এই বছরের দীপাবলি পরিবার ও নিকট বন্ধুদের সঙ্গে বাড়িতেই কাটছে অভিনেত্রী সোহিনী সরকারের (Sohini Sarkar)। ব্যস্ততার মধ্যেই দীপাবলি উপলক্ষে নাড়ু তৈরি করতে করতে সৌমিতা চৌধুরীর সঙ্গে টেলিফোনে আড্ডা দিলেন অভিনেত্রী।
প্রশ্ন: এই বছরের দীপাবলিতে স্পেশাল কী প্ল্যান?
সোহিনী : এইবার স্পেশাল বলতে কোনও কিছু নেই। এই বছরটাই আমাদের সকলের জীবনের স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমাদের জেনারেশন এত বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এর আগে কখনও দেখেছে বলে মনে হয় না। একই সঙ্গে আমফান, অতিমারী ও আরও অন্যান্য অনেক কিছু। তবে প্রতি বছরই, দীপাবলি পরিবারের সঙ্গেই কাটে। এই বছরও বাড়ির লোক ও কাছের বন্ধু- বান্ধবদের সঙ্গেই কাটছে।
প্রশ্ন : এই বছরটা অনেকটা অন্ধকারময়। কিন্তু অন্যান্য বার, এর থেকে আলাদা কী করেন?
সোহিনী: দেখো, অন্যান্য বার যে বিশেষ আড়ম্বরপূর্ণ দীপাবলি হয়, তা নয়। ভালো খাওয়া-দাওয়া, তার সঙ্গে আলো দিয়ে সাজাই এভাবেই কাটে।
প্রশ্ন: দীপাবলিতে ছোটবেলার কোনও বিশেষ স্মৃতি মনে পড়ে?
সোহিনী: ছোটোবেলায় আমার খড়দহ-র বাড়িতে পুজো হতো। এরপর জয়েন্ট ফ্যামিলি যখন ছোট হতে শুরু করে তখন পিসির বাড়িতে যেতাম পুজো উপলক্ষে। নিজে একবার কালীপুজোর উপোস করার চেষ্টা করেছিলাম। (হেসে) খানিকক্ষণ পরেই এত খিদে পেয়েছিল যে, খেয়ে নিয়েছি চুপিসারে। তারপরে আর কালীপুজোর উপোস করার কথা কোনও দিন মাথায় আসেনি। ইনফ্যাক্ট তারপর থেকে আর কোনদিনও কোনও উপোসই করার চেষ্টা করিনি। শ্যুটিং বা ডায়েটের জন্যে অন্য সময়ে সারাদিন না খেয়ে থাকলেও অসুবিধা হয় না। কিন্তু উপোসের দিন যেই মনে হয় আজকে না খেয়ে থাকতে হবে, তখনই বেশি করে খিদে পেয়ে যায়।
প্রশ্ন: বাজি পোড়াতে ভালো লাগে?
সোহিনী : বাজি পোড়ানো বলতে টুকটাক ফুলঝুরি, চরকি, তুবড়ি এই পর্যন্ত আমার দৌড়। একবার কী একটা যেন বাজি ফাঠাতে গিয়ে, আমার হাতে সেটা ফেটে একটা বিশাল বড় ফোসকা পড়ে গেল। আর শব্দবাজি আমার কোনদিনই ভাল লাগেনা।
প্রশ্ন : যত দিন যাচ্ছে উৎসবে আনন্দের অনুভূতিগুলি কি কমে যাচ্ছে?
সোহিনী: বয়সের সঙ্গে একটা পরিবর্তন ঘটে ঠিকই। কিন্তু আমি আমার ছোটবেলার থেকে বরং একটু বড় হয়ে বেশি এনজয় করছি। যে কোনও উৎসব-অনুষ্ঠানে আমি বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে খুব আনন্দ করি। আমার রান্না করতে, ঘর সাজাতে, উৎসবের আনন্দে মাততে খুব ভাল লাগে। ছোটবেলার সঙ্গে একটা পার্থক্য হয়েছে, বড় হয়ে আমার বিষন্ন হওয়াটা কমে গেছে। তবে আমি আমার নিজের মতো করে সবকিছু সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে পারি এখন। যেটা ছোটবেলায় আমার হাতে কিছু ছিল না।
প্রশ্ন: এই যে রান্না-বান্না করতে ভালোবাসেন বললেন, এবারের দীপাবলিতে তাহলে নিজের হাতে রান্না করা বিশেষ মেনু কী?
সোহিনী : রান্না বলতে আমি নারকেলের নাড়ু চিনি দিয়ে খেতে খুব পছন্দ করি। এই বছর আমি সেটাই বানাচ্ছি। অন্যান্য বছর লক্ষ্মী পুজোর সময়ে বানানো হয়। এই বছর দীপাবলিতে এখন বানানো হচ্ছে।
প্রশ্ন : OTT-কে সম্প্রতি তথ্যমন্ত্রকের আওতায় আনা হয়েছে। এর ফলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিতে যদি সেন্সরশিপ হয়,সেটা ভালো না মন্দ মনে হয়?
সোহিনী: ভারতবর্ষের যে অবস্থা, তাতে কাজের লিমিটেশন তো আসবেই। যারা কাঁচি চালাবেন তাঁরা তো খুব একটা পড়াশোনা জানা লোকজন নয়, ফলে তাঁরা কী করবেন সেটা খুবই ভয়ের বিষয়।
প্রশ্ন: এর ফলে শিল্পীদের ক্ষেত্রে কতটা সীমাবদ্ধতা আসবে?
সোহিনী: (কিছুটা বিরক্ত হয়ে) সে তো আসবেই! দু'দিন পর সাংবাদিকদেরও বলা হবে এই প্রশ্ন করা যাবে না, ওই প্রশ্ন করা যাবে না। তার কিছুদিন পর ফেসবুক বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে বলা হবে ক্যারিকেচার বা কার্টুন পোষ্ট করা যাবে না। এমনকি গরু রচনাও উঠিয়ে দিতে পারে সিলেবাস থেকে। অনেক কিছুই আসবে!
প্রশ্ন: টেলিভিশন, OTT, বড় পর্দার মধ্যে কোন প্ল্যাটফর্মে কাজ করতে আপনি সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন?
সোহিনী: অবশ্যই থিয়েটার এবং ফিল্ম। OTT-তে এই মুহুর্তে একটু একঘেয়ে কাজ হচ্ছে। তবে ওটায় কাজ করতে ভাল লাগে, যেহেতু ওখানে সেন্সরশিপের কাঁচি নেই এখনও।
প্রশ্ন: 'সত্যবতী' নাকি 'বিবাহ ডাইরিজ' -র রয়োনা, কোন ধরনের চরিত্র আপনার বেশি পছন্দ?
সোহিনী : ওইভাবে এক কথায় বলা তো মুশকিল। তবে যে চরিত্রটা আমাকে চ্যালেঞ্জ দেবে, বা যেই চরিত্রটা নিয়ে আমি একটু ভাবতে বাধ্য হবো, স্ক্রিপ্ট ভালো হবে, সেই রকম কোনও চরিত্র আমার ভালো লাগে। কাজের ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে আমি সেরকম করে তকমা লাগাতে চাই না।
প্রশ্ন: রণজয়ের সঙ্গে দীপাবলি কীভাবে কাটছে?
সোহিনী: ওর বাড়িতে পুজো হয়। গত বছর ওর দিদা মারা যাওয়ায় পুজো হয়নি। সেখানে আছি। তাছাড়া এখানে খুব বড় করে ভাইফোঁটা হয়। আমার বাড়িতে ভাইফোঁটার কোনো চল নেই। তাই এখানেই খুব মজা করবো।