ছিলেন কাকা। হয়ে গেলেন শ্বশুরমশাই! এমনই আজব কাণ্ড ঘটালেন জিয়ারুল শেখ নামের এক জওয়ান। অভিযোগ, বাংলাদেশি স্ত্রীকে 'ভারতীয়' বানাতে নিজের কাকাকেই স্ত্রীর বাবা সাজান জিয়ারুল। তবে বাধ সাধলেন প্রথম পক্ষের স্ত্রী। তিনিই বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনেন।তদন্তে পুরোটাই ধরা পড়ে যায়। স্ত্রীর ভারতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করতেই এমনটা করেছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বীরভূমের নলহাটিতে। অভিযোগ, বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা হাবিবা খাতুনকে বিয়ে করেছিলেন জিয়ারুল শেখ। এরপর হাবিবাকে ভারতের নাগরিকত্ব পাইয়ে দিতে জাল নথি তৈরির অভিযোগ উঠেছে।
জানা গিয়েছে, জিয়ারুল শেখের কাকা সামশের শেখকে হাবিবার বাবা সাজানো হয়। আর তাই দিয়েই ভোটার কার্ড, আধার ও প্যান কার্ড বানানো হয়।
জওয়ানের প্রথম পক্ষের স্ত্রী রোশনারা খাতুন বিষয়টি মোটেও ভালভাবে নেননি। প্রশাসনের কাছে অভিযোগে তিনি জানান, ২০১৮ সালে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। এরপর পুনেতে পোস্টিং ছিল জিয়ারুলের। সেই সময়ই তাঁর অজান্তেই বাংলাদেশি হাবিবাকে তিনি বিয়ে করে নেন।
রোশনারার অভিযোগ, বাংলাদেশি স্ত্রীর পরিচয়পত্র জোগাড় করতে জিয়ারুল নিজের কাকাকেই হাবিবার বাবা সাজিয়ে সমস্ত নথি বানিয়ে ফেলেন।
বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রে হাবিবার নাম রয়েছে শোভা খাতুন। বাবার নাম ইকবাল শেখ। কিন্তু ভারতীয় পরিচয়পত্রে হাবিবার নাম দেওয়া হয়েছে হাবিবা খাতুন। বাবার নাম সামশের শেখ। এই সামশের শেখই জিয়ারুলের কাকা।
হাবিবা ওরফে শোভা নিজেও বাংলাদেশি হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, 'পুনেতে আমার জিয়ারুলের সঙ্গে পরিচয় হয়। সামশের শেখ জিয়ারুলের মেজো কাকা। ভোটার কার্ডটা সাধারণ নিয়ম মেনেই বানানো হয়েছে।'
অন্য দিকে, এই বিষয়ে জিয়ারুলের দাদা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, 'আমি কিছুই জানি না। যে করেছে, সেই বলতে পারবে।'
ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। রামপুরহাট মহকুমা শাসক সৌরভ পান্ডে জানিয়েছেন, 'বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ব্লক প্রশাসন ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'
এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই আইনি পদক্ষেপ শুরু হয়েছে অভিযুক্ত জওয়ানের কাকা সামশের শেখের বিরুদ্ধেও।
কীভাবে ওই মহিলা সীমান্ত পেরিয়ে এসেছিলেন? এত সহজে ভারতের পরিচয়পত্রই বা পেলেন কীভাবে? উঠছে প্রশ্ন। এর পাশাপাশি একজন জওয়ান কীভাবে এমন জালিয়াতিতে প্রশ্রয় দিলেন, তাই নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বীরভূমের নলহাটি এবং আশপাশের এলাকায়। স্থানীয়দের দাবি, এমন ঘটনা কঠোর হাতে দমন করা দরকার। সংশ্লিষ্ট দফতরের গাফিলতি নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
রিপোর্টারঃ শান্তনু হাজরা