প্রায় দীর্ঘ ৪০ দিন ধরে হাসপাতালে কঠিন লড়াইয়ের পর জীবনযুদ্ধে হার মানেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chattopadhyay)। তাঁর মৃত্যর পর কেটে গেছে এক মাস। বাংলার চলচ্চিত্র থেকে সংস্কৃতিক জগৎ হারিয়েছে তাদের বটবৃক্ষকে। ঠিক তেমনই বন্ধুসম বাবাকে হারিয়ে নতুন করে হাল ধরার চেষ্ঠায় মেয়ে পৌলোমী বসু (Poulami Bose)। কেমন কাটলো এক মাসের এই শূণ্যতা ভরা জীবন। সেই স্মৃতিচারণায় সৌমিতা চৌধুরীর সঙ্গে ভাগ করে নিলেন সৌমিত্র তনয়া।
মাথার ওপর থেকে সব থেকে বড় ছায়া সরে গেছে। কতটা কষ্ট হচ্ছে নিজেকে সামলাতে?
পৌলমী: সামলাতে তো হবেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের আর কোনও উপায় নেই সেটা ছাড়া। লাইফ মাস্ট গো অন..তাই চেষ্টা করছি নিজেকে যতটা সম্ভব সামলানো যায়।
পরিবারের বাকিরা কেমন আছেন?
পৌলমী: সবাই ঠিকই আছেন। চেষ্টা করছেন নিজেদের মতো করে সামলে ওঠার।
'অন্ধযুগ' নাটক দিয়ে আবার কাজে ফিরছেন। প্রস্তুতি কী রকম চলছে?
পৌলমী: পুরো দমে প্রস্তুতি চলছে। ২৫ ডিসেম্বর আকাদেমির এই নাটকের জন্যে রিহার্সাল চলছে। ভাল সাড়া পাচ্ছি, সবাই দেখার জন্যে খুব আগ্রহী হয়ে আছেন। লকডাউনের আগে 'অন্ধযুগ'-র তিন দিন প্রিমিয়ার করেছিলাম। বাবার খুবই ভাল লেগেছিল নাটকটি। এমনকি উনি বলেছিলেন এখনও পর্যন্ত এটা আমার সেরা কাজ। নাটকের মধ্যে দিয়ে, কাজের মধ্যে দিয়েই ওঁনাকে মনে করবো, বাঁচিয়ে রাখবো...
সৌমিত্র বাবুর লেখা ও আঁকাগুলি আর্কাইভ করবেন বলেছিলেন আপনি। সেই কাজটা কতদূর?
পৌলমী: ছোট ছোট ধাপে সেই কাজটাও বেশ ভাল করে এগোচ্ছে। 'সৌমিত্র চ্যাটার্জী আর্কাইভাল ট্রাস্ট' গঠন করা হয়েছে। সেখান থেকেই কাজটা এগোচ্ছে। এটা তো অল্প সময়ের কাজ নয়, বেশ কয়েক বছরের কাজ। সুতরাং সেই মতোই আমরা এগোচ্ছি।
ওঁনাকে নিয়ে কখনও বায়োগ্ৰাফি করার ইচ্ছে আছে?
পৌলমী: উনি নিজের করে গিয়েছিলেন ' তৃতীয় অঙ্ক অতএব' নাটকে। সুতরাং আমি আর নতুন করে কী করবো?
যদি সেটা সিনেমার মাধ্যমে হয়? নির্দেশনা দিতে চাইবেন না?
পৌলমী: না! ইচ্ছে নেই খুব একটা। এছাড়া বাবার একটা বায়োপিক পরমব্রত বানিয়েছে। এছাড়া শুনছি নিয়োগি বুকস্ থেকে একটা বায়োগ্রাফি লেখা হচ্ছে। ওঁনাকে নিয়ে অনেক বই লেখা হচ্ছে। সেজন্য আমি আলাদা করে কিছু করতে চাই না। তিনি যেভাবে নিজেকে সকলের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন সেটা তিনি নিজেই করেই গিয়েছেন। সেখানে আমি, বাবা এবং দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায় একসঙ্গে অভিনয় করতাম।
এত স্মৃতির মধ্যে, বাবার কোন বিশেষ কথাটা খুব মনে পড়ে?
পৌলমী: বাবার খুব ভাল সেন্স অফ হিউমার ছিল। এছাড়া সবার প্রতি ওঁর খুব স্নেহ ছিল। আমার প্রতি, আমার ছেলে মেয়ের প্রতি, দাদার প্রতি...(আবেগপ্রবণ গলায়) আমাদের সবাইকে খুব ভালোবাসতেন। সব সময় আমাদের সঙ্গে থাকতেন। আমার ছেলে মেয়েদের স্নান করানো, স্কুলে পৌঁছে দেওয়া, দাদার সঙ্গে কবিতা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা করা, আমার নাচের প্র্যাকটিস দেখা... যখন আমি নাটক পরিচালনা করতাম বসে বসে দেখতেন। কিন্তু কখনও হস্তক্ষেপ করতেন না। ' কালমৃগয়া', 'ফেরা', ' ঘটক বিদায়' এই তিনটি নাটকে আমার পরিচালনায় উনি অভিনয় করেছিলেন। পরিচালক হিসেবে আমি যা বলেছি উনি তাই শুনেছেন। আমি এমন একজনকে হারালাম, যিনি হয়তো আমার সবচেয়ে কাছের....
বকা খেতেন কখনও?
পৌলমী: না একদমই না। আমার বাবা-মা যেভাবে আমাদের বড় করেছেন, আমরা খুব একটা বকা খাই নি। আমি আর দাদা দুজনেই অন্য রকম ছিলাম। বাবা একটু গম্ভীর মুখ করলেই বুঝে যেতাম কাজটা বোধ হয় ঠিক হয়নি। আমি, দাদা এমনকি আমার ছেলে মেয়েও কখনও বকুনি খায়নি বাবার কাছে।