আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বারবার। নারীদের কথায় একদিন নয়, সবদিনই তাঁদের। সমাজে নারীদের সম্মান নাকি বেড়েছে। কিন্তু যাঁরা শারীরিক দিক দিয়ে নারী না হয়ে মনের দিক দিয়ে নারীত্বকে বেছে নিয়েছেন, তাঁরা কি আজও যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন? আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তাঁদের সমাজে অস্তিত্ব কোথায়? এই সবকিছুর খোলামেলা উত্তর দিলেন সমাজেরই দুই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ( Sujoy Prasad Chatterjee) ও স্যান্ডি সাহা (Sandy Saha)।
আরও পড়ুন: কার ভয়ে ভেবেচিন্তে ছবি পোস্ট করেন স্বস্তিকা, ফাঁস হয়ে গেল সিক্রেট
সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্য়ায়
থিয়েটার শিল্পী ও অভিনেতা সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্য়ায়কে চেনেন না এমন মানুষ খুব কমই রয়েছেন। বেলাশেষ ও তার সিক্যুয়েল বেলাশুরু সিনেমায় সুজয় প্রসাদের অভিনয় দারুণভাবে প্রশংসিত। সম্প্রতি সুজয় প্রসাদের একটি ছবিকে ঘিরে অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রের একটি মন্তব্যকে নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সেই প্রসঙ্গ টেনেই সুজয় প্রসাদ বলেন, "যে সমাজে পুরুষের স্তনবৃন্ত নিয়ে খবর হতে পারে, সেই সমাজে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের কতটা গুরুত্ব রয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। এর অর্থ আমার স্তনবৃন্ত নিয়ে লেখাটা খুব সহজ। আমরা আশা করি কোনও এক নারী দিবসে শরীর সর্বস্বতা থেকে বেরোতে পারব। এই অবজেকটিফিকেশনটা বন্ধ হওয়া দরকার। তাহলেই আমরা আন্তর্জাতিক হব। নয়তো সেমিনার, গয়নার দোকানে ডিসকাউন্ট সহ আলোচনা সভায় নারীদের মিথ্যা জয়জয়কারই শোনা যাবে।" নারী দিবস কি শুধুই শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে যাঁরা নারী তাঁদের জন্যই? এর জবাবে সুজয় প্রসাদ বলেন, "এটা ঠিক তা নয়, হয়ত তাঁদের মনে কোথাও নারীত্ব আছে, যেমন আমারও আছে, আমার মধ্যে তো নারী ও পুরুষ দুই সত্ত্বাই রয়েছে। একটা মানুষের মধ্যে যদি এই দুই সত্ত্বাই থাকে তাহলে সে তো তাঁর মতো করে উদযাপন করবে। তার জন্য তো আলাদা করে দিন চিহ্নিত করে উদযাপন করার দরকার নেই। আমি তো অ্যালফ্যামেল নই, আমার মধ্যে তো রয়েছে দুই সত্ত্বাই, তাই আমার আলাদা করে এই দিনটি উদযাপন করার প্রয়োজন নেই।" পুরুষের অঙ্গে নারীর পোশাক যা নিয়ে কম বিতর্ক হয় না, পোশাক কি কারোর অস্তিত্ব তৈরি করতে পারে? সাবলীলভাবেই এর উত্তরও পাওয়া গেল অভিনেতা সুজয় প্রসাদের থেকে। তিনি বললেন, "সেই পুরনো কথা চর্বিত চর্বন। আজকের পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে একটা পোশাক কি কারোর অস্তিত্বের নির্ণায়ক হতে পারে। আমি কি পরব না পরব সেটা তো আমার অস্বিস্তের নির্ণায়ক নয়। আমি কতটা নান্দনিক, কতটা সুরুচিপূর্ণ সেটা নির্ণয় করবে আমার পোশাক। পোশাক ব্যক্তিত্বের প্রসারতা তো, তাই যে পোশাক আমার ব্যক্তিত্বকে প্রসারিত না করে সেই পোশাক আমি পরব না। আমি কোন পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করব সেটা আমি নির্ণয় করব, সমাজ নয়।"
আরও পড়ুন: পোষ্য কুকুরকে বিয়ে করলেন দেবলীনা? ইনস্টা পোস্টে শোরগোল
স্যান্ডি সাহা
কাদা কাদা ভাইরাল ভিডিওর মাধ্যমে যিনি সোশ্যল মিডিয়ায় রাতারাতি ভাইরাল হন, সেই স্যান্ডি সাহাকেও একসময় লিঙ্গ বৈষম্যের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। স্যান্ডি এখন জনপ্রিয় সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার। যদিও স্যান্ডিকে নারীদের পোশাকেই দেখা যায় এবং তিনি এই পোশাকেই কমফোর্ট ফিল করেন। তাঁর কাছে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের গুরুত্ব কী তা নিজেই জানালেন। স্যান্ডি বলেন, "আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সমাজের মানসিকতা অনেকটাই বদলেছে। সেটা পোশাক থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সব ক্ষেত্রেই এই বদল লক্ষ্য করা গিয়েছে। মেয়েদের নিয়ে গোঁড়ামি এখন আর সেভাবে দেখা যায় না। আমি বলব না পুরোপুরি বদলেছে কিন্তু পরিবর্তন হচ্ছে ধীরে ধীরে।" নারী দিবস কি শুধুই শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে যাঁরা নারী তাঁদের জন্যই? স্যান্ডি বলেন, "যাঁরা পূর্ণরূপে নারী তাঁরা তো উদযাপন করছেনই, অন্যদিকে যাঁরা এলজিবিটি কমিউনিটি, ট্রান্স জেন্ডার, রূপান্তরকামী বা অনেকের হয়ত লিঙ্গ পরিবর্তন করার মতো অর্থ নেই, তাঁদেরকেও নারী দিবসের শুভেচ্ছা। একটা মানুষের সত্ত্বা যেটা ভাবে সেভাবেই সে আচরণ করে, তাই সেই সত্ত্বাকেও সম্মান জানানো উচিত। আর এখন তো অনেক নিয়ম এসে গিয়েছে। সমাজের মানসিকতাও বদলাচ্ছে। তাই মানসিকভাবে যাঁরা নারী তাঁদেরও নারী দিবসে সেই সম্মান পাওয়া উচিত বলে মনে হয় আমার।" পুরুষের অঙ্গে নারীর পোশাক যা নিয়ে কম বিতর্ক হয় না, পোশাক কি কারোর অস্তিত্ব তৈরি করতে পারে? স্যান্ডি এ প্রসঙ্গে বলেন, "আমি মনে করি পোশাক কারোর লিঙ্গ নির্ধারণ করতে পারে না। এটা মেয়েদের পোশাক এটা ছেলেদের পোশাক। নিয়ম আমরাই তৈরি করেছি ঠিকই। রণবীর সিং, অমিতাভ বচ্চন, সৌরভ দাস স্কার্ট পরে ফটোশুট করেছেন এবং সাবলীলভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। কথা হচ্ছে যাঁর যেটা ভালো লাগবে সে সেটাই পরবে। মেয়েরা তো বহু আগে থেকেই পুরুষদের পোশাক পরে এসেছে, হয়ত তাঁদের দিকে সেভাবে আঙুল তোলা হয়নি, কিন্তু যখনই কোনও পুরুষ শাড়ি বা স্কার্ট অথবা নারীর পোশাক পরছে তখনই তাঁদের নিয়ে খিল্লি বা আঙুল তুলছে, কারণ পুরুষ মানেই পুরুষ সিংহ হতে হবে। যদিও এটার কোনও মানে নেই। যাঁর যেটা পরতে ভালো লাগে সে সেটাই পরবে। পোশাক কোনওভাবে জেন্ডার নির্ণয় করতে পারে না। একজন পুরুষ যিনি মানসিকভাবে নারী তিনিও শাড়ি পরতে পারেন আবার যিনি পুরুষ তিনিও যদি শাড়ি পরেন তাতে তাঁর ভাবমূর্তিতে কোনও দাগ লাগবে না বলে মনে হয় আমার।"