advertisement