বিশ্বব্যাপী সিনেমাপ্রেমীদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গত ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ২৬ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (Kolkata International Film Festival / KIFF)। এই অন্ধকারময় ২০২০ সালে আমরা যেমন হারিয়েছি একের পর এক চলচ্চিত্র জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্রকে, তেমনই ওয়ার্ল্ড সিনেমার অনেক কিংবদন্তিদের জন্ম শতবর্ষ এই সালেই। KIFF ২০২১-এ তাই চলচ্চিত্র জগতের ৫ মহীরুহকে শতবার্ষিক শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Bhanu Bandopadhyay)। প্রায় ৩০০- র বেশি ছবিতে কৌতুক চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে এখনও কালজয়ী সাম্যময় ওরফে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ।
'মাসিমা মালপো খামু' এই সংলাপ এখনও বাঙালিদের মনে গেঁথে আছে। সেই কিংবদন্তি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে বিশেষ এক ডকুমেণ্টরি 'ভুবনময় ভানু' (Bhubonmoy Bhanu) বানিয়েছেন বাবলি চক্রবর্তী। যেখানে তাঁর স্মৃতিচারণ করেছেন বাংলা ইন্ডাস্ট্রির শিল্পীরা। শুভাশিস মুখোপাধ্যায়,সৈকত মিত্র,প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, লিলি চক্রবর্তী, শাশ্বত চট্টপাধ্যায়ের মতো গুণী শিল্পীরা জানালেন তাঁরা কীভাবে অভিনয় শিখেছেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থকেন বাবলি। বাংলা চলচ্চিত্রের এক 'ইন্সটিটিউট' ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর জন্ম শতবর্ষে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতেই তাঁর এই প্রয়াস।
লিলি চক্রবর্তীর কথায়, "ভানু দা দর্শকদের হাসাবো বলে হাসাতেন না। তিনি অভিনয় করতেন আর দর্শকরা তাতেই হাসতো। ওঁর জায়গা কেউ নিতে পারবে না।" শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, "একজন সম্পূর্ণ অভিনেতা না হলে কৌতুক চরিত্রে অভিনয় করা যায় না। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড়া বাংলা সিনেমার ইতিহাস, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ নয়।"
কৌতুক অভিনেতা শুভাশিস মুখোপাধ্যায় জানালেন," একজন অভিনেতা, যার নামে বাংলা ছবি হয়েছে। ওঁর সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার পর আমার যা আনন্দ হয়েছিল বলে বঝাতে পারবো না। ভানু দা জেখানেই থাকুক ভাল থাকুক।" অভিনেত্রী-পরিচালক অপর্ণা সেন মনে করেন, "ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় নির্মল হাস্যরস বাংলা ছবিকে দিয়ে গিয়েছেন। ভানু দা-র ছবি বারবার দেখে সেই কমিক টাইমটা শেখা উচিত।"
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে গৌতম বন্দ্যুোপাধ্যায় বাবার স্মৃতিচারণ করে বললেন, "সিনেমা, থিয়েটার বা অভিনয়ের প্রতি একটা আকর্ষণ, সেটা বাবার ছোটবেলা থেকেই। ঢাকায় থাকাকালীন পাড়ার যত থিয়েটারের রিহার্সাল হত তাতে বাবা সব সময়ে যেতেন।" তাঁর আরেক ছেলে পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় শেয়ার করেছেন," ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে যখন সিনেমায় নেওয়া হত, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে হাসির সংলাপ থাকতো তা না। পরিচালকরা বলতেন, ভানু একটা কিছু করে দিস। এমনকি 'মাসিমা মালপো খামু' সংলাপও কেউ লিখে দেন নি। তিনি সেই মুহূর্তে সেটা করেছেন।"
তাঁর সঙ্গে ক্যামেরার পিছনে কাজ করেছেন এরকম শিল্পীরাও রয়েছেন এই তথ্যচিত্রে। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় বেঁচে থাকবেন তাঁর ছবির মধ্যে এবং সকলের মননে।