দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হয়ে গত ২০ মে মুক্তি পেয়েছে নন্দিতা রায় (Nandita Roy) ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (Shiboprosad Mukherjee) পরিচালিত ছবি 'বেলা শুরু'। পরিচালক- প্রযোজক জুটির 'বেলা শেষে' (Bela Seshe) মুক্তির প্রায় দীর্ঘ সাত বছর পর এলো 'বেলা শুরু' (Bela Shuru)। বলাই বাহুল্য এছবি ঘিরে দর্শকদের উৎসাহ, অপেক্ষা ছিল অন্য মাত্রায়। আর সেই প্রমাণ মিলছে ছবির বক্স অফিস কালেকশন (Box Office Collection) দেখে। দেশে দাপিয়ে রাজত্ব করার পাশাপাশি, এবার 'বেলা শুরু' মুক্তি পেতে চলেছে বিদেশের একাধিক প্রেক্ষাগৃহে।
'বেলা শুরু', এক চিরন্তন প্রেমের গল্প। প্রত্যেক বয়েসের প্রেমকে উদযাপন করার গল্প। কঠিনতম দিনেও নিজের ভালোবাসার মানুষকে আঁকড়ে বেঁচে থাকার গল্প। 'বেলা শেষে'-র বেশিরভাগ অভিনেতারাই রয়েছেন নতুন এই ছবিতেও। তবে তার মধ্যে দুই মুখ্য অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chattopadhyay) ও স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত (Swatilekha Sengupta) পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে। তবুও পর্দায় তাঁরা যেন একেবারে জীবন্ত। যারাই ছবিটা দেখেছেন, প্রায় সকলের মুখেই একই কথা। সৌমিত্র কন্যা পৌলমী বসু (Poulami Bose) ও স্বাতীলেখা কন্যা সোহিনী সেনগুপ্তর (Sohini Sengupta) কেমন লাগল 'বেলা শুরু'? আজতক বাংলার সঙ্গে এক্সক্লুসিভ কথোপকথনে জানালেন দুই অভিনেত্রী।
আরও পড়ুন: নির্মল-বুড়ির লুকেই শহরের রাস্তায় প্রসেনজিৎ -দিতিপ্রিয়া!
পৌলমী বললেন, "'বেলা শুরু' মুক্তির পর যেভাবে সাফল্য পাচ্ছে, সেটা সত্যিই মন ভাল করা একটা খবর। এই সাফল্য সম্পূর্ণ প্রাপ্য এই ছবির। আমার অপূর্ব লেগেছে ছবিটা এবং আমি জানি আরও সাফল্য আসবে। যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এবং দর্শকেরা যেভাবে গ্রহণ করেছেন ছবিটা, এটা অভাবনীয় একটা বিষয়। যদিও আমি খুব যে আশ্চর্য হয়েছি তা ঠিক না, কারণ প্রথমে দেখেই বুঝেছিলাম ছবিটা কোন জায়গায় পৌঁছবে। বাপিকে খুবই মিস করছিলাম, কারণ স্ক্রিনে এত জ্যান্ত লাগছে ...ওঁরা যে নেই, সেটা আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল।"
আরও পড়ুন: শ্যুট হয়ে গেল 'দাদাগিরি'-র গ্র্যান্ড ফিনালের! কারা থাকছেন অতিথি আসনে?
অভিনেত্রী আরও যোগ করলেন, "এই ছবিতে শুধু বাপি আর স্বাতী কাকিমার দুর্দান্ত অভিনয়ের কথা আমি বলব না। অবশ্যই বলব, এই ছবির কনটেন্টই অসাধারণ। অ্যালজাইমার নিয়ে যে কাজটা হয়েছে, কটা ছবি আজকাল এরকম শক্তিশালী একটা বিষয় নিয়ে কথা বলে? এত সুন্দরভাবে গল্পটা সাজানো হয়েছে এই ছবিতে, এতে মানুষের মনে সচেতনতা বাড়বেই। আরও একটা বিষয় বলতে চাই, সকলে ভাল অভিনয় করেছেন। কাকে ছেড়ে কাকে দেখবো? আমার মনে হয় প্রত্যেকজন কলাকুশলী, নিজেদের ভিতর থেকে উজার করে দিয়েছেন 'বেলা শুরু'-তে। তবে আমার মনে হয় না, বাপি ছাড়া এই চরিত্রটা আর কেউ করতে পারতেন। কী ভীষণ অভিব্যক্তি... প্রতিটা অভিব্যক্তি আলাদা করে দেখলে এত ভাল লাগছে। একটু কষ্ট হয়েছে যে, বাপি নেই...বাপির সঙ্গে বসে কাজটা দেখতে পারলাম না। তবুও সত্যি বলতে আমার মন ছুঁয়ে গেছে। এই কাজটা দরকার ছিল। আমি নন্দিতা দি এবং শিবপ্রসাদকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, ওঁরা এরকম একটা ছবি আমাদের কাছে রেখে দিল...।"
আরও পড়ুন: 'ব্যক্তিগত জীবনেও ওঁর ওপর ভরসা করি...!' দেবলীনার প্রশংসা করে ট্রোলড বিবৃতি
অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত শ্যুটিংয়ের ফাঁকেই 'বেলা শুরু' নিয়ে নিজের অনুভূতি শেয়ার করলেন। তাঁর কথায়, "আমি জানতাম 'বেলা শুরু' সুপারহিট হবে। নন্দিতা দি এবং শিবু একটা ক্লাসিক ছবি তৈরি করেছে। সত্যিই ছবিটা দারুণ। এখানে মা এত ভাল কাজ করেছে, আমি খুব গর্বিত। তবে আমি জানতাম মা ফাটিয়ে দেবে। যে কোনও পাঠই মা ফাটিয়ে দিত। আর সেরকমই দারুণ অভিনয় সৌমিত্র কাকুর। এরকম অভিনেতারা আর ফিরে আসবে না... মা, সৌমিত্র কাকু, শিবু, নন্দিতা দি এবং ওঁদের সকলের সাফল্যে আমি দারুণ আনন্দিত- উৎসাহিত। ওঁরা সকলেই আমার খুব কাছের আত্মীয়।"
আরও পড়ুন: এ যেন সত্যিই 'অপরাজিত'! পর্দায় জিতু, নাকি স্বয়ং সত্যজিৎ?
প্রথমবার 'বেলা শুরু'-র পর্দায় মাকে দেখে একটু মন খারাপ হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরে সোহিনী বললেন, "না, আমার মন খারাপ হয়নি। আমি মনে করি, যে কোনও মানুষকেই একদিন না একদিন যেতে হবে। কোনও ভাবেই আটকে রাখা সম্ভব না। এটা গত একবছর ধরে আমি নিজেকে বুঝিয়েছি। কিন্তু আমার মা বেঁচে আছেন এবং থাকবেন তাঁর কাজের মাধ্যমে, ছাত্র- ছাত্রীদের মধ্যে। শিবুও মায়ের একজন ছাত্র। সৌমিত্র কাকুর ক্ষেত্রেও কিন্তু একই ব্যাপার। যে কোনও কৃতি মানুষ দীর্ঘ সময় তাঁদের কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকেন। মা এবং সৌমিত্র কাকু দু'জনেই কিন্তু অভিনয় নিয়ে যথেষ্ট পড়াশোনা করেছেন এবং মেথড অ্যাক্টিং করতেন। এই ছবিটা একটা মাস্টার ক্লাস হয়ে থেকে যাবে। "
আরও পড়ুন: জন্মদিনে ফ্যানেদের সঙ্গে দেখা করবেন আদৃত! শ্যুটিং ফ্লোরে আসার আহ্বান 'সিড'-র
প্রসঙ্গত, মুক্তির পর 'বেলা শুরু'-র প্রথম দিনে লক্ষ্মীলাভ হয় প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, প্রথম তিন দিনের বক্স অফিস কালেকশন প্রায় ১.৪০ কোটি টাকা। অতিমারী পরবর্তী সময় ফের হলমুখী হচ্ছেন দর্শকেরা, ফের সিনেমা হলের বাইরে ঝুলছে 'হাউজফুল' বোর্ড। যা নিঃসন্দেহে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনেকটাই আশার আলো। দেশের মতো বিদেশের মাটিতেও এই ছবি সকলের মন ছুঁয়ে যাবে বলে, বিশ্বাসী নির্মাতারা।