সময়টা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না অভিনেতা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব রুদ্রনীল ঘোষের (Rudranil Ghosh)। সম্প্রতি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বড় ব্যবধানে হেরেছেন। তার পরই তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনলেন নীলাঞ্জনা পাণ্ডে (Nilanjana Pande) নামে এক তরুণী। সোশাল মিডিয়ায় সবিস্তারে পোস্ট করে তিনি রুদ্রনীলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন।
তার আগেই অবশ্য অনেকের কটাক্ষের শিকার হয়েছেন রুদ্র। তাঁর বার বার দল পরিবর্তন করা নিয়ে যেমন অনেকে নানা কথা বলেছেন। অন্য দিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) করা 'রগড়ে দেব' মন্তব্যকে সমর্থন করায় তাঁকে নিয়েও সোশাল মিডিয়ায় 'রগড়ানি' শুরু হয়েছেন। তালিকায় অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় থেকে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় রয়েছেন। এর মধ্যে নতুন বিতর্কের জন্ম দিল নীলাঞ্জনার এই সোশাল পোস্ট। একটি নয়, দুটি পোস্ট করে তিনি তাঁৎ অভিযোগে অনড় থেকেছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় করা প্রথম পোস্টে নীলাঞ্জনা লেখেন, 'আমি যদি সত্যি কথা বলি, তাহলে বলব, আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি রুদ্রনীল ঘোষ-এর হারে। কয়েক বছর আগে, রুদ্রনীলের কুপ্রস্তাব না মানায় তার প্রোডাকশন হাউস থেকে আমাকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। আমার প্রাপ্য টাকাও দেওয়া হয়নি। সেদিন ইন্ডাস্ট্রিতে নিউকামার ছিলাম। আজ প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন সেদিন বিচার চাইনি? আসলে তখন ভয় পাইনি, কিন্তু বিচারের জন্য একজন নিউকামারকে কিভাবে এগোতে হবে জানতাম না। ঘৃণাবশতঃ রুদ্র-র নোংরা মেসেজ মোবাইল থেকে ডিলিট করে দিয়েছিলাম। ফলে প্রমাণ ছিল না। আজও বিশ্বাস করি, ভগবানের মারে আওয়াজ হয় না। তাঁর বিচার খুব সুক্ষ্ম বিচার। সেদিন হয়তো রুদ্রনীল প্রভাব খাটিয়ে আদালতে আমাকে পরাজিত করত। কিন্তু আজ জনগণ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। আজ রুদ্রনীল ঘোষ পরাজিত। রুদ্রনীলের পতনের সবে শুরু হয়েছে। রুদ্রনীল যদি এই পোস্ট দেখে বা তাকে যদি আমার পরিচিত কেউ এই পোস্ট সম্পর্কে বলে, তাহলে আমিও শুনতে চাই রুদ্রনীল কিভাবে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সাফাই দেবে। এই পোস্টে আজ আমি কাউকে ট্যাগ করব না। শুধু জনগণ ও ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ জানাব। তাঁরা ন্যায়বিচার করেছেন। রুদ্রনীল ঘোষ, তুমি হেরেছ বলে তোমার শহর হাওড়া গর্বিত, আনন্দিত। তোমার শহর হাওড়াও তোমাকে তার সন্তান বলতে ঘৃণা বোধ করে। আরও একটি কথা, একটি ছেলে কোনো মেয়েকে ধর্ষণ করে, কুপ্রস্তাব দিয়ে পুরুষ হয় না। তাকে নপুংসক বলা হয়। প্রকৃত পুরুষ সে, যে নারীত্বকে সম্মান প্রদর্শন করে। রুদ্রনীল, এই পোস্টের কথা জানার পর তুমি সাইবার ক্রাইম সেলে যাও, আমার বিরুদ্ধে মামলা করো, আমি সেসবের পরোয়া করি না। কিন্তু মনে রেখো, এই তোমার পতনের শুরু।'
আমি যদি সত্যি কথা বলি, তাহলে বলব, আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি রুদ্রনীল ঘোষ-এর হারে। কয়েক বছর আগে, রুদ্রনীলের...
Posted by Nilanjana Pande on Tuesday, May 4, 2021তবে পোস্টের পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধির কথা জানিয়েছেন রুদ্রনীল। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, এখন তাঁকে নিয়ে সমস্ত অভিযোগ-পোস্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই করা হচ্ছে। তিনি বহু বছর ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন, এ ধরনের কোনও অভিযোগ এর আঘে কেউ তোলেনি। হঠাৎ করে ভোটের পর কেন উঠছে? প্রশ্ন রুদ্রনীলের। আইনি পদক্ষেপ করা নিয়ে রুদ্রনীল জানান, বহু মানুষ অনেক ধরনের কথা বলবেন, তাতে আইনি জটিলতায় যাওয়ার প্রশ্ন নেই। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের এ ধরনের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
যদিও রুদ্র-র বয়ান প্রকাশ্যে আসার পর এ নিয়ে আবার একটি পোস্ট করেন নীলাঞ্জনা। কোনও রকম রাখঢাক না করে তিনি তাঁর কাজ করার সময়ের স্মৃতি তুলে ধরে লেখেন, 'রুদ্রনীল এখন আমার কথায় রাজনৈতিক গন্ধ পাচ্ছে, তা এবার বলে দিক, কোন রাজনৈতিক দল আমাকে দিয়ে এই কাজ করাচ্ছে? গন্ধ যখন পাচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই নাম জানে। 2012 সালে প্রযোজনা সংস্থাটি রুদ্রনীল ঘোষ-এর একার ছিল না, এই প্রযোজনার সমান অংশীদার ছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। রুদ্রনীল-পরমব্রতর প্রযোজনা সংস্থায় সেই সময় জিনা তরফদার নামে কেউ কাজ করতেন না। প্রকৃতপক্ষে 'ওয়ার্কশপ' নামে ওই সংস্থায় আমি ছিলাম একমাত্র মহিলাকর্মী। এই কারণে পরমব্রত নিজে যেদিন অফিসে আসতেন না, সেদিন তিনি আমাকেও আসতে বারণ করতেন। হয়তো আমার নিরাপত্তা নিয়ে তিনিও চিন্তিত ছিলেন। পরমব্রতর কাছেই আমার চিত্রনাট্য লেখা ও পরিচালনা শেখার হাতেখড়ি। তিনি আমার 'মেন্টর' ছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন না, রুদ্রনীল তাঁকে জড়িয়ে আমাকে রীতিমত নোংরা কথা বলেছিল। 'ওয়ার্কশপ'-এ সেই সময় কাজ করতেন অরুণাভ খাসনবীশ। 'ওয়ার্কশপ' ছেড়ে আসার পর অনেকের মুখে জানতে পেরেছিলাম আর্থিক তছরুপের অভিযোগে অরুণাভকে সংস্থা থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। রুদ্রনীল এরপর হয়তো বলবে পরমব্রতকে চেনে না, অরুণাভ খাসনবীশকে চেনে না। প্রকৃতপক্ষে, রুদ্রনীল কি নিজেকে চেনে? আগে ও নিজেকে সেই প্রশ্ন করুক। সবুজ, গেরুয়া, সংযুক্ত মোর্চা সমস্ত শিবিরেই মহিলা কর্মী রয়েছেন। এটি কোনো রাজনৈতিক পোস্ট নয়। মহিলাদের জন্য একজন মহিলা হয়ে আমি এই পোস্ট করছি। তাতে কোনো মহিলার রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে আমার কিছু যায়-আসে না। রুদ্রনীলেরও রাজনৈতিক মতাদর্শ তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু রুদ্রনীলের মনে হয় নিজের মেমারিতে একটু জোর দেওয়া উচিত। অথবা এমনও হতে পারে রুদ্রনীল হয়তো ধীরে ধীরে স্মৃতিভ্রমের মতো অসুখের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।'
এ নিয়ে আজতক বাংলার তরফ থেকে রুদ্রনীলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।